প্রতিবন্ধী রিকশাচালককে পিটিয়ে হত্যা: স্ত্রীসহ পুলিশ সদস্য গ্রেফতার

রংপুর প্রতিনিধি

স্ত্রীসহ পুলিশ সদস্য গ্রেফতার
স্ত্রীসহ পুলিশ সদস্য গ্রেফতার। ছবি : সংগৃহীত

রংপুর মহানগরীতে নাজমুল ইসলাম (৩০) নামে এক প্রতিবন্ধী রিকশাচালককে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে পুলিশ কনস্টেবল হাসান আলী ও তার স্ত্রী সাথী বেগমের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় স্থানীয়দের বিক্ষোভের মুখে অভিযুক্তদের গ্রেফতার করেছে পুলিশ। হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে বিক্ষুব্ধ জনতা সড়ক অবরোধ করলে পুলিশের লাঠিচার্জে চারজন আহত হন। পরে অতিরিক্ত পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

আজ বুধবার বিকালে নগরীর ২৮নং ওয়ার্ডের আশরতপুর ঈদগাপাড়ায় এ ঘটনা ঘটে।

স্থানীয়রা জানান, লালমনিরহাটের তিস্তা মুস্তফী গ্রামের শারীরিক প্রতিবন্ধী নাজমুল ইসলাম নগরীর আশরতপুর ঈদগাহপাড়ায় বাড়ি ভাড়া নিয়ে বসবাস করছিলেন। তার পায়ে সমস্যা থাকায় ব্যাটারিচালিত রিকশা ভাড়া নিয়ে চালাতেন।

আর ওই রিকশাটি ছিল রংপুর পুলিশ ট্রেনিং সেন্টারে কর্মরত কনস্টেবল হাসান আলীর। তার বাড়ি গাইবান্ধায়। তিনি আশরতপুর কোটপাড়ায় বাড়ি ভাড়া নিয়ে পরিবারসহ বসবাস করেন।

গত মঙ্গলবার রাতে ওই রিকশাটি চুরি হয়। পরে নাজমুল ইসলাম অনেক চেষ্টা করে রিকশাটি উদ্ধার করে মালিক হাসান আলীকে ফেরত দেন। কিন্তু পুলিশ কনস্টেবল হাসান আলী তাকে চোর অপবাদ দিয়ে বাসায় ডেকে এনে নির্যাতন চালায়।

একপর্যায়ে অবস্থা আশঙ্কাজনক হলে নাজমুলকে কোটপাড়ার বাড়িতেই ঘরের ভেতর গলায় দড়ি দিয়ে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে রাখে। পরে বিষয়টি আত্মহত্যা বলে প্রচার চালায়।

পুলিশ নিহতের লাশ উদ্ধারের সময় ঘটনাস্থল থেকে নির্যাতনের উপকরণ হিসেবে হাতুড়ি ও প্লাস উদ্ধার করেছে। নিহতের শরীরে আঘাতের চিহ্ন ছিল। নখগুলো থেঁতলানো অবস্থায় দেখা গেছে।

এদিকে বুধবার দুপুরে ওই বাড়িতে নাজমুলের ঝুলন্ত লাশ দেখতে পেয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন স্থানীয়রা। খবর পেয়ে মেট্রোপলিটন তাজহাট থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছলে তাদেরও অবরুদ্ধ করে রাখেন বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী।

স্থানীয়দের অভিযোগ, নাজমুলকে পিটিয়ে হত্যার পর লাশ ঝুলিয়ে রেখে আত্মহত্যার প্রচারণা চালিয়েছে পুলিশ সদস্য হাসান।

এ পরিস্থিতিতে একপর্যায়ে বিক্ষুব্ধ গ্রামবাসী রংপুর-কুড়িগ্রাম সড়কের পার্কের মোড়ে অবস্থান নিয়ে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। এতে ওই সড়কে প্রায় বিকাল সাড়ে ৪টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

এ ঘটনায় বেশ কয়েকটি অটোরিকশাসহ বিভিন্ন যানবাহন ভাংচুর করে বিক্ষুব্ধ জনতা। এ নিয়ে পুলিশের সঙ্গে ধাওয়া পাল্টাধাওয়া ও কয়েক দফা সংঘর্ষ হয়। পুলিশ লাঠিচার্জ করে বিক্ষুব্ধ জনতাকে ছত্রভঙ্গ করে দেয়।

প্রায় দু’ঘণ্টা পর সন্ধা ৬টার দিকে বিপুলসংখ্যক পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়। পরে নিহতের লাশ উদ্ধার করে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ময়নাতদন্তের জন্য নিয়ে যায়।

রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের সহকারী কমিশনার (কোতোয়ালি জোন) আলতাব হোসেন জানান, পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এ ঘটনায় পুলিশ সদস্য হাসান আলী ও তার স্ত্রী সাথী বেগমকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

শেয়ার করুন