ফিরে দেখা ২০২০: ম্যারাডোনাসহ যেসব ক্রীড়াতারকা হারাল বিশ্ব

ক্রীড়া ডেস্ক

দিয়াগো ম্যারাডোনা-কোবি ব্রায়ান্ট-নওশেরউজ্জামান-বাদল রায়
দিয়াগো ম্যারাডোনা-কোবি ব্রায়ান্ট-নওশেরউজ্জামান-বাদল রায়। ফাইল ছবি

দুয়ারে নতুন বছর। বিভিন্ন কারণে ২০২০ সাল মহাকালের ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। করোনা ভাইরাসের উৎপত্তি, মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়া, মৃত্যুর মিছিল, ভ্যাকসিনের প্রত্যাশা ইত্যাদি এ বছর ছিল আলোচিত বিষয়। বিশে বিষময় এমন একটি বছরে করোনা ভাইরাস ছাড়াও বেশ কিছু ঘটনা আলোচিত-সমালোচিত হয়েছে বছরের বিভিন্ন সময়। সেইসঙ্গে স্ব স্ব ক্ষেত্রে বহু খ্যাতিমান ব্যক্তিত্বের মৃত্যু ঘটেছে এই বছর। এই পর্বে থাকছে দেশ-বিদেশের চির বিদায় নেওয়া কিছু ক্রীড়াতারকার কথা। গ্রন্থনা ও সম্পাদনা করেছেন ফয়জুল আল আমীন

বিদেশ

দিয়েগো ম্যারাডোনা: এ তালিকায় সবথেকে বড় তারকা নিঃসন্দেহে ফুটবলের রাজপুত্রই। একটা প্রজন্মকে ফুটবল ভালোবাসতে শিখিয়েছেন ম্যারাডোনা। প্রায় একার কাঁধে আর্জেন্টিনাকে বিশ্বকাপ এনে দেওয়া কিংবা অবনমনে থাকা ইতালিয়ান ক্লাব নাপোলিকে ইউরোপ সেরা করা, বিশ্বাস্য কীর্তির ইয়ত্তা নেই তার। ২৫ নভেম্বর নিজ বাসভবনে কার্ডিয়াক অ্যারেস্টে মৃত্যু হয় তার।

পাওলো রোসি। ফাইল ছবি

পাওলো রোসি: ম্যারাডোনার মৃত্যুর এক সপ্তাহ যেতে না যেতেই মারা যান আর এক বিশ্বজয়ী ফুটবলার রোসি। ১৯৮২-র বিশ্বকাপে গোল্ডেন বুট, গোল্ডেন বল দুটোই জেতেন এই ইতালীয় পেশাদার ফুটবল খেলোয়াড়। সে বছরেই জেতেন ব্যালন ডি’অর পুরস্কার। ক্লাব ফুটবলেও তিনি রেখে গিয়েছেন অনন্য সব কীর্তি।

কোবে ব্রায়ান্ট: কোভিড-১৯ প্রাদুর্ভাবের আগে ২৬ জানুয়ারি হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান নামী বাস্কেটবল তারকা কোবে। বয়স হয়েছিল মাত্র ৪২। সঙ্গে ছিল তার ১৩ বছরের কন্যাসন্তান গিগি, মৃত্যু হয় তারও। তাঁর মৃত্যুতে শুধু বাস্কেটবল নয়, শোকস্তব্ধ হয় সমগ্র ক্রীড়াদুনিয়া।

চেতন চৌহান: ১৬ আগস্ট ৭৩ বছর বয়সে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান এই সাবেক ভারতীয় ক্রিকেটার। ৪০টি টেস্ট খেলে তার সংগ্রহ মোট ২০৮৪ রান। সুনীল গাভাস্কারের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে অত্যন্ত সফলভাবে ভারতীয় ইনিংস শুরু করেছেন তিনি।

ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা ধারাভাষ্যকার রবিন জ্যাকম্যান। ফাইল ছবি

ডিন জোন্স: সাবেক অজি অলরাউন্ডারের এ বছর আইপিএল চলাকালীন আকস্মিক মৃত্যু হয়। ২৪ সেপ্টেম্বর মুম্বাইয়ের হোটেলে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন সকলের আদরের ‘ডিনো’। প্রায় আট বছর ধরে অত্যন্ত সুনামের সঙ্গে ব্যাগি গ্রিন টুপি সামলেছিলেন তিনি।

রবিন জ্যাকম্যান: সাবেক ইংল্যান্ড টেস্ট ক্রিকেটার ও ধারাভাষ্যের কিংবদন্তী রবিন জ্যাকম্যান। কেপটাউনে নিজ বাসায় ২৫ ডিসেম্বর ৭৫ বছর বয়সে মারা গেছেন। ১৯৪৫ সালে ভারতের শিমলায় জন্ম নেওয়া জ্যাকম্যান ১৯৮১ থেকে ১৯৮২ সালের মাঝে ইংল্যান্ডের হয়ে খেলেছিলেন ৪টি টেস্ট। ওয়ানডেতে তুলনামূলক লম্বা হয়েছিল তার ইংল্যান্ড ক্যারিয়ার, ১৯৭৪ থেকে ১৯৮৩ সালের মাঝে খেলেছিলেন ১৫টি ম্যাচ।

দেশ

নওশেরুজ্জামান: করোনাক্রান্ত হয়ে বেশ কিছুদিন হাসপাতালে আইসিউতে থেকে ২১ সেপ্টেম্বর মারা যান স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের আরেক সদস্য নওশেরুজ্জামান। তার বয়স হয়েছিল ৭২ বছর। তিনি কেবল ফুটবলার হিসেবেই পরিচিত ছিলেন না, দীর্ঘদিন ক্রিকেট খেলেছেন জাতীয় পর্যায়েও।

বাদল রায়: আশির দশকে মাঠ কাঁপানো বাংলাদেশের সাবেক তারকা ফুটবলার বাদল রায়। লিভার ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ২২ নভেম্বর মৃত্যুবরণ করেন জাতীয় পুরস্কার প্রাপ্ত এ ফুটবলার। খেলা ছাড়ার পর ১৯৯৬ সাল থেকে ফুটবল ফেডারেশনের সঙ্গে যুক্ত হন। যুগ্ম সম্পাদক ছিলেন দুই মেয়াদে। পরবর্তী সময়ে ২০০৮-২০ সাল পর্যন্ত সহ-সভাপতি পদে দায়িত্ব পালন করেন। বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের (বিওএ) সহ-সভাপতি, জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ, বঙ্গবন্ধু ক্রীড়াসেবী কল্যাণ ফাউন্ডেশনেও গুরুত্বপূর্ণ পদে রয়েছেন বাদল রায়।

ফুটবলের ট্রিপল হ্যাটট্রিকম্যান ওয়াহিদুজ্জামান ময়না। ফাইল ছবি

ওয়াহিদুজ্জামান ময়না: ১২ জুন মারা গেছেন দেশের ফুটবলের একমাত্র ট্রিপল হ্যাটট্রিকম্যান ওয়াহিদুজ্জামান ময়না। হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে কিছুটা সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরে ইন্তেকাল করেছেন তিনি। ১৯৭৫ সালে আউটার স্টেডিয়ামে দ্বিতীয় বিভাগ লিগে আরামবাগ ক্রীড়া সংঘ ৯-০ গোলে হারিয়েছিল বাংলাদেশ স্পোর্টিং ক্লাবকে। ওই ম্যাচে ৯টি গোলই করেছিলেন তিনি।

লুৎফর রহমান: স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের সদস্য লুৎফর রহমান ২০১৮ সালে মস্তিষ্কে রক্ষণ হওয়ার পর অনেক দিন ভুগেছিলেন পক্ষাঘাতে। তার চিকিৎসার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৩০ লাখ টাকা সহায়তা দিয়েছিলেন। ২৯ জুন মারা যান তিনি।

রামচাঁদ গোয়ালা: কিংবদন্তি ক্রিকেটার রামচাঁদ গোয়ালা মারা যান ১৯ জুন। সাবেক এই বাঁ-হাতি স্পিনার এবং বাঁহাতি ব্যাটসম্যান তার পেশাদার ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন ময়মনসিংহের পন্ডিতপাড়া ক্লাবের হয়ে। পরে ঢাকার ক্রিকেটে ২০ বছর দাপটের সঙ্গে খেলেছেন । এর মধ্যে ১২ বছর খেলেছেন আবাহনী ক্রীড়া চক্রে।

রেফারি আব্দুল আজিজ। ফাইল ছবি

আবদুল আজীজ: এ বছরই ফুটবল হারিয়েছে দেশের অভিজ্ঞ, জনপ্রিয় ও আলোচিত রেফারি আবদুল আজীজকে। ফিফার সাবেক এ রেফারি প্রথমে হৃদরোগ ও পরে করোনায় আক্রান্ত হয়ে ৬৮ বছর বয়সে মারা যান ২৭ অক্টোবর। ১৯৭৪ সালে সহকারী রেফারি হিসেবে প্রথম ফুটবল ম্যাচ চালিয়েছিলেন আবদুল আজীজ। ২৮ বছর বয়সে তিনি ফিফা ব্যাজ পান। ১৯৮১ থেকে ১৯৯১ পর্যন্ত তিনি ফিফা রেফারি হিসেবে ২৮টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ পরিচালনা করেন। ঘরোয়া ফুটবলে তিনি পাঁচশ’র বেশি ম্যাচে রেফারি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

এএসএম ফারুক: ১৮ সেপ্টেম্বর ৭৫ বছর বয়সে মারা যান সাবেক ক্রিকেটার ও জাতীয় দলের সাবেক ম্যানেজার এএসএম ফারুক। সত্তর দশকের শেষ দিকে খেলোয়াড়ী জীবনের ইতি টানার পর বিসিবির সদস্য ও ক্রীড়া সংগঠক হিসেবে সুনাম ছিল তার।

এহতেশাম সুলতান: দেশের হকির অন্যতম সেরা তারকা জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কারপ্রাপ্ত এহতেশাম সুলতান মারা গেছেন ১৭ আগস্ট। ১৯৬৮ থেকে ৭০ পর্যন্ত পূর্ব পাকিস্তান হকি দলের সদস্য ছিলেন তিনি। ১৯৭৮ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে হকি টেস্ট সিরিজে খেলেছেন। অবসরের পর দীর্ঘদিন জাতীয় দলের কোচের দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া হকি ফেডারেশনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বেও দেখা গেছে তাকে।

কাজী জাহেদা আলী: সত্তর দশকে ট্র্যাক মাতানো অ্যাথলেট কাজী জাহেদা আলী মারা যান ৩০ এপ্রিল। ১৯৭৯ সালে অ্যাথলেটিকসে অসামান্য অবদান রাখার স্বীকৃতি স্বরূপ জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার পেয়েছিলেন তিনি।

কারাতে কোচ হুমায়ুন কবীর জুয়েল। ফাইল ছবি

হুমায়ুন কবীর জুয়েল: ২৬ মে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন কারাতে জাতীয় দলের কোচ হুমায়ুন কবীর জুয়েল। দেশের পক্ষে সবচেয়ে বেশি আন্তর্জাতিক ম্যাচ পরিচালনার রেকর্ড ছিল তার।

বিদায়ী বছরে বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গন আরো যাদের হারিয়েছেন তারা হলেন- জাতীয় ভলিবল কোচ গোলাম রসুল মেহেদী, সংগঠক ও জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের সাবেক সচিব এএইচএম সামসুল ইসলাম, মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব লিমিটেডের সাবেক সভাপতি আব্দুল মোনেম খান, কাবাডি ফেডারেশনের সাবেক সভাপতি সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমান মোল্লা, আরামবাগ ক্রীড়া সংঘের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মবিনুল ইসলাম, ক্রীড়া সাংবাদিক আবদুল হান্নান খান, মাহমুদুল হাকিম অপু ও মোস্তাক আহমেদ খান।

শেয়ার করুন