সুন্দরবন রক্ষায় ‘সুন্দরবন সুরক্ষা’ নামে ১৫৭ কোটি ৮৭ লাখ ৫১ হাজার টাকার একটি প্রকল্প নেয়া হচ্ছে। প্রকল্পটি পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে বাস্তবায়ন করবে বন অধিদফতর। ২০২০ সালের জুলাই থেকে ২০২৪ সালের জুন মেয়াদে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। তবে সম্ভাব্যতা যাচাই ছাড়াই অনুমোদনের জন্য প্রকল্পটি ৫ জানুয়ারি একনেকে উঠতে যাচ্ছে।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সম্ভাব্যতা যাচাই ছাড়া প্রকল্প অনেক সময় মাঝপথে গিয়ে বন্ধ হয়ে যায়। কখনও সময় বাড়ে, কখনও বাড়ে ব্যয়। অনেক সময় প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্যই বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয় না।
প্রকল্পটি যাচাই বাছাই করছে পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানি সম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগ। সম্ভাব্যতা যাচাই ছাড়া কেন প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হচ্ছে জানতে চাইলে বিভাগটির সদস্য (সচিব) মো. জাকির হোসেন আকন্দ গনমাধ্যমকে বলেন, আমি এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। বর্তমানে বান্দরবানে আছি। এ বিষয়ে তিনি বিভাগের প্রধানের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন।
কৃষি, পানি সম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের প্রধান মো. মতিউর রহমান বলেন, সব প্রকল্পে স্টাডি করতে হবে এটা নাও হতে পারে। বিষয়গুলো আমার পুরোপুরি মনে নাই।
প্রকল্পটির বাস্তবায়নকারী সংস্থা বন অধিদফতরের প্রধান বন সংরক্ষক মো. আমীর হোসাইন চৌধুরীকে ফোন করা হলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।
খুলনা ও বরিশাল বিভাগের খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, পিরোজপুর ও বরগুনা জেলার মোট ৩৯টি উপজেলায় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। প্রকল্পের চারটি উদ্দেশ্যের একটি হলো সুন্দরবনের সম্পদ সংগ্রহকারী ও সুবিধাভোগী ৩০ হাজার মানুষের প্রচলিত পারমিট সিস্টেম এবং তাদের পরিচয়পত্র অটোমেশন করা।
প্রকল্পের যৌক্তিকতায় পরিকল্পনা কমিশনকে বন অধিদফতর বলেছে, আগে সুন্দরবন ব্যবস্থাপনা কেবল বন থেকে রাজস্ব সংগ্রহ এবং নিয়ন্ত্রিতভাবে গাছ আহরণ করার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। সাম্প্রতিককালে বনজ সম্পদ ব্যবস্থাপনায় প্রাকৃতিক ও আর্থ-সামাজিক বিষয়াদির ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। এই ম্যানগ্রোভ বনটি সমুদ্র ও স্থলভাগের মাঝে বাফার জোন হিসেবে ভূমিকা পালন করছে এবং দীর্ঘকাল ধরে দক্ষিণ-পশ্চিমের নিচু এলাকাকে ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের হাত থেকে রক্ষা করে আসছে। দেশের প্রায় ৩ মিলিয়নের অধিক লোক এ বনের ওপর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে নির্ভরশীল। স্থানীয় জনগণ জীবিকার জন্য প্রত্যক্ষভাবে বন থেকে মাছ, মধু, মোম, টিম্বার, ঔষধি গাছ, চিংড়ি, কাঁকড়া ইত্যাদি প্রাকৃতিক সম্পদ অতিমাত্রায় আহরণ করে এবং বন্যপ্রাণী শিকার করে। যা সুন্দরবনের প্রতিবেশগত ভারসাম্যের জন্য হুমকিস্বরূপ।
বন অধিদফতর আরও বলছে, বৈজ্ঞানিক ব্যবস্থাপনা ও পর্যবেক্ষণ এবং সুন্দরবন সংলগ্ন এলাকায় বসবাসরত জনগোষ্ঠীকে বনের সুরক্ষায় নিয়োজিত করার মাধ্যমে সুন্দরবনের প্রতিবেশগত ভারসাম্য রক্ষা করা ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ করা সম্ভব। সেই প্রেক্ষিতে প্রকল্পটি প্রস্তাব করা হয়েছে।
সূত্র জানায়, প্রকল্পের প্রধান প্রধান কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে অফিস ভবন, আবাসিক ভবন, ব্যারাক, কাঠের জেটি, পল্টুন, গ্যাংওয়েসহ অন্যান্য স্থাপনা নির্মাণ, মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ করা। কম্পিউটার সফটওয়্যার ও সফটওয়্যার লাইসেন্স ও জিপিএস বেজড ট্র্যাকিং সুবিধার উন্নয়ন করা। রিমোট সেন্সিং ও জিআইএস প্রয়োগের মাধ্যমে স্মার্টপেট্রোলিংয়ের তথ্য ভাণ্ডার তৈরি ও স্মার্টপেট্রোলিংয়ের পরিসর বৃদ্ধি করা।
এছাড়া পরামর্শক নিয়োগের মাধ্যমে প্রকল্পের পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন কাজ সম্পাদন এবং ইকোট্যুরিজম ও বিকল্প জীবিকা পরিকল্পনা প্রণয়ন করাসহ আরও বেশ কিছু কার্যক্রম রয়েছে।