করোনাকালে মানুষের খাদ্যাভ্যাসে ফ্রোজেন ফুডের খাদ্যের চাহিদা বেড়েছে। কর্মব্যস্ত জীবনে দীর্ঘ সময় ধরে নাশতা কিংবা খাবার তৈরির ঝামেলা থেকে বাঁচতে ক্রমেই জনপ্রিয় হচ্ছে ফ্রোজেন খাবার। ফ্রিজ থেকে প্যাকেট বের করে ঝটপট পকোড়া ভেজে ফেলা বা ‘ফ্রোজেন’ মাছ বা মাংস চটজলদি রেঁধে ফেলার সুবিধার কারণেই দ্রুত চাহিদা বেড়েছে এই সব প্যাকেটজাত ‘ফ্রোজেন ফুড’-এর। সসেজ, সালামি, নাগেটস, ফিশ ফিলে কিংবা প্রি-কাট মাছ বা মাংস সবই এখন পাওয়া যায়।
ফ্রোজেন খাবারে অনেক সময় এমন কিছু উপাদান ব্যবহার করা হয় যা স্বাস্থ্যের জন্য ভালো নয়। আধভাজা চিকেন পকোড়া। রেফ্রিজারেটরের ঠান্ডায় জমা প্রায়। কিনে বাড়ি ফিরে একটু তেলে ছেড়ে দিলেই হলো। শপিং মল বা ডিপার্টমেন্টাল স্টোরের রেফ্রিজারেটরে থাকা এমন ‘রেডি টু কুক’ খাবারের প্যাকেট ধরার আগে সাবধান। পেশির ক্ষতি করে। ‘ফ্রোজেন ফুড’ স্বাস্থ্যকর দেখানোর জন্য অনেক সময় তাতে ক্যালরি কম উল্লেখ করা থাকে। তবে দেহের প্রয়োজনের তুলনায় কম ক্যালরি গ্রহণ করাও স্বাস্থ্যকর নয়।
উচ্চ রক্ত চাপের ঝুঁকি বাড়ায়। আমেরিকার সেন্টার্স ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন-এর তথ্যানুসারে অর্ধেক তৈরি প্রক্রিয়াজাত খাবারের মাধ্যমে শরীরে প্রায় ৭০ শতাংশ সোডিয়াম গ্রহণের সম্ভাবনা থাকে। আর সোডিয়াম উচ্চ রক্ত চাপের ঝুঁকি বাড়ায়। যা থেকে হৃদরোগ ও স্ট্রোকের মতো মরণব্যাধি আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এই খাবার বেশি পছন্দ করে মূলত শিশু ও তরুণেরা।
ক্ষতি হতে পারে ধমনিও। কিছু খাবারে যেমন- ‘ফ্রোজেন পিৎজা’ এবং ‘পাই’তে কিছুটা হলেও ক্ষতিকারক হাইড্রোজিনেটেড অয়েল ব্যবহার করা হয়। এই তেল হল প্রক্রিয়াজাত দেহের জন্য ক্ষতিকর। ‘আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন’-এর মতে যে কোনও ‘ফ্রোজেন’ খাবার কেনার আগে পড়ে নেওয়া উচিত সেখানে কোনও ক্ষতিকর উপাদান আছে কি-না।
গলা ফোলার সমস্যা বাড়ায়। ফ্রোজেন অনেক খাবারেই ‘মনোসোডিয়াম গ্লুটামেট’ বা এমএসজি ব্যবহার করা হয়। এটা এক ধরনের জিনিস, যা স্বাদ বাড়াতে সাহায্য করে। কিছু গবেষণায় দেখা গিয়েছে এই উপাদান থেকে মাথা-ব্যথা, গলা-ফোলার মত সমস্যা দেখা দেয়। যা থেকে সারা শরীরে ঘামও দেখা দিতে পরে।
এনভাইরনমেন্টাল ওয়ার্কিং গ্রুপ বা ইডব্লিউজি’য়ের তথ্যানুসারে ফ্রোজেন ফুডের মতো প্রক্রিয়াজাত খাবারে কম করে হলেও ২ হাজার সিনথেটিক রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়ে থাকে। তাই সাবধান থাকাই শ্রেয়৷ করোনা সংক্রমণ থেকে বাঁচতে প্যাকেটজাত ‘ফ্রোজেন ফুড’ এড়িয়ে চলার পরামর্শই দিচ্ছেন বিজ্ঞানীরা।
প্যাকেটজাত ‘ফ্রোজেন ফুড’-এ করোনা ভাইরাস প্রায় ৩ মাস পর্যন্ত টিকে থাকতে পারে। করোনায় আক্রান্ত কোনও ব্যক্তি কাঁচা বা প্রক্রিয়াজাত খাবারের সংস্পর্শে এলে তবেই এই ভাইরাস ওই সব খাবারে সংক্রমিত হতে পারে। করোনা সংক্রমিত খাবারের সংস্পর্শে এলে কোনও না কোনও ভাবে এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা থেকেই যায়।