আগামী মে মাসের মধ্যে বাইডেন প্রশাসন আফগানিস্তান থেকে সম্পূর্ণ সৈন্য প্রত্যাহার করবে না। কারণ তালেবান গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে দোহায় যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে করা চুক্তির প্রতিশ্রুতি মেনে চলেনি।
যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক দপ্তর পেন্টাগন বৃহস্পতিবার এমন তথ্য জানিয়েছে।
গত বছরের ২৯ ফেব্রুয়ারি কাতারের রাজধানী দোহায় আফগানিস্তানে চলমান দীর্ঘ দুই দশকের যুদ্ধ সমাপ্তির লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্র ও তালেবান এক ঐতিহাসিক শান্তি চুক্তি করে। ওই চুক্তির অন্যতম শর্ত ছিল; আফগানিস্তানের মাটি ব্যবহার করে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কেউ আক্রমণ করার পরিকল্পনা করতে পারবে না, তালেবান সহিংসতা কমাবে এবং আল কায়েদার সঙ্গে সম্পর্ক রাখবে না। আর যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটোর মিত্রসমূহ ২০২১ সালের মে মাসের মধ্যে আফগানিস্তান থেকে সব সৈন্য প্রত্যাহার করবে।
এর আগে ২০০১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের টুইন টাওয়ারে হামলাকে কেন্দ্র করে তালেবান সরকার হঠানোর জন্য যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তানে আক্রমণ করে। সেই যুদ্ধ এখনো চলমান।
যুক্তরাষ্ট্রের সদ্য সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার প্রেসিডেন্সির শেষের এক দিন আগেও আফগানিস্তান থেকে কিছু সৈন্য প্রত্যাহার করেন। তিনি জানান, আফগানিস্তানে এখন ২৫শ মার্কিন সৈন্য আছে, যেটা ২০ বছরের ইতিহাসে সবথেকে কম। ডোনাল্ড ট্রাম্প আফগানিস্তান যুদ্ধকে ‘অন্তহীন যুদ্ধ’ আখ্যা দিয়ে তালেবানের সঙ্গে যুদ্ধ শেষের সিদ্ধান্ত নেন।
কিন্তু বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট বাইডেনের সামরিক দপ্তর পেন্টাগনের প্রেস সেক্রেটারি জন কির্বি তার প্রথম সংবাদ সম্মেলনে বলেন, তালেবান তাদের প্রতিশ্রুতি পূরণ করেনি। সন্ত্রাস পরিহার করা ব্যতীত আফগান জাতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর আক্রমণ বন্ধ ছাড়া আপস মীমাংসা সামনে নেয়া কঠিন। যুক্তরাষ্ট্র আফগান সরকার এবং তালেবানের মধ্যে মীমাংসার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
জন কির্বি বলেন, সেখানে নিরাপত্তার প্রতিশ্রুতি রয়েছে, সৈন্যপ্রত্যাহারের প্রতিশ্রতি ছিল শর্তসাপেক্ষ। আমাদের নিরাপত্তার চাহিদা পূরণ হলেই কেবল সৈন্যপ্রত্যাহার হবে।
আফগানিস্তান থেকে সব সৈন্য প্রত্যাহারের লক্ষ্য এখনও আছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সবথেকে ভালো সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য বিষয়টি আমাদের অংশীদারদের সঙ্গে আলোচনাধীন।
সংবাদ সম্মেলনের পর পেন্টাগনের প্রেস সচিব এক টুইট বার্তায় বলেন, যুক্তরাষ্ট্র আফগান শান্তিপ্রক্রিয়াকে সমর্থন করে। ভবিষ্যতে সৈন্য প্রত্যাহার করা না করার বিষয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান হয়নি।
এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের নবনিযুক্ত পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন বলেছিলেন, বাইডেন প্রশাসন সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের করা আফগান শান্তি চুক্তি খতিয়ে দেখছে।
গত বছরের সেপ্টেম্বরে কাতারের রাজধানী দোহায় তালেবানের সঙ্গে আফগান সরকারের সরাসরি শান্তি আলোচনা শুরু হয়। আফগান ও তালেবান উভয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয় তারা আলোচনার নিয়ম প্রক্রিয়ার বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছেছে। কিন্তু আলোচনার বিষয়বস্তুর সঙ্গে এখনো একমত হতে পারেনি।
সাম্প্রতিক সময়ে আফগানিস্তানে সহিংসতা বৃদ্ধি পেয়েছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, উচ্চ পদস্ত সরকারি কর্মকর্তা, সাংবাদিক, মানবাধিকার কর্মীদের ওপর টার্গেট করে হামলা করা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র এই সহিংসতায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। হামলার জন্য আফগান সরকার তালেবানকে দোষারোপ করছে। তবে তালেবান হামলার অভিযোগ অস্বীকার করছে।