‘ভাষা আন্দোলনের পথ ধরেই বাঙালি স্বাধীনতার দিকে অগ্রসর হয়’

মোহাম্মদ সজিবুল হুদা

ব্রাহ্মণবাড়িয়া

বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এমপি বলেছেন, ভাষা আন্দোলনের পথ ধরেই বাঙালি জাতি স্বাধীনতার দিকে অগ্রসর হয়েছিল। এই অঞ্চলের মানুষের মধ্যে যে একটি স্বাতন্ত্র্য জাতিসত্তা রয়েছে সেটি জাগ্রত হয় ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে। আমাদের আলাদা যে একটা সত্তা আছে, আমাদের কৃষ্টি ও সংস্কৃতি যে আলাদা সত্তা আছে সেটাও উঠে এসেছিল ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে। ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারিী পরই ধীরে ধীরে সমগ্র জাতির মধ্যে জাতীয়তাবাদী চেতনা জাগ্রত হতে থাকে। ভাষা আন্দোলনকে কেন্দ্র করেই আমরা বহুদূর এগিয়ে যায় এবং চূড়ান্ত ফলাফল হিসেবে স্বাধীন বাংলাদেশ লাভ করি।

মহান শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস – ২০২১ উপলক্ষে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসন কর্তৃক আয়োজিত ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

universel cardiac hospital

মোকতাদির চৌধুরী বলেন, বাংলা ভাষার সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক যে কতটা গভীর তার প্রমাণ পাওয়া যায় ১৯৭৪ সালে।জাতিসংঘ বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেওয়ার পরপরই ৭৪ সালে সংস্থাটির সাধারণ অধিবেশনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বক্তব্য রাখেন, সেখানে তিনি যে ভাষায় বক্তব্য রেখেছিলেন সেটি ছিল বাংলা। মূলত আমাদের ভাষার সাথে দেশের সম্পর্কের গভীরতা বুঝাতেই বঙ্গবন্ধু সেদিন বিশ্ব সম্প্রদায়ের সামনে বাংলায় বক্তব্য রেখেছিলেন।

তিনি বলেন, ছয় দফার সঙ্গেও ভাষার সম্পর্ক ওতোপ্রোতভাবে জড়িত। কেননা ভাষার সাথে আমাদের অর্থনীতির সম্পর্ক ছিল, রাজনীতির সম্পর্ক ছিল, স্বায়ত্তশাসনের ও আত্মনির্ভরশীলতার প্রশ্ন ছিল এবং সবগুলো প্রশ্ন একাকার হয়ে গিয়েছিল ভাষা আন্দোলনের সাথে।

মোকতাদির চৌধুরী বলেন, আজ আমাদের গর্ব ও অহংকার এইজন্য যে আমাদের সংবিধানে বাংলাদেশের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাংলাকেই গ্রহণ করতে পেরেছি।

তিনি বলেন, ১৯৭-৯৮ সালের দিকে যখন কানাডা প্রবাসী সালাম ও রফিক তারা যখন ইন্টারন্যাশনাল ওয়ার্ল্ড মাদার ল্যাংগুয়েজ লাভার্স এসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে একটা দিবসকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণার প্রস্তাব করেন এবং তারা প্রস্তাব করেন এই দিবসটি হতে পারে ২১ ফেব্রুয়ারি। কেননা ২১ ফেব্রুয়ারি হলো এমন একটা দিন যে দিন মাতৃভাষার জন্য মানুষ জীবন দিয়েছিল। এটি পৃথিবীর মানুষের কাছে এক অন্যন্য উদাহরণ। পৃথিবীর ইতিহাসে এমন উদাহরণ আর কোথাও নেই।

মোকতাদির চৌধুরী বলেন, একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস স্বীকৃতিটাও কিন্তু বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের সময়ে হয়েছে। আপনারা খেয়াল করবেন যে, পাকিস্তান আমলে বাংলা যখন রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি পায় তখনও আওয়ামী লীগ ক্ষমতাসীন দলের অন্যতম অংশীদার ছিল এবং সোহরাওয়ার্দী ছিলেন আইনমন্ত্রী। তার প্রস্তাবনায় শাসনতন্ত্র তৈরি হয়। তারই ধারাবাহিকতায় শেখ হাসিনা সরকারের আমলে সালাম ও রফিকের প্রস্তাব রাষ্ট্রীয়ভাবে ইউনেস্কোর কাছে পেশ করা হলে সংস্থাটি দীর্ঘ আলোচনা সাপেক্ষে একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে।

প্রবীণ এই আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, আমি অত্যন্ত আনন্দিত এইজন্য যে দেরী হলেও আজকে উচ্চ আদালতে বিশেষ করে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট ডিভিশনে বাংলায় রায় দেওয়া হচ্ছে। এটা আরও আগে হলে আরও ভালো হতো। কিন্তু আপনারা জানেন, ১৯৭৫ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর যে সরকার সমূহ শেখ হাসিনা সরকার প্রতিষ্ঠার আগ পর্যন্ত ক্ষমতায় ছিল- মুস্তাক, জিয়া, এরশাদ এবং খালেদা জিয়া সরকার তারা সকলেই বাংলা ভাষা বিরোধী ছিল। তাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল বাংলা ভাষাকে যতটা পারে সংস্কার করে এমন একটা অবস্থায় নিয়ে আসা যাতে এই ভাষার সুপরিচিত পরিচিতিটা আমরা ভুলে যেতে পারি।

অনুষ্ঠানের মুখ্য আলোচক বরেণ্য শিক্ষাবিদ, মাউশি’র সাবেক মহাপরিচালক ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য প্রফেসর ফাহিমা খাতুন বলেন, বাঙালির যে জাতীয়তাবাদ সেই জাতীয়তাবাদের সূচনাই ঘটেছে ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে। শুধু তা-ই নয়, ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে জাতীয়তাবাদ যেমন ভিত্তি পেয়েছে তেমনিভাবে আমরা দেখি যে বাঙালি প্রথম আন্দোলন করে রক্ত দিতেও শিখেছে। ভাষা আন্দোলনকে বলা হয় বাঙালি জাতীয়তাবাদের সূতিকাগার। তারই পথ ধরেই আমরা দেখি, ১৯৫৪ নির্বাচন, পরবর্তীতে ১৯৬২ সালের ছাত্র আন্দোলন, ১৯৬৬ সালের ৬ দফা আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান, ৭০ এর নির্বাচন এবং ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ।

জেলা প্রশাসক জনাব হায়াত উদ দৌলা খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানি আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আনিসুর রহমান ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আল-মামুন সরকার।

শেয়ার করুন