‘ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিশ্ববিদ্যালয় কারও কাছে মাথা নত করবে না’

মোহাম্মদ সজিবুল হুদা

র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এমপি

বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এমপি বলেছেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিশ্ববিদ্যালয় শুধু সার্টিফিকেট বিতরণের বিশ্ববিদ্যালয় হবে না। এটি প্রকৃত অর্থেই একটি জ্ঞানান্বেষণের বিশ্ববিদ্যালয় হবে। ভবিষ্যতে আমরা এটিকে একটি রিসার্চ ওরিয়েন্টেডেবল বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর করব। একুশ মানে মাথা নত না করা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিশ্ববিদ্যালয় কারও কাছে মাথা নত করবে না। কারণ এই বিশ্ববিদ্যালয় একুশের চেতনায় উদ্বুদ্ধ।

আজ সোমবার মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

মোকতাদির চৌধুরী বলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে এটিই সর্বপ্রথম অনুষ্ঠান। প্রথম অনুষ্ঠান এ-ই অর্থে যে, গত বছর একুশে ফেব্রুয়ারিতে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাকার্যক্রম শুরুই হয়নি। সুতরাং বিশ্ববিদ্যালয় চালু হওয়ার পর শহীদ দিবসকে কেন্দ্র করে এটিই প্রথম অনুষ্ঠান। আমরা যাত্রাকালেই বলেছি, দল, মত ও বিভিন্ন মতবাদের উর্ধ্বে উঠে বিশ্ববিদ্যালয়টি পরিচালিত হবে কিন্তু দুটি বিষয়ের সাথে আমরা কখনোই আপোস করব না। একটি হলো একুশের চেতনা এবং অন্যটি হলো মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। আমরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও একুশের চেতনাকে ধারণ করে সামনের দিকে এগিয়ে যাবো।

মোকতাদির চৌধুরী বলেন, আমি বিশ্বাস করি যে,ভাষার আন্দোলন ও দেশের আন্দোলন একই সূত্রে গাঁথা। যদি ১৯৫২ সালে ভাষার আন্দোলন না হতো এবং ভাষার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে বাঙালির ইতিহাস, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য মিশ্রিত বাঙালি জাতীয়তাবাদের বিকাশ না হতো তাহলে আমরা একটি স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ পেতাম না।

তিনি বলেন, ভাষা আন্দোলনের সাথে প্রথম থেকেই যারা যুক্ত ছিলেন তাদের অন্যতম পুরোধা ব্যক্তিত্ব ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এছাড়া এই আন্দোলনে তাজউদ্দীন আহমদের বিশাল ভূমিকা ছিল। ভাষা আন্দোলনের উপর লেখা তাজউদ্দীন আহমদের ডাইরীতে এর বিস্তারিত আলোচনা আছে। সৈয়দ নজরুল ইসলাম, ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী, এইচএম কামরুজ্জামান তারা সকলেই সেদিন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। ভাষা আন্দোলনের সাথে যে বাঙালি জাতীয়তাবাদী আন্দোলন সম্পৃক্ততা বুঝাতেই আমি এই কথাগুলো জানালাম।

মোকতাদির চৌধুরী বলেন, বাংলাকে জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে ব্যবহার করার জন্য আমাদের সরকারের পক্ষ থেকে প্রস্তাব করা হয়েছে এবং সেটি নিয়ে আমরা বিভিন্ন জায়গা থেকে কাজ করে যাচ্ছি। আমরা আশা করছি যে একদিন জাতিসংঘের সরকারি ভাষাও বাংলা হবে।

একুশের চেতনা বাঙালি জাতীয়তাবাদের ভিত্তি: ফাহিমা খাতুন

বক্তব্য রাখছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য প্রফেসর ফাহিমা খাতুন। ছবি : মত ও পথ

অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক (গ্রেড-১) এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য প্রফেসর ফাহিমা খাতুন বলেন, আমাদের চেতনায় যে একুশ, সেই একুশ আসলে আমাদের বাঙালি জাতীয়তাবাদের ভিত্তি। বাঙালি জাতীয়তাবাদের উন্মেষই হয়েছিল একুশে ফেব্রুয়ারি ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে। দেশ বিভাগের পরে আমরা যে পাকিস্তানের অধিভুক্ত হয়েছিলাম, সে পাকিস্তানের সাথে ধর্ম ছাড়া আমাদের কোনো দিক দিয়ে মিল ছিল না। আমাদের আবহমান সংস্কৃতির যে বিশেষত্ব তাতে আমাদের চলাফেরা, আচার-আচরণ, আমাদের ভাষা তথা সবকিছুই ছিল স্বতন্ত্র এবং সে স্বতন্ত্রতাকে জলাঞ্জলি দেওয়ার জন্য পশ্চিম পাকিস্তানিরা যে ষড়যন্ত্র করেছিল তার বিরুদ্ধেই বাঙালি প্রথম না শব্দটি উচ্চারণ করেছিল। তার ফলশ্রুতিতেই আমাদের জাতীয়তাবাদের উন্মেষ। এরই পথ ধরে আমরা রাষ্ট্রভাষা বাংলাকে ছিনিয়ে এনেছিলাম এবং বহু আন্দোলন সংগ্রাম শেষে একটি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গঠন করেছিলাম।

তিনি বলেন, একুশে ফেব্রুয়ারি ও একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধ একসূত্রে গাঁথা। এই একসূত্রে গাঁথা ইতিহাসটা আমাদের ছেলেমেয়েদের জানতে হবে। সেজন্যই এতো বিস্তারিতভাবে আলোচনা সভার আয়োজন করেছি।

বরেণ্য এই শিক্ষাবিদ বলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিশ্ববিদ্যালয় পাবলিক না প্রাইভেট সেটি বড় কথা নয়।আমাদের বড় কথা হলো এই বিশ্ববিদ্যালয়টি একুশের চেতনা নিয়ে গড়ে উঠেছে। এই বিশ্ববিদ্যালয় হবে একটি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের প্রতিভূ। এখানে সাম্প্রদায়িকতা থাকবে না, এখানে ধর্মান্ধতা থাকবে না। এই বিশ্ববিদ্যালয় এগিয়ে যাবে তার মুক্তচিন্তা ও মুক্তবুদ্ধি নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করে।

ফাহিমা খাতুন আরও বলেন, একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পেয়েছি, এটি আমাদের জন্য অনেক বড় প্রাপ্তি। আজকে যেমন শিকাগোতে শ্রমিকদের ওপর অত্যাচারের বিরুদ্ধে আমরা মে দিবস পেয়েছি, তেমনিভাবে একুশে ভাষার জন্য রক্ত দিয়ে আমরা একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছি। এটি বাঙালির জন্য অনেক বড় প্রাপ্তি। তাই ভাষা দিবসে অবশ্যই আমাদের নতুন করে শপথ নিতে হবে, আমরা আমাদের ভাষাকে ভালোবাসব, আমরা একটি অসাম্প্রদায়িক চেতনার বাংলাদেশ গড়ে তুলব এবং আমরা আমাদের দেশকে ভালোবাসব।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া সাহিত্য একাডেমির সভাপতি ও বিশিষ্ট কবি জয়দুল হোসেন এবং লেখক ও গবেষক মানবর্দ্ধন পাল।

শেয়ার করুন