খ্যাতিমান কলামিস্ট, গবেষক, প্রাবন্ধিক, সাংবাদিক ও লেখক সৈয়দ আবুল মকসুদ (১৯৪৬-২০২১) মহাপ্রয়াণে গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করছি। তিনি এক অর্থে ছিলেন একজন বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী ব্যক্তিত্ব। আজীবন তিনি গণমানুষের পক্ষের এক নিরলস সাংস্কৃতিক কর্মী ও সাংবাদিক হিসেবে বরিত হয়েছেন। তিনি সাংবাদিকতা দিয়ে পেশাজীবন শুরু করলেও নানা সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে নিজেকে যুক্ত রেখেছেন সব সময়। এদেশের প্রতিটি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনে পালন করেছেন অগ্রণী ভূমিকা।
দেশপ্রেমিক সাংবাদিক ও গবেষক সৈয়দ আবুল মকসুদ ছিলেন মত ও পথ পরিবারের একজন শুভাকাঙ্ক্ষী। তিনি আমাদের পাক্ষিক ও অনলাইনে লিখতেন নিয়মিত কলাম। তাঁর সঙ্গে আমার ছিল খুবই হৃদ্যতাপূর্ণ সম্পর্ক। তিনি আমাদের চিনাইর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব অনার্স কলেজ মাঠে আয়োজিত শিশু মেধাবৃত্তি প্রদান অনুষ্ঠান ও শিশুমেলায় বহুবার এসে এই অঞ্চলের শিক্ষার্থীদের অনুপ্রাণিত করে গেছেন। এসব আজ শুধুই স্মৃতি।
সৈয়দ আবুল মকসুদ রাজনীতি, সমাজ, সাহিত্য, সংস্কৃতি এবং বিখ্যাত সাহিত্যিক ও রাজনীতিবিদদের জীবন ও কর্ম নিয়ে লিখে গেছেন বহু বই ও প্রবন্ধ। পাশাপাশি কাব্যচর্চাও করেছেন, যা আমাদের সাহিত্যকে করেছে সমৃদ্ধ। বাংলা সাহিত্যে সামগ্রিক অবদানের জন্য তিনি লাভ করেছেন বাংলা একাডেমি পুরস্কার।
২০০৪ সালের ১ মার্চ একটি জাতীয় দৈনিকে ‘হুমায়ুন আজাদের ওপর আঘাত–ফ্যাসিবাদের নগ্নরূপ’ শীর্ষক সৈয়দ আবুল মকসুদের একটি লেখা যখন প্রকাশিত হয় তখন তিনি ছিলেন বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) উপপ্রধান বার্তা সম্পাদক। এ লেখা প্রকাশিত হওয়ার পর আবুল মকসুদকে ভবিষ্যতে এ ধরনের কাজ না করার নির্দেশ দেওয়া হলে চিন্তার স্বাধীনতা রক্ষার অঙ্গীকারে তিনি বাসস থেকে পদত্যাগ করেন।
সবশেষে বলতে পারি, বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী সৈয়দ আবুল মকসুদ তাঁর সহজাত লেখনীর মাধ্যমে বাংলাদেশের রাজনীতি, সমাজ, সাহিত্য ও সংস্কৃতি এবং সাহিত্যিক ও রাজনীতিবিদদের জীবন ও কর্ম নিয়ে নিয়ে বিভিন্ন গ্রন্থ ও প্রবন্ধ লেখার পাশাপাশি পরিবেশ রক্ষায় জনসচেতনতা সৃষ্টিতে যে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে গেছেন সেজন্যই তিনি প্রজন্মের আলোর দিশারী হয়ে জাতির হৃদয়ে বেঁচে থাকবেন চিরকাল।