পঞ্চম ধাপে দেশের ২৯ পৌরসভায় ভোটগ্রহণ বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনার মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে। আজ রোববার (২৮ ফেব্রুয়ারি) বিকেল ৪টায় এ ভোটগ্রহণ শেষ হয়। এর আগে সকাল ৮টায় শুরু হয় ভোটগ্রহণ।
এই ধাপে সব পৌরসভায় ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) মাধ্যমে ভোটগ্রহণ হয়েছে। ভোটগ্রহণের শুরুতে কেন্দ্রগুলোতে ভোটার উপস্থিতি কম থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে ভোটারের লাইন।
দুপুর ২টার দিকে নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার মুন্সিপাড়ার ৫ নম্বর ওয়ার্ডে ভোটকেন্দ্রের বাইরে দুই কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে এক যুবক নিহত হয়েছেন। এ সময় আহত হয়েছেন আরও পাঁচজন। তাদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
নির্বাচন চলাকালে বেলা ১১টায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজ ভোটকেন্দ্র এলাকায় ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় পথচারীরাসহ ভোটাররাও আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। বিস্ফোরণের পরই কেন্দ্রটিতে ভোটারদের উপস্থিতি কমতে থাকে।
ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনে কাশিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে বেদে সম্প্রদায়ের দু’পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় ইসলাম নামে এক যুবক আহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়। খবর পেয়ে পুলিশ, বিজিবি ও র্যাব সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে ব্যাপক লাঠিচার্জ করে। এতে তারা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। অন্যদিকে, কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়ার অভিযোগ করেন পৌরসভার ধানের শীষ প্রতীকের মেয়র প্রার্থী মাহবুবা রহমান।
ময়মনসিংহের নান্দাইল পৌরসভা নির্বাচনে কেন্দ্রের ভেতরে ঢুকে হইচই করার অভিযোগে তিন কাউন্সিলর প্রার্থী ও এক ভোটারকে আটক করেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সাঈদা পারভিন। বেলা ১১টার দিকে শহীদ স্মৃতি আদর্শ ডিগ্রি কলেজ কেন্দ্র থেকে তাদের আটক করা হয়।
এদিকে, প্রশাসনের সহযোগিতায় ভোট দেয়াসহ নানা অভিযোগ এনে ভোট বর্জন করেন মহেশপুর পৌরসভার বিএনপি প্রার্থী অ্যাডভোকেট আমিরুল ইসলাম খান চুন্নু। তিনি সাংবাদিকদের জানান, কেন্দ্র থেকে বিএনপির প্রার্থীর এজেন্টদের বের করে দেয়া হয়। এছাড়া সমর্থদের কেন্দ্রে প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না। এমনকি প্রশাসনের সহযোগিতায় ভোট দিচ্ছে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর সমর্থকরা।
অন্যদিকে, বেলা ১১টার দিকে সংবাদ সম্মেলন করে ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন নীলফামারী পৌরসভার জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী বিশিষ্ট ব্যবসায়ী সিদ্দিকুল আলম। এ সময় তিনি নির্বাচন কমিশনারের কাছে পুনর্নির্বাচন দাবি করেন।
সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ভোটে অনিয়ম, কর্মীদের পিটিয়ে বের করে দেয়া ও প্রশাসনের পক্ষপাতদুষ্টতার কারণে আনুষ্ঠানিকভাবে তিনি নির্বাচন বর্জন করেছেন।
নির্বাচন কমিশন (ইসি) সূত্রে জানা যায়, একইদিনে দেশের চারটি উপজেলা পরিষদে চেয়ারম্যান এবং ১৪টি ইউনিয়ন পরিষদে বিভিন্ন পদে উপনির্বাচনে ভোট অনুষ্ঠিত হয়েছে। কুমিল্লার দেবীদ্বার উপজেলা পরিষদের উপনির্বাচনও এদিন হয়েছে।
এছাড়া এর আগে অনুষ্ঠিত সাতটি পৌরসভায় বন্ধ ঘোষিত ভোটকেন্দ্রগুলোতে এবং মৃত্যুজনিত কারণে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ৩১ নম্বর ওয়ার্ড, ঝিনাইদহের শৈলকুপা পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ড, পিরোজপুরের স্বরূপকাঠি পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ড, এবং সিরাজগঞ্জ পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদেও আজ ভোটগ্রহণ হয়েছে। এর মধ্যে চট্টগ্রাম সিটি ও শৈলকুপায় ভোটগ্রহণ হয়েছে ইভিএমে।
গত ১৯ জানুয়ারি পঞ্চম ধাপের ৩১ পৌরসভার নির্বাচনের জন্য তফসিল ঘোষণা করে ইসি। পরে অন্য ধাপ থেকে পঞ্চমে যুক্ত হয় সৈয়দপুর পৌরসভা। অপরদিকে উচ্চ আদালতে যশোর পৌরসভার ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়।
ভোটগ্রহণের আগ মুহূর্তে জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ পৌর নির্বাচন অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করেছে ইসি। এছাড়া চট্টগ্রামের রাউজান পৌরসভায় মেয়র ও কাউন্সিলরসহ সব পদের প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয় পান।
যেসব পৌরসভায় ভোটগ্রহণ হয়েছে
চট্টগ্রামের মিরসরাই, বারইয়ারহাট ও রাঙ্গুনিয়া; লক্ষ্মীপুরের রায়পুর, চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল, হবিগঞ্জ সদর, জামালপুর সদর, মাদারগঞ্জ ও ইসলামপুর; রাজশাহীর দুর্গাপুর ও চারঘাট; বগুড়া সদর, মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইর, কিশোরগঞ্জের ভৈরব, ভোলার সদর ও চরফ্যাশন; চাঁদপুরের শাহরাস্তি ও মতলব; যশোরের কেশবপুর, নীলফামারীর সৈয়দপুর, মাদারীপুর সদর ও শিবচর; রংপুরের হারাগাছ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর, ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ ও মহেশপুর; জয়পুরহাট সদর, ময়মনসিংহের নান্দাইল ও গাজীপুরের কালীগঞ্জ পৌরসভায়।