‘তদন্তে দীর্ঘসূত্রতা কমানোর চেষ্টা করবো’

নিজস্ব প্রতিবেদক

মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ

দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর মঈনউদ্দীন আব্দুল্লাহ জানিয়েছেন, আইন ও বিধি অনুযায়ী সঠিকভাবে তিনি দায়িত্ব পালন করবেন। বিশেষ করে কোনো কোনো অনুসন্ধান বা তদন্তে যে দীর্ঘসূত্রতা আছে তা কমানোর চেষ্টা করবেন।

আজ বুধবার দুপুরে দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রধান কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই কথা বলেন। দায়িত্ব নেয়ার পর এদিন তিনি প্রথমবারের মতো সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন।

দুদকের নতুন চেয়ারম্যান বলেন, দুর্নীতিমুক্ত সমাজ থাকুক, দুর্নীতিমুক্ত দেশ থাকুন, এটার ব্যাপারে সবাই একমত। এটার বিপক্ষে আপনি একজনও পাবেন না। তারপরও পৃথিবীর সব দেশেই কম-বেশি দুর্নীতি থাকে। পৃথিবীর সব দেশেই এ ধরনের প্রতিষ্ঠান বা বিভাগ আছে। আমাদের দেশে যেমন দুর্নীতি দমন কমিশন আছে। আমাদের লক্ষ্য থাকবে সম্পূর্ণ দুর্নীতিমুক্ত দেশ বা সমাজ গড়ার জন্য সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়া। যতখানি আমরা অভীষ্ঠ লক্ষে এগিয়ে যেতে পারি সেটাই আমাদেরে উদ্দেশ্যে থাকবে।

নিজের কর্মপরিধি সম্পর্কে জানাতে গিয়ে তিনি বলেন, দুর্নীতি দমনের জন্য সুনির্দিষ্ট আইন আছে আমাদের, যা দিয়েই দুর্নীতি দমন কমিশন গঠিত হয়েছে। সরাসরি আমাদের ওপর দায়িত্ব, তবুও আমি বলবো, বাংলাদেশের যতগুলো আইন আছে প্রতিটি আইনেই দুর্নীতি যাতে না হয় সেটা অন্তর্ভুক্ত আছে। আমার প্রত্যাশা থাকবে সবগুলো আইনের মাধ্যমে দুর্নীতি যাতে কম হয় বা নিশ্চিহ্ন করা যায় সেটাই উদ্দেশ্য থাকবে।

সাংবাদিকদের সহযোগিতা চেয়ে দুর্নীতিবিরোধী সংস্থাটির নতুন চেয়ারম্যান বলেন, আপনাদের সবার সহযোগিতা দরকার। শুধু আইন দ্বারা দুর্নীতি দমন করা দুরূহ ব্যাপার। সম্ভব কি না সেটাও আপনাদের প্রতি আমার প্রশ্ন। এজন্য সবার সহযোগিতা লাগবে। আমরা কেউ চাই না যে সমাজে দুর্নীতি থাকুক। আমাদের কর্মকাণ্ডেও যেন সেটা থাকে। সবাই সবার অবস্থান থেকে দুর্নীতি দমনে আমাদেরকে সহযোগিতা করবেন। বিশেষ করে গণমাধ্যম, কারণ আপনারা সমাজের দর্পণ।

পূর্ববর্তী কমিশন প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতি কমানোর উদ্যোগ নিয়েছিল, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে দুর্নীতি রোধে চিঠিও দিয়েছে। আপনাদের বেলায় বিষয়টি কীভাবে কাজ করবেন, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, এর আগে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় দুদকের কাছে সুপারিশ দিয়েছে। সেগুলো কীভাবে বাস্তবায়ন করা যায়। সে উদ্যোগ থাকবে।

জনআকাঙ্ক্ষা পূরণে এই কমিশন কী ধরনের ভূমিকা রাখবে, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জনগণের আকাঙ্ক্ষা যা, জাতির আকাঙ্ক্ষা যা, এটার সাথে যাতে দুদকের দূরত্ব কমে আসে সেই চেষ্টা থাকবে। আমাদের উদ্দেশ্য জনগণের আকাঙ্ক্ষা পূরণ করা। আপনারা যা বললেন সেগুলো নিয়ে আমরা কমিশনে আলোচনা করবো। আশা করি সেটাই আমরা করার চেষ্টা করবো।

বেসিক ব্যাংক কেলেংকারি প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা দেখবো কেন তা শেষ করতে পারেনি, কেন হয়নি। এর বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে। আমরা কারণগুলো অসুন্ধান করে এটা যাতে আর বেশি প্রলম্বিত না হয় এর উদ্যোগ নেব।

বিদেশে পাচার হওয়ার অর্থ ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে কোনো উদ্যোগ থাকবে কি না, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, সব কিছুর একটা পদ্ধতি থাকে। পদ্ধতি অনুযায়ী, আইন অনুযায়ী যতখানি সুযোগ রয়েছে সেটা করার চেষ্টা করবো।

অন্যদিকে দুর্নীতি দমন কমিশনের অভ্যন্তরীণ দুর্নীতি বিষয়ে তার কমিশনের অবস্থান জানতে চাইলে মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ বলেন, কমিশনের অভ্যন্তরীণ জবাবদিহিতা-স্বচ্ছতা বাড়ানোর চেষ্টা করবো।

দুদকের নবনিযুক্ত কমিশনার মো. জহুরুল হক অর্থপাচারের বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, অর্থপাচারের ব্যাপারে হাইকোর্ট সিদ্ধান্ত দিচ্ছে, আমাদের কাছে লিস্ট চাচ্ছে। আমরা লিস্টগুলো কোয়ারি করবো, খুঁজবো, দেখবো তারপর কোর্টকে জানাবো। কোর্ট যে অ্যাকশন নিতে বলবে সেই অ্যাকশন নেব।

কমিশনার আরও বলেন, আইনের বাইরে আমাদের কারোই যাওয়া সুযোগ নেই। এটা বাস্তব, বাংলাদেশ থেকে প্রচুর টাকা পাচার হচ্ছে। দেশের জন্য এটা বড় ধরনের সমস্যা। এই কমিশন তৎপর থাকবে ভবিষতে যাতে কোনো টাকা পাচার না হয়। যেগুলো পাচার হয়েছে সেগুলো কীভাবে আনা যায়, সুপ্রিম কোর্ট কী আদেশ দেয় তার ওপর নির্ভর করবে।

কমিশনার বলেন, দুই-চার মাস গেলেই বুঝতে পারবেন যে, এই কমিশন যথেষ্ট অ্যাকটিভ, আশা-আকাঙ্ক্ষা প্রতিফলের চেষ্টা করছে। দুর্নীতি শতভাগ বন্ধ হবে না, তবে কমানোর চেষ্টা করবো।

শেয়ার করুন