মিয়ানমার এখন সেনার নিয়ন্ত্রণে। রাস্তায় রাস্তায় সেনা-পুলিশের ব্যাপক উপস্থিতি। মোড়ে মোড়ে বসানো হয়েছে ব্যারিকেড-চেকিং পোস্ট। দিনের বেলায় ঘণ্টায় ঘণ্টায় চলছে সাজোয়া যানের টহল।
শহর থেকে প্রত্যন্ত গ্রাম-সবখানেই একই চিত্র। ব্যাপক দমনপীড়ন-ধরপাকড় চালানো হচ্ছে। দিনে বিক্ষোভকারীদের ওপর ছোড়া হচ্ছে রাবার বুলেট-টিয়ার গ্যাস-জলকামান। গুলি চালিয়ে পাখির মতো হত্যা করা হচ্ছে। কিন্তু এ সবের কোনো কিছুরই তোয়াক্কা করছে না দেশটির বিক্ষুব্ধ জনগণ। প্রতিদিন মরছে, প্রতিদিনই নতুন উদ্যমে রাস্তায় নামছে। চলছে সর্বাত্মক নাগরিক অসহযোগ আন্দোলন।
অব্যাহত এই বিক্ষোভ বশে আনতে এবার দমন-পীড়ন ও ধরপাকড়ের মাত্রা আরও বাড়িয়েছে সেনা কর্তৃপক্ষ। বিক্ষোভকারীদের পাকড়াও করতে বেছে বেছে বড় শহরগুলোর পাড়া-মহল্লায় ঘরে ঘরে তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনী। বিরোধী রাজনীতিক, নেতাকর্মী, চিকিৎসক-নার্স ও সাংবাদিকদের পর এবার টার্গেট করা হচ্ছে আন্দোলনরত রেলওয়ে কর্মীদের। জোর করে কাজে ফেরাতে রেলস্টেশন ও স্টাফ কলোনিতে চালানো হচ্ছে আকস্মিক সাঁড়াশি অভিযান।
পহেলা ফেব্রুয়ারি সেনা অভ্যুত্থানের পর থেকেই উত্তাল পুরো মিয়ানমার। এক মাসেরও বেশি সময় ধরে সেনাশাসনের বিরুদ্ধে রাজধানী নেপিদো, অন্যতম প্রধান দুই শহর ইয়াঙ্গুন ও মান্দালয়সহ ছোট-বড় সব শহরে প্রতিদিনই মিছিল-সমাবেশ ও বিক্ষোভ দেখাচ্ছে গণতন্ত্রকামী জনতা। পক্ষান্তরে ক্ষমতা ও নিয়ন্ত্রণ পোক্ত করতে ক্রমেই বেপরোয়া ও সহিংস হয়ে উঠেছে সেনা। শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভেও নিয়মিতই গুলি চালাচ্ছে পুলিশ। কখনো নির্মম প্রহার করছে। পুলিশের গুলিতে এখন পর্যন্ত প্রাণ হারিয়ে ৬০ জনের বেশি নাগরিক। গুরুতর আহত শত শত।
এএফপি জানিয়েছে, বুধবার ইয়াঙ্গুনের একটি রেলস্টেশন ও পার্শ্ববর্তী রেলকলোনিতে অভিযান চালায় কয়েকশ সেনা ও পুলিশের বড় একটি বাহিনী। অসহযোগ আন্দোলনে যোগ দেয়া রেলকর্মীদের আটক করাই ছিল অভিযানের লক্ষ্য। অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে মিয়ানমারজুড়ে অব্যাহত রয়েছে নাগরিক অসহযোগ আন্দোলন (সিডিএম)। চিকিৎসক ও নার্সদের নেতৃত্বে চলমান এই আন্দোলনে কৃষক-মজুর-শ্রমিক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগ দিয়েছে সরকারি কর্মচারীও। এতে সংহতি প্রকাশ করে কর্মবিরতি পালন করছে ইয়াঙ্গুনের মালোয়া রেলস্টেশনের প্রায় আট শতাধিক কর্মীও। ফলে সরকারি হাসপাতাল ও অফিস-আদালতের পাশাপাশি এক রকম অচল ও পঙ্গু হয়ে পড়েছে রেলও।
রয়টার্স জানিয়েছে, শুরু থেকেই রাত-দিন সমানভাবে চলছে গ্রেফতারি অভিযান ও ধরপাকড়। তবে এতেও বিক্ষোভ না থামায় গত কয়েক দিন ধরপাকড়ের মাত্রা আরও বাড়ানো হয়েছে। খবরে বলা হয়েছে, ইয়াঙ্গুন শহরের সান চং উপশহর এলাকায় পুলিশের চলাচল বন্ধ করার লক্ষ্যে মঙ্গলবার (৯ মার্চ) সারারাত এলাকার প্রবেশপথে ব্যারিকেড দিয়ে রাখে স্থানীয় বাসিন্দারা।
কিন্তু শেষ রাতের দিকে সেই ব্যারিকেড ভেঙে ওই এলাকায় প্রবেশ করে নিরাপত্তা বাহিনী। এরপর অভ্যুত্থানবিরোধী বিক্ষোভকারীদের ধরতে প্রতিটি ঘরে তল্লাশি চালায়। আগের দিন সোমবার আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে ওই এলাকায় নারী নেত্রী সু চির মুক্তি চেয়ে বিক্ষোভ মিছিল করে তার একদল কর্মী-সমর্থক। এদিন রাতে এই এলাকার একটি মহল্লার প্রবেশপথ বন্ধ করে দেয়। এতে প্রায় দুই শতাধিক বিক্ষোভকারী ওই মহল্লায় আটকা পড়ে। এতে উদ্বেগ প্রকাশ করে বিবৃতি দেয় জাতিসংঘ মানবাধিকার সংস্থাসহ বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকরা।