মিয়ানমারের গণতন্ত্রপন্থী নেত্রী অং সান সু চির বিরুদ্ধে আনা সামরিক বাহিনীর নতুন অভিযোগ প্রত্যাখান করেছেন সু চির আইনজীবী। জান্তার আনা সর্বশেষ অভিযোগকে তিনি ‘ভিত্তিহীন’ এবং ‘কালিমা লেপনের উদ্দেশে’ আনা হয়েছে বলে উল্লেখ করেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার অং সান সু চির বিরুদ্ধে ঘুষ নেয়ার অভিযোগ তোলে সেনাবাহিনী। পুলিশের গুলিতে ১২ জন বিক্ষোভকারী নিহতের পর সংবাদ সম্মেলনে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী এই অভিযোগ তোলে।
এর আগে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী স্টেট কাউন্সেলর অং সান সু চির বিরুদ্ধে দুইটি চার্জ গঠন করে। অভিযোগের প্রথমটি ছিল অবৈধভাবে চারটি ওয়াকিটকি রাখা এবং দ্বিতীয়টি ছিল করোনাভাইরাস পরিস্থিতির মধ্যে পরিবেশ বিপর্যয় করা।
গত ১ ফেব্রুয়ারি নির্বাচিত নেতাদের বন্দী করে সেনাবাহিনী জরুরি অবস্থা জারি করে। সেই থেকে মিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থান বিরোধী বিক্ষোভ চলমান রয়েছে। জাতিসংঘ জানিয়েছে নিরাপত্তা বাহিনী কমপক্ষে ৭৫ জন বিক্ষোভকারীকে হত্যা করেছে। হত্যা নির্যাতন উপেক্ষা করে দেশটির সাধারণ মানুষ বিক্ষোভ অব্যাহত রেখেছে।
সু চির বিরুদ্ধে জান্তার আনা ঘুষের অভিযোগ সম্পর্কে তার আইনজীবী ‘খিন মাং জ’ এএফপি নিউজ এজেন্সিকে বলেন, স্টেট কাউন্সেলর সু চির বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ ভিত্তিহীন বিশেষ করে ডলার এবং সোনার বার আত্মসাৎ করার অভিযোগ। এটা সবার জন্য একটি হাস্যকর কৌতুক।
তিনি বলেন, আমি এমন বিধিবহির্ভূত কলঙ্কময় অভিযোগ দেখিনি। তার অন্য দুর্বলতা থাকতে পারে। কিন্তু নৈতিকভাবে তার (সু চির) কোনো দুর্বলতা নেই। অন্য দুর্বলতা বলতে সু চির আইনজীবী সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের ওপর নিপীড়নে সু সুচির চুপ থাকাকে উল্লেখ করেন। ২০১৭ সালে সেনাবাহিনীর নিপীড়নে প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে।
গতকাল মিয়ানমারের সামরিক জান্তার মুখপাত্র জেনারেল জ মিন তুন সংবাদ সম্মেলনে বলেন, সরকারে থাকা অবস্থায় অং সান সু চি বিধি বিধি বহির্ভূতভাবে স্বর্ণ এবং ৬ লাখ ডলার আত্মসাত করেছে। ইয়াঙ্গুনের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ফিয়ো মিয়েন থিয়েন এর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সেনাবাহিনী এমন অভিযোগ তোলে। এসময় তিনি বলেন, ‘আমরা কয়েকবার এসব তথ্য যাচাই করেছি। এখন দুর্নীতি বিরোধী কমিশন বিষয়টি তদন্ত করছে। ‘এছাড়া তিনি মিয়ানমারের প্রেসিডেন্ট উইন মিন্ত এবং কয়েকজন মন্ত্রী পরিষদ সদস্যও দুর্নীনিতে যুক্ত ছিলেন বলে অভিযোগ তোলেন। প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নিয়ে সেনাবাহিনীর অভিযোগ আমলে না নেয়ার জন্য নির্বাচন কমিশনকে চাপ প্রয়োগ করেন বলেও সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়।
গত নভেম্বরে মিয়ানমারে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপি হয়েছে অভিযোগ তুলে সেনাবাহিনী তাদের ক্ষমতাগ্রহণ বৈধ করার চেষ্টা করছে। যদিও নির্বাচন কমিশন সেনাবাহিনীর অভিযোগ প্রত্যাখান করেছে।
সংবাদ সম্মেলনে সেনাবাহিনীর মুখপাত্র জ মিন তুন সাময়িক সময়ের জন্য সেনাবাহিনী ক্ষমতা গ্রহণ করেছে বলে পুনর্ব্যক্ত করেন। জান্তা এর আগে এক বছরের মধ্যে পুনরায় নির্বাচন দেয়ার ঘোষণা দেয়। যদিও সেই নির্বাচন কবে অনুষ্ঠিত হবে তার কোনো দিন-তারিখ জানায়নি।