মুজিববর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী

র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী
র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এমপি। ফাইল ছবি

শতবর্ষ পেরিয়ে ১০১ বয়স দাঁড়াবে শেখ মুজিবুর রহমানের। বেঁচে থাকলে এমনটাই হতো তাঁর বয়স। গোপালগঞ্জের নিভৃত পল্লী টুঙ্গিপাড়ায় তিনি জন্ম গ্রহণ করেছিলেন ঊনিশ শত বিশ সালের সতের মার্চ। আর এই দিনটিকে উৎসাহ উদ্দীপনায় উৎযাপন করছে মুজিবের সকৃতজ্ঞ দেশবাসী আর অনুসারীরা। কারণ, তিনি মুজিব, এক সময়ের খোকা, মজিবর মিয়া, মুজিব ভাই, শেখ সাহেব, বঙ্গবন্ধু, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশবাসীকে (বাঙালি) একটি লক্ষ্যে একত্রিত করে মুক্তিসংগ্রামে উদ্বুদ্ধ করে, পরিচালিত করে, দিয়ে গেছেন একটি স্বাধীন, সার্বভৌম বাংলাদেশ, বিশ্বের বুকে বাংলা ভাষাভাষীদের একমাত্র স্বদেশ।

একদিন বলা হয়ে থাকতো যে, বাঙালিরা ব্যাঙের মতো, ঐক্যবদ্ধ মোর্চা গড়তে পারে না। “সাত কোটি বাঙালিকে হে মুগ্ধ জননী রেখেছ বাঙালি করে, মানুষ করনি(।)”, মুজিব এই ধারণা পাল্টে দিয়েছিলেন। ঊনিশ শত আটচল্লিশ থেকে ঊনিশ শত একাত্তর, এই তেইশ বছরে আন্দোলন সংগ্রাম আর মৃত্যুভয় উপেক্ষা করে আত্মনিয়ন্ত্রণ আর স্বাধিকার-স্বাধীনতার চেতনায় বাংলাদেশ ভূখন্ডের জনগোষ্ঠীকে একটি জাতীয় পরিচয় এবং রাষ্ট্রীয় পরিচয় দিতে সহযোদ্ধা তাজউদ্দিন আহমেদ, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, মনসুর আলী, কামরুজ্জামান হেনা, এম,এ আজিজ আর এক গুচ্ছ তরুণ তুর্কীদের নিয়ে গড়ে তুলেছিলেন এক দুর্ভেদ্য দুর্গ।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একান্ত সান্নিধ্যে তৎকালীন ছাত্রনেতা, যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এমপি।

ভাষা আন্দোলন, আওয়ামী লীগের অসাম্প্রদায়িকরণ, (ছাত্রলীগও এর মধ্যে অর্ন্তভুক্ত), মার্শাল’ ল বিরোধী সংগ্রাম, বাষট্টির শিক্ষা আন্দোলন, সোহরাওয়ার্দীর মুক্তি আন্দোলন, আইয়ুবের বিরুদ্ধে প্রেসিডেন্ট পদপ্রাথী দাঁড় করিয়ে গণচেতনা গড়ে তোলার সংগ্রাম, ছেষট্টির ছয়দফার আন্দোলন, আটষট্টি -ঊনসত্তরের এগার দফার আন্দোলন, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা বিরোধী আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান, সত্তরের নির্বাচন, বাঙালির (সেই সাথে এতদাঞ্চল অন্যান্য জাতি গোষ্ঠীসমূহ মিলে) সামগ্রিক রাষ্ট্রচিন্তা সুনির্দিষ্ট পথ খুঁজতে নেতৃত্ব প্রদান করেছিলেন শেখ মুজিব, বঙ্গবন্ধু, জাতির পিতা। তাঁর আহ্বানে ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে উঠেছিল, সকল প্রকার প্রাপ্ত সামগ্রী হাতিয়ার করা হয়েছিল তাঁরই নির্দেশনায়। এই হচ্ছে ইতিহাস। এর বাইরে কোন ইতিহাস নেই। ইতিহাসের এই চেতনা সমৃদ্ধ হয়ে বাঙালির রাষ্ট্র বাংলাদেশ পালন করছে মুজিব শতবর্ষ (মুজিববর্ষ)। কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ঋদ্ধ আমরা পালন করছি তাঁর শততম জন্মজয়ন্তী।

সময়ের কী আশ্চর্য হিসেব। যে জাতি রাষ্ট্র গঠনে তিনি জীবন যৌবন বাজি রেখে লড়ে গেছেন, সে জাতি রাষ্ট্র বাংলাদেশের সুবর্ণজয়ন্তীও এই রাষ্ট্রটি পালন করছে পিতার জন্ম শতবার্ষিকীর সাথে। ইতিহাসের এই পাঠ হচ্ছে বাস্তবতার পাঠ। এর ব্যতিক্রম বিভ্রান্তি বৈ আর কিছু নয়। এর ব্যতিক্রম ইতিহাসের পাঠ থেকে সরিয়ে নিয়ে কুজ্ঝটিকায় ইতিহাসকে আবৃত করার অপপ্রয়াস মাত্র।

তাই আসুন, এই রাষ্ট্রের সকলেই ইতিহাসের সঠিক পাঠ গ্রহণ করি এবং সমস্বরে আওয়াজ তুলি জয় বঙ্গবন্ধু, জয় বাংলা।

লেখক, একজন যুদ্ধাহত বীর মুুক্তিযোদ্ধা, সংসদ সদস্য এবং সম্পাদক, মত ও পথ।

শেয়ার করুন