‘স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর আয়োজনে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কোনো অবস্থান নেই’- বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সরকার জনগণকে বাদ দিয়ে এই উৎসব করছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
আজ মঙ্গলবার দুপুরে হলি ফ্যামিলি হাসপাতালে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল এই কথা বলেন। এর আগে তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন নবী খান সোহেলের শারীরিক খোঁজখবর নেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা সবসময় দেশি-বিদেশি বন্ধুদের স্বাগত জানাই। সুবর্ণজয়ন্তীতে আমরা তাদের অবশ্যই স্বাগত জানাব। কিন্তু দুর্ভাগ্য হচ্ছে, সরকার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করছে জনগণকে বাদ দিয়ে। জনগণ সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। সরকারের সুবর্ণজয়ন্তী অনুষ্ঠানগুলোতে মুক্তিযোদ্ধাদের কোনো অবস্থান নেই। এমনকি রাজনৈতিক দলগুলোর কোনো অবস্থান নেই। শুধু বিদেশি মেহমানদের নিয়ে এসে দেখানো হচ্ছে, তাদের দিয়ে বলানো হচ্ছে, এখানে (বাংলাদেশে) উন্নয়নের লহরী বয়ে যাচ্ছে।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে যোগ দিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফরের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেন বিএনপি মহাসচিব। তিনি বলেন, এখানে কি ভারতের প্রধানমন্ত্রী সুবর্ণজয়ন্তী পালন করতে আসছেন, নাকি পশ্চিম বাংলায় (পশ্চিমবঙ্গ) যে নির্বাচন হচ্ছে তার প্রচারণা চালাতে আসছেন। পশ্চিম বাংলা, ভারতের পত্রিকা ও আমাদের দেশের পত্রিকায় সেই ধরনের ইঙ্গিতই আমরা পাচ্ছি। মূলত তার এই সফরের লক্ষ্য হচ্ছে, সেই সমস্ত মন্দির তিনি পরিদর্শন করবেন যেগুলোতে তাদের অনুসারীরা রয়েছেন। তাদের পশ্চিম বাংলায় যে ভোট রয়েছে, তার জন্য তিনি চেষ্টা করছেন। এটা পত্রিকায় লেখা হচ্ছে।
বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনে ১৭ মার্চ থেকে ১০ দিনব্যাপী বিশেষ অনুষ্ঠানমালা শুরু হয়েছে। ২৬ মার্চ পর্যন্ত এ অনুষ্ঠান চলবে। অনুষ্ঠানে যোগ দিতে প্রথম বিশ্বনেতা হিসেবে ১৭ মার্চ ঢাকায় আসেন মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম মোহাম্মদ সলিহ। দ্বিতীয় বিশ্বনেতা হিসেবে ১৯ মার্চ ঢাকায় আসেন শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসে। নেপালের প্রেসিডেন্ট বিদ্যা দেবী ভান্ডারি দুদিনের সফরে ২২ মার্চ ঢাকায় আসেন। সর্বশেষ ২৩ মার্চ ঢাকায় পৌঁছান ভুটানের প্রধানমন্ত্রী লোটে শেরিং। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ২৬ মার্চ ঢাকায় আসবেন।
বিএনপির মহাসচিব অভিযোগ করে বলেন, সরকারের পক্ষে থেকে নেয়া সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠানে বিদেশি মেহমানরা আসছেন। এই কারণ দেখিয়ে আমাদের (বিএনপির) সুবর্ণজয়ন্তীর কর্মসূচিগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। মানুষের চলাচলে বাধা সৃষ্টি করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে আমাদের প্রতিবেশী তিনটি বন্ধুদেশের প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি এসে গেছেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, স্বাধীনতার ৫০ বছর হয়েছে, কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য যে, গণতান্ত্রিক অধিকারগুলো হারিয়ে ফেলেছি। মানুষের অধিকারগুলো হারিয়ে ফেলেছি। এখানে সরকার যে পরিস্থিতিতে দেশ পরিচালনা করছে, এটা কোনো মতেই গণতন্ত্রের জন্য সহায়ক নয়। আমরা চাই দেশে শান্তি থাকুক এবং বিদেশিরাও আসুক। মানুষ তার অধিকার ফিরে পাক।
- আরও পড়ুন >> রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আগুন: নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১১
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা বরাবরই বলে আসছি, ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক আরও উন্নত করতে হলে বাংলাদেশের সঙ্গে যে অভিন্ন নদীগুলো রয়েছে তার হিস্যার মীমাংসা হওয়া উচিত। সীমান্ত হত্যা বন্ধ হওয়া উচিত। এটা অমানবিক, পৃথিবীর কোনো দেশে এটা আছে কি না, জানি না। ভারতের সঙ্গে আমাদের এত বন্ধুত্বের কথা বলে সরকার। আর এটার সমাধান করতে পারে না! বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার কানেক্টিভিটিতে আমাদের কী লাভ হচ্ছে, তা জনগণের কাছে স্পষ্ট হওয়া উচিত।
মির্জা ফখরুল বলেন, ভারতের সঙ্গে পানির সমস্যার সমাধান হচ্ছে না। ফেনী নদীর পানিও তারা একতরফাভাবে নিয়ে গেছে। আমরা এখনো প্রত্যাশা করি বাংলাদেশ সরকার আমাদের দাবিগুলো সঠিকভাবে উপস্থাপন করে সমাধান করবে।
করোনা নিয়ন্ত্রণে সরকার সম্পূর্ণ ব্যর্থ
করোনাভাইরাস নিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সরকার করোনা নিয়ন্ত্রণে সম্পূর্ণ ব্যর্থ। তাদের নিয়তই ঠিক নেই। তাদের লক্ষ্য একটাই, কোথা থেকে চুরি করা যায়। সরকারের লক্ষ্য প্রত্যেকটি সেক্টর থেকে দুর্নীতি করা। ভ্যাকসিন নিয়ে অনেক কথা এসেছে, যারা এখন করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন তারা প্রত্যেকেই ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ নিয়েছেন। আমাদের অনেক নেতা করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারাও গেছেন। লকডাউনের বিষয়ে আমরা বলেছি, আলোচনা করে এই বিষয়ে সমাধানে আসা উচিত।