গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের বিস্ফোরণের সাথে জঙ্গি বা নাশকতার পরিকল্পনার কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। যদিও এটিকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করা হয়েছিল বলে জানিয়েছে পুলিশের এলিট ফোর্স র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
বৃহস্পতিবার দুপুরে উত্তরাস্থ র্যাব সদর দপ্তরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাব লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইং পরিচালক লে. কর্নেল আশিক বিল্লাহ।
তিনি বলেন, বুধবার (২৪ মার্চ) বিকেল ৪টার দিকে গোবিন্দগঞ্জের মেকুরাই নয়াপাড়া গ্রামে কাসেম মিয়ার ছেলে বোরহান উদ্দিনের বাড়িতে বিস্ফোরণের ঘটনাটি ঘটে। ঘটনার পর র্যাবের গোয়েন্দা শাখা অত্যন্ত দ্রুততার সাথে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। শুরু করে ছায়া তদন্ত। ঘটনার সাথে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে খায়রুজ্জামান নামে একজনকে আটক করা হয়।
র্যাব তদন্তে নিশ্চিত হতে পেরেছে যে, এটি কোনোভাবেই জঙ্গি হামলা ছিল না। ওই ঘটনায় মেকুরাই নয়াপাড়া গ্রামের কাসেম মিয়ার ছেলে বাড়ির মালিক বোরহান উদ্দিন, একই গ্রামের অহেদুল মিয়া ও মহিমাগঞ্জ ইউনিয়নের কুমিড়াডাঙ্গা গ্রামের তৈয়ব আলীর ছেলে রানা মিয়া নিহত হয়েছেন। একজনকে ঘটনাস্থল থেকে আটক করা হয়।
আটক খায়রুজ্জামানের জবানবন্দি ও সামগ্রিক পরিস্থিতি তুলে ধরে ঘটনা সম্পর্কে র্যাবের এ গণমাধ্যম শাখার প্রধান বলেন, কিছুদিন আগে বগুড়ার মোকামতলায় একটি বহুতল ভবন নির্মাণের কাজ চলছিল। সেখানে কেয়ারটেকার ছিলেন হাবিব। সেখানে মাটি খনন করতে গিয়ে মর্টার শেল উদ্ধার হয়। সেটি হাবিবের কাছ থেকে স্থানীয় ব্যক্তি বোরহান ও খায়রুজ্জামান সংগ্র্রহ করে এনে রোরহান উদ্দিনের বাসায় সংরক্ষণ করেন। এই প্রক্রিয়ায় মোট ৫ জন জড়িত ছিলেন।
খায়রুজ্জামান হাবিবের নিকট থেকে বোরহান উদ্দিনের সহযোগিতায় গত ২৩ মার্চ মোটরসাইকেল যোগে নিয়ে মর্টার শেলটি বোরহানের বাসায় রাখে। অহেদুল মিয়া প্রত্নতাত্ত্বিক জিনিস, স্বর্ণমুদ্রা ও ম্যাগনেট জাতীয় জিনিস বিক্রি করতেন বলে এলাকায় পরিচিতি আছে। অহেদুলই জানিয়েছিল, ওই রকেট সদৃশ বা মর্টার শেলটি মূল্যবান হতে পারে।
এদিকে নিহত রানা একটি ওয়ার্কসপে কাজ করতেন। এসব জিনিস কাটাকাটি সম্পর্কে তার জানা ছিল। বোরহান উদ্দিন, খায়রুজ্জামান ও রানা গোবিন্দগঞ্জ বাজার থেকে ধারালো সামগ্রী কিনে বোরহানের বাসায় যান। কিন্তু তাদের কারিগরি জ্ঞান না থাকলেও তারা সেটি কাটাকাটি বা ব্যবচ্ছেদের চেষ্টা করেন। এতে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন মর্টার শেলটি বিস্ফোরিত হয়। তাৎক্ষণিকভাবে তিনজন নিহত হন। হাবিব ও খায়রুজ্জামান কিছুটা দূরে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান।
সার্বিক পরিস্থিতি মূল্যায়ন করে র্যাবের তদন্তে প্রতীয়মান হয় যে, এটি জঙ্গি কোনো হামলা ছিল না। স্বল্প সময়ে অধিক মুনাফার আশায় তারা এটি করতে চেয়েছিলেন। অর্জিত মুনাফা নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেয়ার পরিকল্পনাও ছিল বলে জানিয়েছেন আটক খায়রুজ্জামান।
তিনি বলেন, খায়রুজ্জামান ওই বিস্ফোরণের ঘটনায় জড়িত থাকার বিষয়ে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন। তাকে আইনগত প্রক্রিয়ায় গোবিন্দগঞ্জ থানায় সোপর্দ করা হবে।
তিনি বলেন, বিষয়টি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করা হলেও র্যাব মূল ঘটনা স্পষ্ট করেছে। আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, গোবিন্দগঞ্জে জঙ্গি হামলা বা নাশকতার কোনো আগাম তথ্য ছিল না। আর এতে কোনো জঙ্গি সংশ্লিষ্টতাও নেই।
এক প্রশ্নের জবাবে এ র্যাব কর্মকর্তা বলেন, ওই মর্টার শেল মাটির নিচে ছিল। কোন দেশ তৈরি করেছিল, কেমন ক্ষমতাসম্পন্ন ছিল তা জানার চেষ্টা করতে ফরেনসিক পরীক্ষা করা হবে।