কথা রাখেনি হেফাজতে ইসলাম। শান্তিপূর্ণ হরতালের ডাক দিয়ে দেশের কয়েকটি জেলায় রীতিমতো তাণ্ডব চালিযেছে তারা। ব্যাপক ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। বন্ধ হয়ে গেছে কয়েকটি জেলার রেল যোগাযোগ। ভাঙচুর করা হয়েছে সংবাদমাধ্যমের গাড়িও।
এদিকে, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মতো ঘটনা বন্ধ না হলে কঠোর ব্যবস্থার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। আর তথ্যমন্ত্রী ডক্টর হাছান মাহমুদ বলেছেন, যারা একাত্তরে স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছে, তারাই এখন নৈরাজ্য সৃষ্টি করছে।
হরতালের পূর্বে সংবাদ সম্মেলনে দেয়া প্রতিশ্রুতিতে থাকেননি মাওলানা মামুনুলের সংগঠন হেফাজতে ইসলামের কিছু নেতাকর্মী। রাজধানীসহ দেশের একটি জেলায় ব্যাপক ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটায় তারা।
নারায়ণগঞ্জে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সাইনবোর্ড এলাকায় ট্রাক, বাস, প্রাইভেটকারে ভাঙচুরের সময় বাদ যায়নি গণমাধ্যমের গাড়িও।
ব্রাহ্মণবাড়িয়াতেও লক্ষ্য ছিল সাংবাদিকরা। হামলা হয় প্রেসক্লাবে। আহত করা হয় বেশ কয়েকজন সাংবাদিককে। এছাড়া জেলা পরিষদ ভবন সুর সম্রাট আলাউদ্দিন সঙ্গীতাঙ্গন, পৌরসভা, সদর উপজেলা ভূমি অফিস, সদর থানাতেও হামলার ঘটনা ঘটে। আগুন দেয়া হয়েছে রেলসেতুতেও।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পরিস্থিতি দেখে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মতো ঘটনা বন্ধ না করলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে সরকার। হরতালে জানমাল রক্ষার্থে সরকার কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
আলাদা এক ব্রিফিংয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, যারা গত কয়েকদিন ধরে আন্দোলনের নামে নৈরাজ্য করছে, তাদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য আছে।
তিনি বলেন, একাত্তর সালে যারা আমাদের স্বাধীনতার সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে পাকিস্তানকে সহযোগিতা করেছিল, আজকে যারা বাসে আগুন দিয়েছে। তাদেরকে নেতৃত্ব দিচ্ছে তারাই যারা একাত্তর সালে আমাদের মা-বোনদের নির্যাতন করেছিল, গণহত্যায় অংশগ্রহণ করেছিল তাদেরই পরবর্তী প্রজন্ম।
দেশে কয়েক লাখ কওমী মাদ্রাসা থাকলেও কিছুসংখ্যক মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা অংশ নেয় তাণ্ডবে। বেশিরভাগ মাদ্রাসার ছাত্র শিক্ষকই জড়িত হননি হেফাজতের এসব কর্মকাণ্ডে।
হেফাজতে ইসলামের ডাকা হরতাল সমর্থনে সকাল থেকে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ আশপাশের এলাকা। রোববার (২৮ মার্চ) শহরের সরকারি-বেসরকারি অর্ধশতাধিক প্রতিষ্ঠান, দু’টি মন্দির, আওয়ামী লীগ নেতাদের বাড়িসহ বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। শহরজুড়ে সর্বত্র এখন ধ্বংসযজ্ঞের চিহ্ন। পোড়া গন্ধ চারদিকে।
সকাল থেকেই বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ও আত্মরক্ষায় পুলিশ গুলি চালালে ও টিয়ার শেল ছুড়লে হতাহত হয় বলে জানা গেছে। বিকেল নাগাদ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে অন্তত ২৭ জন চিকিৎসা নিয়েছেন। সবমিলে গত তিন দিনে জেলায় নয়জনের মৃত্যু হয়েছে।
এদিকে, এসব বিষয়ে পুলিশের কোনো দায়িত্বশীল সূত্র কথা বলতে চায়নি। তবে, সদর থানায় দায়ের করা তিনটি মামলায় ১৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। কিন্তু আজকের ঘটনায় এখনো কোনো মামলা হয়নি বলে জানান জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা