গত ২৬ থেকে ২৮ মার্চ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদরে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন অফিস ও স্থাপনায় ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ করা হয়। জ্বালিয়ে দেওয়া হয় অনেক বাড়িঘর। রেলস্টেশন থেকে থানা, পুলিশ ফাঁড়ি, হিন্দুদের উপাসনালয়, ভূমি অফিস- বাদ যায়নি কিছুই। জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে সুরসম্রাট আলাউদ্দিন সঙ্গীতাঙ্গনও। হামলার টার্গেট ছিল মুক্তিযুদ্ধের চেতনাসম্পন্ন প্রতিষ্ঠানগুলোও। বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতির প্রতি ছিল তীব্র ক্ষোভ। প্রতিটি প্রতিকৃতিই খুঁচিয়ে নষ্ট করা হয়েছে। বলতে গেলে ওই তিন দিন যেন একাত্তরেরই খণ্ডচিত্র প্রত্যক্ষ করেছে জেলাবাসী। রীতিমতো ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছিল ব্রাহ্মণবাড়িয়া। প্রশ্ন একটাই-বেপরোয়া এই তাণ্ডবের নেপথ্যে কারা? শুধুই হেফাজত? নাকি ছদ্মবেশে ছিল অন্যরাও? আর এ নিয়ে ২ এপ্রিল বাংলা ট্রিবিউন প্রকাশ করেছে বিশেষ এক প্রতিবেদন। সেই প্রতিবেদনের আলোকে মত ও পথের পাঠকদের জন্য তৈরি করা হলো আজকের এই বিশেষ প্রতিবেদনটি।
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা বলছেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার তাণ্ডবের জন্য প্রধানত দায়ী হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। প্রথম দিন ২৬ মার্চ হেফাজতের নেতাকর্মীরাই তাণ্ডব চালিয়েছে। রেলস্টেশনসহ বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি, পুলিশ সুপারের কার্যালয়, সিভিল সার্জনের কার্যালয়, জেলা মৎস্য ভবনে হামলা ও ভাংচুর চালায় ওরা। পরের দুদিন হেফাজতের সঙ্গে যোগ দেয় অন্যরাও।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, ধ্বংসযজ্ঞের দ্বিতীয় দিন হেফাজতের সঙ্গে বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠন জামায়াত-শিবিরসহ স্থানীয় আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী একটি গ্রুপও ছিল। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তাদের ভাষ্য, ভিডিও ফুটেজ ও গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করে ইতোমধ্যে তাণ্ডবের মদদদাতাদের শনাক্ত করা হয়েছে। তাদের গ্রেফতারে ইতোমধ্যে অভিযান শুরু হয়েছে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, ২৬ মার্চ ঢাকা ও চট্টগ্রামে মোদিবিরোধী কর্মসূচিতে হামলার অভিযোগে বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের সিরাজিয়া মাদ্রাসার শিক্ষক ও হেফাজতে ইসলামের জেলা সাংগঠনিক সম্পাদক বোরহান উদ্দিন আল-মতিনের নেতৃত্বে প্রথম মিছিল বের হয়। একই সময় স্থানীয় বড় মাদ্রাসা জামিয়া ইসলামিয়া ইউনুছিয়ার শিক্ষক ও হেফাজতের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির ও জেলা সভাপতি মাওলানা সাজেদুল ইসলাম ও জেলা সেক্রেটারি মোবারক উল্লাহর নেতৃত্বে আরেকটি মিছিল বের হয়। স্থানীয়রা বলছেন, এই দুই মিছিল থেকেই প্রথম দফায় হামলা-ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ হয়।
স্থানীয় আরেকটি সূত্র জানিয়েছে, হেফাজতের জেলা কমিটিতে দুটি ভাগ রয়েছে। একটি পক্ষ মাওলানা সাজেদুলের অনুসারী। আরেক দল আব্দুর রহিম কাশেমীর অনুসারী। হেফাজতের মূলধারার নেতাকর্মীরা যখন বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধ করে, তখন কাশেমীর অনুসারীরা রেলস্টেশনে আগুন দেয় বলে অভিযোগ রয়েছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ঘটনার অনুসন্ধানকারী বিশেষ একটি গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারা বলছেন, দ্বিতীয় দিনের ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপে নন্দনপুর এলাকায় হেফাজতের সঙ্গে যোগ দেয় জামায়াত-শিবির ও বিএনপির অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা। প্রায় একই সময় জামিয়া ইসলামিয়া ইউনুছিয়া মাদ্রাসা এলাকায় আওয়ামী লীগের একটি মিছিলকে কেন্দ্র করেও সংঘর্ষ শুরু হয়। আর তৃতীয় দিনের হরতালকে কেন্দ্র করে হেফাজতের সঙ্গে জামায়াত-শিবির, বিএনপির নেতাকর্মীরা মিলেমিশে তাণ্ডব চালায়।
জামিয়া ইসলামিয়া ইউনুছিয়া মাদ্রাসার আশপাশের এলাকা বিএনপি অধ্যুষিত। এ কারণে আওয়ামী লীগের একটি মিছিলকে কেন্দ্র করে মাদ্রাসা ও আশপাশের মসজিদ থেকে মাইকিংও করা হয়। মিছিল ঠেকাতে একযোগে লাঠি হাতে রাস্তায় নেমে পড়তে বলা হয় সবাইকে।
গোয়েন্দা কর্মকর্তা ও স্থানীয় সূত্রগুলো বলছে, তৃতীয় দিনের হামলা ছিল পরিকল্পিত। এদিন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মুক্তবুদ্ধি চর্চা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাসম্পন্ন প্রতিষ্ঠানগুলোকে টার্গেট করে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। ভাংচুর করা হয় জেলা পরিষদ ভবন, পৌরসভা ভবন, পৌর মিলনায়তন, সদর উপজেলা ভূমি অফিস, পুলিশ লাইন, সদর থানা, খাঁটি হাতা বিশ্বরোড হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ি, শহরের কেন্দ্রীয় মন্দির শ্রী শ্রী আনন্দময়ী কালী বাড়ি, দক্ষিণ কালী বাড়ি, জেলা আওয়ামী লীগ ও সংসদ সদস্যের কার্যালয়, সরকারি গণগ্রন্থাগার, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আল-মামুন সরকারের কার্যালয়, তার নিজের বাড়ি ও শ্বশুরবাড়ি, পানি উন্নয়ন বোর্ড, শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্মৃতি পাঠাগার চত্বর ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ভবন। হামলাকারীরা সিসিটিভি ক্যামেরাও খুলে নেয়।
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর একজন কর্মকর্তা জানান, সাধারণ হেফাজতকর্মীদের মাথায় সিসিটিভি ক্যামেরা খুলে নেওয়ার বিষয়টি আসার কথা নয়। এটি জামায়াত-শিবিরের প্রশিক্ষিত কর্মীদের কাজ হতে পারে বলে তিনি মনে করেন।
গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলছেন, প্রথম দিন থেকেই হেফাজতের আন্দোলনকে বেগবান করতে অর্থ দিয়ে সহায়তা করেছেন স্থানীয় জামায়াত নেতা ডা. ফরিদ। জেলা যুবদলের সাবেক সভাপতি মনির হোসেনের ভাই ঠিকাদার মুক্তার হোসেনও অর্থ সহায়তা দিয়ে আন্দোলনকে বেগবান করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। মুক্তার এলাকায় কওমিপন্থী বলে পরিচিত।
এ প্রসঙ্গে ডা. ফরিদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ মিথ্যা। আন্দোলনের সময় নিজের চেম্বারেই ছিলেন তিনি। কাউকে কোনও টাকাও দেননি। সাবেক যুবদল সভাপতির মনির হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তার নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়।
গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলছেন, তিন দিনের তাণ্ডবে হেফাজতের সঙ্গে পুরো উদ্যমে মাঠে ছিল বিএনপি-জামায়াত। জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক দেলোয়ার হোসেন দীলিপ ছাত্রদল নেতা পিয়াসের মাধ্যমে লোকজন সংগ্রহ করে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করে। এ ছাড়া রেলকলোনির বস্তি থেকে লোকজন এনে শহরে ভাংচুর চালিয়েছে পৌর ছাত্রদলের সাবেক আহ্বায়ক সাইদ হাসান সানী।
সানীকে ইতোমধ্যে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এর বাইরে জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম সিরাজও বিএনপি নেতাকর্মীদের সংগঠিত করে হেফাজতের সঙ্গে ভাংচুর চালিয়েছেন বলে ওই কর্মকর্তা জানান।
এদিকে মত ও পথের কাছে প্রাপ্ত ডকুমেন্টে দেখা যায়, সেদিন রেলকলোনির বস্তি থেকে লোকজন এনে শহরে ভাংচুর চালায় পৌর ছাত্রদলের যুগ্ম-আহ্বায়ক নাজমুল হুদা সানী। কিন্তু তাকে গ্রেফতার না করে, গ্রেফতার করা হয়েছে ২৮ মার্চের তাণ্ডবে নিজের সর্বস্ব হারানো পৌর ছাত্রদলের সাবেক আহ্বায়ক সাইদ হাসান সানীকে। এখােনে উল্লেখ্য যে, হরতালের দিন দুর্বৃত্তরা আগুনে পুড়িযে দেয় সাইদ হাসান সানীর পল্টি মুরগির দোকানসহ বেশ কয়েকটি দোকান।
এ ছাড়া কয়েকটি ভিডিওতে স্থানীয় বিএনপি নেতা মাহফুজুর রহমান পুষ্পকে মিছিলের নেতৃত্ব দিতে দেখা গেছে। রাজঘর এলাকায় বিএনপির নেতাকর্মীরা লাঠি হাতে মিছিল বের করে।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক দেলোয়ার হোসেন দিলীপ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ মিথ্যা। ওই তিন দিন আমাদের কোনও নেতাকর্মী মাঠে ছিল না। আমরা কেউ ঘর থেকে বের হইনি। রাজনৈতিক প্রতিহিংসা থেকে অভিযোগ দেওয়া হচ্ছে।
জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম সিরাজ বলেন, এগুলো মিথ্যে কথা। হেফাজতের কার্যক্রমে আমাদের যোগসূত্র নেই।
গোয়েন্দা পুলিশের এক কর্মকর্তা বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, হেফাজত, বিএনপি-জামায়াতের সঙ্গে আওয়ামী লীগের একটি বিদ্রোহী অংশও মাঠে ছিল বলে তারা তথ্য পেয়েছেন। আওয়ামী লীগের এ অংশ পৌর নির্বাচনে পরাজিত প্রার্থী ও জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি মাহমুদুল হকের অনুসারী। হাজী মাহমুদুল হক তার চাচা রতনের মাধ্যমে এ তাণ্ডবে অর্থ সহযোগিতা করেছেন বলে অভিযোগ পেয়েছেন। তবে মাহমুদুল হক শুক্রবার সকালে জেলা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ মিথ্যা দাবি করেন।
তিনি সাংবাদিকদের বলেন, হেফাজতের তাণ্ডব ঠেকাতে ব্যর্থ হয়ে জেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের কেউ কেউ তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করছেন। হেফাজতের সঙ্গে বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীরাই ছিল বলে মন্তব্য করেন তিনি।
বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতির প্রতি ক্ষোভ
স্থানীয় লোকজন বলছেন, হামলাকারীরা এই দেশ ও মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী গোষ্ঠী। তাদের কর্মকাণ্ড দেখলেই তা বোঝা যায়। তারা রাষ্ট্রীয় সম্পদ ধ্বংসের পাশাপাশি বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি, ছবি, ব্যানার সবকিছুতেই আগুন দিয়েছে।
স্থানীয় সংস্কৃতিকর্মী মনির হোসেন বলেন, এর আগেও গত ১ ডিসেম্বর বঙ্গবন্ধুর সকল প্রতিকৃতি নষ্ট করার চেষ্টা করেছিল দুষ্কৃতিকারীরা। এবারও তাণ্ডবকারীদের বেশি ক্ষোভ দেখা গেছে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতির ওপর। যেখানেই বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল দেখেছে, সেখানেই হামলা চালিয়েছে। রেলস্টেনে বঙ্গবন্ধুর ছবির একটি প্রদর্শনী চলছিল, সেখানেও আগুন দিয়েছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সরেজমিনে দেখা গেছে, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি-বিজড়িত স্থাপনার পাশাপাশি বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি ও ম্যুরালের প্রতিও প্রচণ্ড ক্ষোভ ছিল তাণ্ডবকারীদের। বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল দেখামাত্রই তারা খুঁচিয়ে বিকৃত করার চেষ্টা করেছে। জেলার জাতীয় বীর আব্দুল কুদ্দুস মাখন পৌর মঞ্চে স্থাপিত বঙ্গবন্ধুর দুটি ম্যুরাল, ব্যাংক এশিয়ার সামনে ও বিপরীতে দুটি, কাউখালীতে একটি ও পৌর আধুনিক সুপার মার্কেটের সামনে থাকা একটি ম্যুরালকে খুঁচিয়ে বিকৃত করা হয়েছে।
জানতে চাইলে হেফাজতের জেলা শাখার সভাপতি মাওলানা সাজেদুর রহমান বলেন, আমরাও তাণ্ডবের নিরপেক্ষ তদন্ত চাই। হামলা-ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের অনেক ভিডিও ফুটেজ রয়েছে। সেসব দেখে দোষীদের শনাক্ত করার দাবি আমরাও জানিয়েছি।
তবে তিনি এ-ও বলেন, প্রথম দিন হাটহাজারীতে চারজন মারা যাওয়ার খবরের পর যে যেখানে ছিল সেখান থেকেই রাস্তায় নেমেছে। তখন কাউকে নিয়ন্ত্রণ করার উপায়ও ছিল না। এসময় অন্য কোনও পক্ষ সুযোগ নিয়েছে বলে তিনি মনে করেন।
হেফাজতের নিজেদের দুই গ্রুপের প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সাজেদুর রহমান বলেন, আমরা নিশ্চিত নই। তবে আরেকটি গ্রুপ আমাদের বিপদে ফেলার জন্য এসব করতে পারে। সবকিছুই তদন্ত হলে বেরিয়ে আসবে।
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে ব্যর্থ ভাবছে অনেকে
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় তিন দিনের নারকীয় তাণ্ডবকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যর্থতা হিসেবেই দেখছেন অনেকে। স্থানীয়রা বলছেন, প্রথম দিনের পরও পর্যাপ্ত আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন ছিল না জেলা শহরে। এমনকি হরতালের দিন সকাল দশটা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত শহরে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কোনও সদস্যকেও দেখা যায়নি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় লোকজন বলছেন, সহিংসতার আগাম গোয়েন্দা-তথ্যও সংগ্রহ করতে পারেনি জেলা পুলিশ। এমনকি খোদ সদর থানা থেকে মাইকে ‘হামলাকারীদের কিছু করা হবে না’ শর্তে থানায় হামলা না চালানোর অনুরোধ করা হয়।
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর স্থানীয় এক কর্মকর্তা বলেন, প্রথম দিন যেভাবে সহিংসতা হয়েছে সেই হিসেবে আশপাশের জেলা থেকে আরও ফোর্স মোতায়েন করা উচিত ছিল। বিক্ষোভকারীদের তুলনায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য কম। আত্মরক্ষার কৌশল হিসেবে তাই হরতালের দিন বাহিনীর সদস্যরা নির্দিষ্ট এলাকায় ছিল।
ব্যর্থতা যাচাই করতে পুলিশ সদর দফতর থেকে ইতোমধ্যে একাধিক কমিটি গঠন করা হয়েছে। বিষয়টি তারা খতিয়ে দেখছেন।
- আরও পড়ুন >> সোমবার থেকে সারাদেশ এক সপ্তাহের জন্য লকডাউন
গত সোমবার (২৯ মার্চ) এ ব্যাপারে পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি আনোয়ার হোসেন বিভিন্ন ক্ষতিগ্রস্ত স্থাপনা পরিদর্শন শেষে বলেন, হামলার সময় বেশ কিছু ভিডিও ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম-ফেসবুক ও গণমাধ্যমে প্রচার হয়েছে। পুলিশও ভিডিও করেছে। সব ধরনের ফুটেজ সংগ্রহ করা হচ্ছে। ভিডিও ফুটেজের ভিত্তিতে পরবর্তী আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে পুলিশের ডিআইজি বলেন, কোনও দল বা বিশেষ গোষ্ঠীকে টার্গেট করে তদন্ত করা হবে না। তথ্য উপাত্তের ভিত্তিতে যাদের নাম উঠে আসবে, তাদের সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর স্থানীয় কর্মকর্তারা বলছেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ঘটনায় মোট ১৯টি মামলা দায়ের হয়েছে। ১০৭ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা ২২ হাজার জনকে আসামি করা হয়েছে। বিভিন্ন মামলায় মোট ৩২ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
গত বৃহস্পতিবার (১ এপ্রিল) ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিভিন্ন ক্ষতিগ্রস্ত স্থাপনা পরিদর্শন শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ প্রধান ড. বেনজীর আহমেদ বলেছেন, দেশ ও রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে যারা রাষ্ট্রীয় সম্পদ বিনষ্ট করেছে তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমাদের কাছে ছবি ও ভিডিও আছে। সবাইকে চিহ্নিত করা হচ্ছে। প্রত্যেককে আইনের আওতায় আনা হবে।