কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার মীরপুর গ্রামে বাবা-মায়ের কবরের পাশে চির নিদ্রায় শায়িত হলেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নবনির্বাচিত সভাপতি ও সাবেক আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আবদুল মতিন খসরু।
রাজধানী ও কুমিল্লায় ৫ দফা জানাজা ও সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা জানানো শেষে বৃহস্পতিবার বাদ আসর তার দাফন সম্পন্ন হয়।
যে সংসদীয় আসন (বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়া) থেকে তিনি পাঁচবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন সেই এলাকার সবার প্রিয় মতিন খসরুর নিথর দেহ এলো সাদা কাফনে মোড়ানো কফিনে। করোনার স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করে জানাজায় অংশ নিতে ও কফিনে শ্রদ্ধা জানাতে সমবেত হয় বিভিন্ন শ্রেণি পেশার হাজার হাজার লোক।
এর আগে বৃহস্পতিবার সকালে পুরান ঢাকার বকশীবাজার আলীয়া মাদারাসা মাঠে প্রথম এবং বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।
বাদ জোহর কুমিল্লার বুড়িচং আনন্দ পাইলট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে তৃতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন কুমিল্লা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান, পুলিশ সুপার মো. ফারুক আহমেদ, জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান সাজ্জাদ হোসেন স্বপন, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শওকত মাহমুদ, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট আবুল হাসেম খান, সাধারণ সম্পাদক উপজেলা চেয়ারম্যান মো. আখলাক হায়দার, মরহুমের ছোট ভাই অ্যাডভোকেট আবদুল মুমিন ফেরদৌস, মরহুমের ছেলে আবদুল মুমিন ওয়াছিফ, সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট রেজাউল করিম খোকনসহ আরও অনেকে।
জানাজা শেষে জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন, আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের পক্ষ থেকে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়।
পরে চতুর্থ জানাজা বিকেল ৪টায় ব্রাহ্মণপাড়া ভগবান সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে এবং পঞ্চম জানাজা বাদ আসর মরহুমের নিজ গ্রামের বাড়ি ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার মিরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে অনুষ্ঠিত হয়। পরে রাষ্ট্রিয় মর্যাদায় পারিবারিক কবরস্থানে বাবা মায়ের কবরের পাশে দাফন করা হয়েছে।
১৪ এপ্রিল বুধবার বিকেল ৪টা ৫০ মিনিটে রাজধানীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) করোনায় আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান আবদুল মতিন খসরু। তার বয়স হয়েছিল ৭১ বছর। ব্যক্তি জীবনে তিনি স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়েসহ অনেক আত্মীয়স্বজন ও গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
মতিন খসরু কুমিল্লা-৫ (বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়া) সংসদীয় আসনে ১৯৯১-১৯৯৬, ১৯৯৬-২০০১, ২০০৯-২০১৪, ২০১৪-২০১৮ ও ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়লাভ করেন। ১৯৯৬-২০০১ সাল পর্যন্ত শেখ হাসিনা সরকারের আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন আব্দুল মতিন খসরু।
তিনি আইনমন্ত্রী থাকাকালে ১৯৯৬ সালে সংবিধান ও মানবতাবিরোধী কালো আইন ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিল করে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্মম হত্যাকাণ্ডের বিচারের ব্যবস্থা করেন। যার ধারাবাহিকতায় পরবর্তীকালে সুষ্ঠু বিচারের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের আত্মস্বীকৃত খুনিদের ফাঁসির আদেশ কার্যকর করা হয়।