মতিঝিলের শাপলা চত্বরে ২০১৩ সালের ৫ মে হেফাজতের কর্মসূচির ঠিক এক সপ্তাহ আগে খালেদা জিয়ার সঙ্গে বৈঠক করেন জুনায়েদ বাবুনগরী। বিএনপির পক্ষ থেকে ওই আন্দোলনে অর্থ সহায়তাও পাওয়া যায়। পাশাপাশি জামায়াতের নেতা-কর্মীরা সরাসরি হেফাজতের কর্মসূচীতে ঢুকে জ্বালাও পোড়াও করে সরকারের পতন ঘটাতে চেয়েছিল।
আদালতে দেওয়া ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এমন কথা বলেছেন হেফাজত ইসলামের ঢাকা মহানগর কমিটির তৎকালীন প্রচার সম্পাদক মুফতি ফখরুল ইসলাম। তিনি বর্তমানে বাংলাদেশ জনসেবা আন্দোলনের চেয়ারম্যান। গত সোমবার মুখ্য মহানগর হাকিম দেবদাস চন্দ্র অধিকারীর আদালতে তিনি এই স্বীকারোক্তি দেন। এতে ওই সময়ে বেশ কিছু চিত্র উঠে এসেছে।
গোয়েন্দাদের জিজ্ঞাসাবাদে মামুনুল হক বলেছেন, ২০১৩ সালে বিএনপির পেছনে থেকে ইসলামী রাষ্ট্র কায়েমের স্বপ্ন দেখতেন তারা। এখন তিনি মনে করেন, হেফাজতই সামনে থেকে নেতৃত্ব দেবে আর বিএনপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলে তাদের পেছনে থাকবে। এমনকি রিমান্ডে নেওয়ার পরও মামুনুল হক মনে করতেন, তার দলের নেতাকর্মীরা ডিবি অফিসে হামলা চালিয়ে তাকে ছাড়িয়ে নিয়ে যাবে। তবে দলের আমীর বাবুনগরীর বক্তব্য তাকে দেখানোর পর তিনি হতাশ হয়েছেন। এমনকি দলের মহাসচিব মাওলানা নুরুল ইসলাম স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাসায় যাওয়াতেও হতাশ মামুনুল। প্রথম দিকে হম্বিতম্বি করলেও এখন অনেকটাই থেমে গেছেন। গত ২৬ মার্চ আন্দোলনের মাধ্যমে সরকার পতনের চেষ্টার কথাও তিনি জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন।
এদিকে আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে মুফতি ফখরুল বলেছেন, ২০১৩ সালের ৫ মে’র সেই সহিংসতায় তৎকালীন বিএনপি ও জামায়াতের একাধিক শীর্ষ নেতা অর্থ সহায়তা দিয়েছিলেন। সহিংসতায় অংশ নিয়েছিলেন বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীরাও। গত ১৪ এপ্রিল লালবাগ এলাকা থেকে মুফতি ফখরুলকে গ্রেফতারের পর পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেয় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। রিমান্ড শেষে সোমবার তিনি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। এরপর আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন।
মুফতি ফখরুল বলেছেন, ‘২০১৩ সালের ৫ মে আমি কামরাঙ্গীরচর মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষক ও এলাকার ৮/১০ হাজার হেফাজত কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে লালবাগ-চকবাজার হয়ে নয়াবাজারে আসি। জোহরের নামাজ পর্যন্ত আমরা ৮/১০ হাজার লোকসহ এখানেই ছিলাম। জোহরের নামাজ আদায়ের পর দুপুর ২টার দিকে হেফাজতে ইসলামের তৎকালীন কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মুফতি ফয়জুল্লাহ সাহেব ফোন দিয়ে সবাইকে নিয়ে শাপলা চত্বরে যাওয়ার জন্য বলে। শাপলা চত্বরে যাওয়ার সময় গোলাপশাহ মাজারের (গুলিস্থান) সামনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তাদের বাধা দেয়।
এসময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে তাদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। তারা সেখানে ছত্রভঙ্গ হয়ে ব্যাপক ভাঙচুর করে। দুপুর ৩টার দিকে তার নেতৃত্বে ৫/৭ হাজার লোক নিয়ে তিনি শাপলা চত্বরে পৌঁছান। সেখানে মাওলানা মাঈনুদ্দীন রুহী তাকে বলেছেন, আন্দোলন ও সহিংসতার বিষয়ে দু’জন বিএনপি নেতা এবং একজন জামায়াত নেতা তাদের অর্থ সহযোগীতা করছে। এছাড়া ওই বছরের ২৮ এপ্রিল বাবুনগরীর সঙ্গে খালেদা জিয়ার গোপন বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে হেফাজতের প্রোগ্রাম শাপলা চত্বরে স্থায়ী হলে বিএনপি ও জামায়াতও যোগ দেবে বলে আলোচনা হয়েছে। ওই দিন দুপুর থেকেই বিএনপি-জাময়াতের কর্মীরা রাস্তায় বাধা সৃষ্টি ও আগুন দেওয়া শুরু করে।’
গোয়েন্দা পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানান, ২০১৩ সাল থেকেই জুনায়েদ বাবুনগরী বিএনপি-জামায়াত ঘেঁষা হিসেবে পরিচিত ছিলেন। আহমদ শফীর জন্য আগে তেমন সুবিধা করতে পারেননি। তার মৃত্যুর পর বাবুনগরীর আমীর নির্বাচিত হলে হেফাজত পুরোপুরি ‘অ্যান্টি গর্ভনমেন্ট অ্যাক্টিভিটিজ’ শুরু করেছে। এরই ফলশ্রুতিতে গত বছরের শেষের দিকে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য স্থাপন নিয়ে বিরোধিতা শুরু করে চলতি বছরে মোদীবিরোধী আন্দোলনের নামে সহিংসতা শুরু করে।
অপরদিকে ঢাকা মহানগর হেফাজতের সহ-সভাপতি ও বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা কোরবান আলীকে গ্রেফতার করেছে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী। মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে রাজধানীর বাসাবোর বাসা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। তার ছেলে ওবায়দুল্লাহ বলেন, ‘ডিবি পুলিশের পরিচয়ে আমার আব্বা মাওলানা কোরবান আলীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার তাকে গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।