অর্থপাচার মামলায় সাহেদকে জামিন দেয়নি হাইকোর্ট

নিজস্ব প্রতিবেদক

রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান মো. সাহেদ
রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান মো. সাহেদ। ফাইল ছবি

অর্থপাচারের দায়ে করা মামলায় রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাহেদের জামিন আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন হাইকোর্ট।

সোমবার বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সরদার মো. রাশেদ জাহাঙ্গীরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ জামিন আবেদনের শুনানি নিয়ে এই আদেশ দেন।

আদালতে সাহেদের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী ফজলুর রহমান। দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী খুরশিদ আলম খান।

গত বছরের ২৫ আগস্ট সাহেদ ও পারভেজের বিরুদ্ধে রাজধানীর উত্তরা পশ্চিম থানায় অর্থপাচারের অভিযোগে মামলা করেন সিআইডির পরিদর্শক ইব্রাহীম হোসেন। মামলায় সাহেদ ও পারভেজের বিরুদ্ধে ১১ কোটি ২ লাখ ২৭ হাজার ৮৯৭ টাকা অর্থপাচারের অভিযোগ আনা হয়েছে।

সিআইডি জানায়, সাহেদ ও তার স্বার্থসংশ্লিষ্ট ৪৩টি ব্যাংক হিসাবে জমা ছিল ৯১ কোটি ৭০ লাখ টাকা। এর মধ্যে তিনি তুলে নেন ৯০ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। ঋণের ৮০ লাখ টাকাসহ এ মুহূর্তে তার ব্যাংক হিসাবগুলোয় জমা আছে ২ কোটি ৪ লাখ টাকার মতো।

সিআইডির অনুসন্ধানে দেখা গেছে, এই অর্থের উৎস প্রতারণা ও জালিয়াতি। প্রতারণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে অর্জিত টাকা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবে লেনদেনের মাধ্যমে রূপান্তর এবং ভোগবিলাসে ব্যয় করার অপরাধে সিআইডির সংঘবদ্ধ অপরাধ দমন বিভাগ সাহেদের বিরুদ্ধে বাদী হয়ে মামলাটি করে।

জালিয়াতি করে উপার্জিত টাকা লেনদেনের সুবিধার জন্যই সাহেদ রিজেন্ট হাসপাতাল, রিজেন্ট কেসিএস লিমিটেড ও অন্যান্য অস্তিত্ববিহীন ১২টি প্রতিষ্ঠানের নামে ৪৩টি ব্যাংক হিসাব পরিচালনা করছিলেন। ব্যাংক হিসাবগুলো খোলার সময় তিনি কেওয়াইসি (গ্রাহকের তথ্যসংবলিত ফরম) ফরমে প্রতিষ্ঠানগুলোর চেয়ারম্যান বা স্বত্বাধিকারী হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন।

এই ব্যাংক হিসাবগুলো পরিচালনা করতেন রিজেন্ট গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসুদ পারভেজ। গত কয়েক বছরে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা থেকে এসব হিসাবে টাকা জমা পড়েছে। অভিযুক্ত মাসুদ পারভেজের ১৫টি ব্যাংক হিসাবে ৩ কোটি ৯৮ লাখ টাকা ছিল। এখন তাঁর হিসাবে আছে ৫ হাজার টাকা।

করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে চিকিৎসার নামে প্রতারণা এবং পরীক্ষার নামে জালিয়াতির অভিযোগে গতবছর জুলাই মাসে রিজেন্ট হাসপাতাল বন্ধ করে দেয় র‌্যাব। ওই হাসপাতালের চেয়ারম্যান সাহেদের নানা দুর্নীতির তথ্য বেরিয়ে আসতে থাকে এরপর।

সাহেদের খোঁজে অনুসন্ধানের মধ্যেই ওই বছর ১৪ জুলাই গাজীপুরের কাপাসিয়া থানা এলাকার বরুণ বাজার থেকে মাসুদ পারভেজকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। পরদিন ভোরে সাতক্ষীরার দেবহাটা সীমান্ত থেকে সাহেদকেও ধরে আনার কথা জানায় র‌্যাব।

সাহেদকে ঢাকায় আনার পর উত্তরা ১১ নম্বর সেক্টরের ২০ নম্বর সড়কের ৬২ নম্বর বাড়ির একটি ফ্ল্যাটে তার একটি অফিসে অভিযান চালানো হয়। সেখানে প্রায় এক লাখ ৪৬ হাজার টাকার জাল নোট পাওয়া যায় বলে সে সময় র‌্যাবের পক্ষ থেকে জানানো হয়।

ওই ঘটনায় র‍্যাব-১ কর্মকর্তা মজিবুর রহমান বাদী হয়ে উত্তরা পশ্চিম থানায় সাহেদ ও মাসুদ পারভেজের বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনে এই মামলা করেন।

তদন্ত শেষে উত্তরা পশ্চিম থানার এসআই মোহাম্মদ জাকির হোসেন গত বছরের ১ নভেম্বর দুই আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ঢাকার অতিরিক্ত তৃতীয় মহানগর দায়রা জজ রবিউল আলম আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন।

অবৈধ অস্ত্র রাখার দায়ে ঢাকার একটি মামলায় গতবছর সাহেদকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত। সাতক্ষীরায় অস্ত্র আইনের আরেকটি মামলায় তার বিচার চলছে। এছাড়া বিভিন্ন সময়ে সাহেদের প্রতারণা-জালিয়াতিতে ভুক্তিভোগিরাও কয়েক ডজন মামলা করছেন তার বিরুদ্ধে।

শেয়ার করুন