চিত্রনায়িকা পরীমনির ক্লাবকেন্দ্রীক সাম্প্রতিক কিছু কর্মকাণ্ডে তাকে একহাত নিয়েছেন বিশিষ্ট চিত্রনাট্যকার ও চলচ্চিত্র নির্মাতা দেলোয়ার জাহান ঝন্টু। সম্প্রতি এফডিসি চত্ত্বরে দাঁড়িয়ে একটি অনলাইন টিভিকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি পরীমনির গভীর রাতে ক্লাবে গিয়ে মদ খাওয়া ও ক্লাবে ভাঙচুরের ঘটনার তীব্র সমালোচনা করেন। বলেন, ‘পরীমনির সঙ্গে যা ঘটেছে, সেটা ওর প্রাপ্য ছিল। যেমন কর্ম, তেমন ফল। এখন কান্দে আর বলে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চাই।’
পরীমনিকে উদ্দেশ্য করে ঝন্টুর প্রশ্ন, ‘ও প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কেন চাইবে? প্রধানমন্ত্রীর কি খেয়েদেয়ে আর কোনো কাজ নেই? তিনি কি আমাদের এগুলো নিয়ে বসে থাকবেন! এখন আমরা মিডিয়াতে প্রায়ই দেখি, কারো কোনো সমস্যা হলেই প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন, প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিচার চান। প্রধানমন্ত্রী কি আমাদের বিচার করার জন্য আসছেন, নাকি দেশ চালানোর জন্য আসছেন? তিনি কী করবেন একা?’
গভীর রাতে পরীমনির ক্লাবে যাওয়া ও মদ খাওয়া প্রসঙ্গে নির্মাতা বলেন, ‘মদ খায় কেন একটা মেয়ে? বয়স কত? ২৫ বছরও তো হয় নাই! ওর পক্ষে কথা বলার মুখই তো আমাদের নাই। আমি যে ওর পক্ষে কথা বলব, কেউ যদি আমাকে প্রশ্ন করে যে, রাত ১২টার সময় মদ খেতে ক্লাবে যায় কেন আপনাদের মেয়ে, ক্লাবে গিয়ে নাচানাচি আর ভাঙচুর করে কেন? এটার উত্তর আমি কী দেব? এর উত্তর তো আমার কাছে নাই। উত্তর একটাই, স্যরি।’
পুরোনো জনপ্রিয় নায়িকাদের উদাহরণ টেনে ঝন্টু বলেন, ‘আমাদের দেশে পরীমনির চেয়েও অনেক ভালো নায়িকা শাবানা, ববিতাসহ আরও যারা ছিল, তারা কি কখনো ড্রিংকস করেছে? রাত ১২টার সময় ক্লাবে গেছে? তাহলে পরীমনি যায় কেন?’ এ প্রজন্মের মাহিয়া মাহি ও শবনম বুবলীদের নাম উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এদের সম্পর্কে তো কিছু শুনি না। পরীমনির নামে এতকিছু শুনি কেন? দোষটা কার? আমি তো বলব, ও দোষ না করলেও দোষ ওরই।’
তিনি বলেন, ‘মিডিয়ার মানুষদের এমনিতেই বেশিরভাগ মানুষ পছন্দ করেন না। অন্য চোখে দেখেন। সেসব মানুষদের ভাবনাটাকে আমাদের মেনে নিতে হবে। তার মধ্যে পরীমনির বিষয়ে যা শুনতেছি, সেসব বিষয়ে প্রশ্ন করলে আমরা লজ্জা পাই। সে গভীর রাতে ক্লাবে গিয়ে নাচানাচি করে, মদ খেয়ে পড়ে থাকে। এটা আমাদের কাছে লজ্জার ব্যাপার। ওর সম্পর্কে অনেক কথা বলতে পারি, কিন্তু বলব না। কারণ সেটা আমাদের ঘাড়েই পড়বে, আমাদের মেয়ে।’
পরীমনির সঙ্গে তিনি কখনো কাজ করবেন না উল্লেখ করে ঝন্টু বলেন, ‘পরীমনিকে নিয়ে ছবি করার অনেক শখ ছিল। মেয়েটা দেখতে সুন্দর, ফিগার ভালো। কিন্তু এখন যদি কোনো প্রযোজক পরীমনিকে নিয়ে ছবি করতে বলে আমি বলব, না, ওর কাছে যাবো না। ওর ইমেজ শেষ। ওকে দেখে আর কেউ টিকিট কাটবে না। ওর অনেক কিছু জেনে গেছে, অনেক কিছু দেখে ফেলেছে মানুষ। কত নোংরা নোংরা ছবি ফেসবুকে আসতেছে। এগুলোর পর ওর ইমেজ আর আছে নাকি?’
বহু সফল ছবির এই চিত্রনাট্যকার আরও বলেন, ‘নায়িকাদের দর্শক স্বপ্নের নায়িকা মনে করে। কিন্তু স্বপ্নের নায়িকার সবকিছু যদি ফেসবুকেই দেখা যায়, তাহলে তো স্বপ্নটা শেষ। স্বপ্নের ঘুম ভেঙে গেছে। তাই, যে নায়িকা চলচ্চিত্রকে প্রাধান্য দেয় না, সে অন্যখানে প্রধান্য দিচ্ছে ডেফিনেটলি।’ চলচ্চিত্রটাকে পরীমনি একটা সাইনবোর্ড হিসেবে ব্যবহার করে বলেও মন্তব্য করেন দেলোয়ার জাহান ঝন্টু।
গত ১৩ জুন রাতে পরীমনি বনানীতে তার নিজ বাসায় সংবাদ সম্মেলন করে জানান, গত ৯ জুন রাতে সাভারের বোট ক্লাবে তিনি মারধর ও যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। নায়িকা অভিযোগ করেন নাসির উদ্দিন মাহমুদ ও তুহিন সিদ্দিকী অমি নামে দুই ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে। পরদিন এই দুজনসহ আরও চারজনকে অজ্ঞাত আসামি করে তিনি সাভার মডেল থানায় মামলা করেন। সে দিনই ডিবি পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন নাসির ও অমিসহ পাঁচজন।
পরীমনি মামলার এজাহারে উল্লেখ করেন, ব্যবসায়ী নাসির তাকে মারধর ও যৌন হেনস্তা করেন। এছাড়া তাকে মুখ চেপে ধরে জোর করে মদ খাইয়ে দেন। কিন্তু সম্প্রতি বোট ক্লাবের ওই রাতের কিছু মুহূর্তের ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়। সেখানে দেখা যায়, পরীমনি তার সঙ্গীদের সঙ্গে চেয়ারে বসে স্বভাবিকভাবেই মদ্যপান করছেন। ব্যবসায়ী নাসির মদ্যপান করতে নিষেধ করায় তাকে ধমকও দিচ্ছেন। একপর্যায়ে গ্লাসও ছুড়ে মারেন।
বোট ক্লাব বিতর্ক চলাকালীন গুলশানের অল কমিউনিটি ক্লাব কর্তৃপক্ষ সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেন, গত ৮ জুন রাতে পরীমনি তাদের ক্লাবে জোরপূর্বক ঢুকে ভাঙচুর চালান। পরে ৯৯৯-এ কল দিয়ে পুলিশ ডেকে ক্লাবের কর্মীদের বিরুদ্ধেই হেনস্তার অভিযোগ তোলেন। সেই ঘটনার ভিডিও ফুটেজও ইতোমধ্যে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে। এছাড়া বনানীর একটি ক্লাবেও পরীমনি ভাঙচুর করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।