করোনার অতি উচ্চ ঝুঁকিতে ৫৯ জেলা

নিজস্ব প্রতিবেদক

করোনার উচ্চ ঝুঁকি

গত কয়েক দিন ধরে দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ও মৃত্যু লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। একদিনে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড গড়েছে শুক্রবার। শনিবার মৃত্যুর সংখ্যা কিছুটা কমলেও সংক্রমণের হার বেড়েছে। মাঝে সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে সংক্রমণ বেশি থাকলেও এখন ছড়িয়ে পড়েছে সারাদেশে। ফলে প্রায় সবগুলো জেলা হয়ে ওঠেছে ঝুঁকিপূর্ণ। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সেন্টার ফর রিসার্চ, ইনোভেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অ্যাকশন (সিআরআইডিএ) জানিয়েছে, দেশে মোট ৬৪ জেলার ৫৯টিই অতি উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে। আর পাঁচটি জেলা আছে উচ্চ ঝুঁকিতে।

প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. শাহরিয়ার রোজেন বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মেথডোলজি ব্যবহার করে সাত দিনের গড় শনাক্তের হারকে সূচক হিসেবে ব্যবহার করে তথ্যচিত্রটি প্রস্তুত করা হয়েছে বলে জানান ডা. রোজেন।

এর আগে ১৪ থেকে ২০ জুনের করোনার তথ্য বিশ্লেষণ করে দেশের ৪০ জেলা অতি উচ্চ ঝুঁকিতে আছে বলে জানায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। তবে সিআরআইডিএ বলছে, ২০ জুনের পর সংক্রমণের মাত্রা আরও অনেক বেড়ে গেছে। ফলে উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ জেলার সংখ্যাও বেড়েছে।

সংগঠনটির তথ্যমতে, ২০ জুনের পর সংক্রমণের মাত্রা আরও অনেক বেড়ে গেছে। সর্বশেষ তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করে (১৮-২৪ জুন) দেখা যায়, দেশের ৫৯টি জেলা অতি উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে (সাপ্তাহিক শনাক্তের হার ১০ শতাংশের বেশি)। এর মধ্যে ৩৯টি জেলায় সংক্রমণের হার ভয়াবহ পর্যায়ের (সাপ্তাহিক শনাক্তের হার ২০ শতাংশের বেশি)।

প্রতিষ্ঠানটি জানায়, মাত্র সাত দিনের ব্যবধানে মৃত্যুহার বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। জুনের ১৮ তারিখে দৈনিক মৃত্যু ছিল ৫৪, যা সাত দিনের ব্যবধানে বেড়ে ১০৮ হয়েছে।

এর আগে গত ২১ জুন বাংলাদেশের সংক্রমণ পরিস্থিতি নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। ১৪ থেকে ২০ জুন এই এক সপ্তাহের নমুনা পরীক্ষা ও রোগী শনাক্তের হার বিবেচনায় তারা জানিয়েছিল, ৬৪টি জেলার মধ্যে ৪০টিই সংক্রমণের অতি উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে। এর বাইরে আরও ১৫টি জেলা আছে সংক্রমণের উচ্চ ঝুঁকিতে। সংক্রমণের মধ্যম ঝুঁকিতে আছে আটটি জেলা। বান্দরবানে নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা কম হওয়ায় সেটি বিবেচনায় আনা হয়নি।

করোনার উচ্চ ঝুঁকিতে থাকা জেলাগুলো হলো- পাবনা, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, রাঙামাটি। আর বাকি জেলাগুলো অতি উচ্চ ঝুঁকিতে।

করোনার থাবা থেকে রক্ষা পেতে বেশ কিছু পরামর্শও দিয়েছে সংগঠনটি।

সংক্রমণ বাড়ার কারণ জানিয়ে সিআরআইডিএ বলছে, ভারতের ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের প্রভাবে বাংলাদেশে সংক্রমণ হঠাৎ করে বেড়ে গেছে। বিপজ্জনক ভ্যারিয়েন্টগুলোর মধ্যে ভারতের ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টটিই সবচেয়ে বেশি সংক্রামক। ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট অধিক সংক্রমণক্ষম যুক্তরাজ্যের ভ্যারিয়েন্ট থেকেও কমপক্ষে ৪০ শতাংশ বেশি সংক্রামক এবং হাসপাতালে ভর্তির ঝুঁকি দ্বিগুণ বাড়িয়ে দেয়।

ডা. শাহরিয়ার রোজেন বলেন, ফাইজার এবং অ্যাস্ট্রাজেনেকা টিকার দুটি ডোজ ভারতীয় ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের বিপক্ষে কার্যকর। তবে বাংলাদেশে খুব অল্প মানুষ ভ্যাকসিনের আওতায় আসায় (৪ শতাংশের কম) অধিকাংশ মানুষ প্রচণ্ড ঝুঁকির মধ্যে আছে। সংক্রমণের হার যদি ক্রমাগত বাড়তে থাকে তাহলে আমাদের স্বাস্থ্যসেবার সক্ষমতা দিয়ে তা সামাল দেয়া কঠিন হয়ে যাবে।

এই চিকিৎসক বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে এখন আর কেবল সরকারের পক্ষ থেকে লকডাউন বা শাটডাউন দিয়ে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না, বরং সংক্রমণের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে আনতে জনসাধারণকে অবশ্যই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। মাস্ক পরা, হাত ধোয়া, জনসমাগম এড়ানো এবং সামাজিক দূরত্ব মেনে চলতে হবে। এই সহজ কিন্তু বিজ্ঞানসম্মত উপায়গুলো শত বছর আগে স্প্যানিশ ফ্লু মহামারি নিয়ন্ত্রণে কার্যকর হয়েছিল এবং করোনার সব বিপজ্জনক ভ্যারিয়েন্টকে এসব স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার মাধ্যমে প্রতিরোধ করা সম্ভব।

বিশ্লেষণ ও লেখচিত্র প্রস্তুত করেছেন সেন্টার ফর রিসার্চ, ইনোভেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অ্যাকশনের এপিডেমিওলজি বিভাগের ডা. কেএম তৌহিদুর রহমান, ডা. আয়শা আকতার, ডা. শাহরিয়ার রোজেন, ডা. নওরিন আহমেদ, ডা. নাজিফ মাহবুব, ডা. মামুনুর রহমান।

শেয়ার করুন