‘হেফাজতের কোনো নেতাকর্মী সহিংসতার সঙ্গে যুক্ত ছিল না’

নিজস্ব প্রতিবেদক

বাবুনগরী
ফাইল ছবি

কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক উগ্র ধর্মীয় সংগঠন হেফাজতে ইসলামের বর্তমান আমির এবং আহমদ শফী হত্যা মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি মাওলানা জুনায়েদ বাবুনগরী গতকাল সোমবার রাতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের ধানমন্ডির বাসায় গিয়ে মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেছেন। প্রায় দেড় ঘণ্টার বৈঠক শেষে বের হয়ে অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের সামনে মুখ না খুললেও পরদিন তিনি জানালেন বৈঠকে কী আলোচনা হয়েছে। তিনি দাবি করেন, ব্যক্তিগত কোনো স্বার্থে নয়, জাতীয় স্বার্থে মন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করতে গিয়েছিলেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তাদের দাবি-দাওয়াগুলো মনোযোগ সহকারে শুনেছেন এবং সে বিষয়ে আশ্বস্ত করেছেন বলে জানান হেফাজত আমির।

আজ মঙ্গলবার রাজধানীর খিলগাঁও মাখজানুল উলুম মাদ্রাসায় হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে বাবুনগরী গতকালের মিটিং প্রসঙ্গে কথা বলেন।

universel cardiac hospital

বাবুনগরী বলেন, ব্যক্তিগত কোনো কারণে নয়, জাতীয় ও দ্বীনি স্বার্থে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে গতকাল আমাদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈঠকে আলেম-উলামাদের নিঃশর্ত মুক্তি, মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, গ্রেপ্তার-হয়রানি বন্ধ ও অতিসত্বর কওমি মাদ্রাসাগুলো খুলে দেয়ার দাবি জানিয়েছি।

হেফাজত আমির বলেন, সারাদেশে অসংখ্য নিরীহ আলেম-উলামাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারা কারাগারে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। বৈঠকে আমরা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে বিষয়গুলো বিস্তারিতভাবে তুলে ধরেছি।

বাবুনগরী বলেন, আমরা জানিয়েছি হেফাজতের বিরুদ্ধে কথিত যে সহিংসতার অভিযোগ করা হচ্ছে, তা সঠিক নয়। হেফাজতের কোনো নেতাকর্মী সহিংসতার সঙ্গে যুক্ত ছিল না। এসব সহিংসতার সাথে নিরীহ আলেম-উলামাদের কোনো সম্পর্ক নেই।

বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন, হেফাজতের মহাসচিব মাওলানা নুরুল ইসলাম, সিনিয়র নায়েবে আমির মাওলানা আতাউল্লাহ হাফেজ্জী, নায়েবে আমির মাওলানা আবদুল আওয়াল, প্রচার সম্পাদক মাওলানা মুহিউদ্দীন রাব্বানী, মাওলানা আব্দুল কাইয়ুম সুবহানী ও মাওলানা জহুরুল ইসলাম প্রমুখ।

এর আগে সোমরার রাত পৌনে ৯টা থেকে পৌনে ১১টা পর্যন্ত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাসায় বৈঠক করেন বাবুনগরীসহ হেফাজত নেতারা।

উল্লেখ্য, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের বিরোধিতা করে গত ২৬-২৭ মার্চ সারাদেশে বিক্ষোভ ও ব্যাপক সহিংস ঘটায় হেফাজত। বিশেষ করে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বিক্ষোভ করতে গিয়ে তারা ব্যাপক ধ্বংযজ্ঞ চালায়। হেফাজতের ব্যানারে মাদ্রাসার ছাত্ররা গত ২৬ মার্চ বিকেলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলস্টেশনে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। ওই দিন বিক্ষোভকারীরা বঙ্গবন্ধু স্কয়ারে হামলা চালিয়ে জাতির জনকের ম্যুরাল, জেলা প্রশাসকের বাসভবন, পুলিশসুপারের বাসভবন, জেলা জজের বাসভবন, জেলা সিভিল সার্জনের অফিসসহ ভাংচুরসহ বিভিন্ন সরকারি স্থাপনায় ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ চালায়।

এ ছাড়াও ২৮ মার্চ হরতাল চলাকালে হরতাল সমর্থকরা শহীদ ধীরেন্দ্রসনাথ দত্ত ভাষা চত্বর, জেলা শিল্পকলা একাডেমি, ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভা, সুর সম্রাট স্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ সঙ্গীতাঙ্গন, সদর উপজেলা ভূমি অফিস, আনন্দময়ী কালীবাড়ি মন্দির,জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের বাসভবনসহ সরকারি ও বেসরকারি প্রায় অর্ধশতাধিক স্থাপনা ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করে ব্রাহ্মণবাড়িয়াকে মৃত্যুপুরীরেত পরিণত করে। ইসলামের বিষয়ে কঠোর অবস্থান নেয়। এর মধ্যে হেফাজতে ইসলামের সাবেক কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে রয়্যাল রিসোর্টে নারীসহ জনতার হাতে ধরা পড়েন। এতে নতুন করে বিতর্কের মুখে পড়ে হেফাজত।

এই ঘটনার পর হেফাজতের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেয় সরকার। এরপর সংগঠনটির অন্তত কয়েক ডজন কেন্দ্রীয় নেতা গ্রেফতার হয়েছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে। এর আগে একাধিকবার হেফাজত নেতারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে গ্রেফতার বন্ধ এবং গ্রেফতার নেতাদের মুক্তির দাবি জানিয়েছেন।

শেয়ার করুন