চামড়া কিনতে ৯ ব্যাংক দেবে ৫৮৩ কোটি টাকা ঋণ

নিজস্ব প্রতিবেদক

চামড়া
চামড়া। ফাইল ছবি

ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে কাঁচা চামড়া কিনতে প্রতি বছরই ব্যবসায়ীদের ঋণ দিয়ে থাকে ব্যাংকগুলো। এবারও তার ব্যত্যয় হচ্ছে না। যদিও গত বছর ব্যাংকগুলো যে পরিমাণ ঋণ বরাদ্দ রেখেছিল, তার সামান্যই ঋণ নিয়েছিলেন ব্যবসায়ীরা। অন্যদিকে তহবিল সঙ্কটে পড়েছিলেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। অর্থের অভাবে অনেক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী চামড়া কিনতে পারেননি। এর ফলে গত বছর চামড়া বিক্রি হয়েছিল পানির দামে।

গত বছরের মতো এবারও পশুর কাঁচা চামড়া কিনতে কোরবানির ঈদে ব্যাংকগুলো ব্যবসায়ীদের তহবিলের জোগান দেবে। এগিয়ে আসছে রাষ্ট্রায়ত্তসহ নয় বাণিজ্যিক ব্যাংক। তারা কাঁচা চামড়া কিনতে ব্যবসায়ীদের ৫৮৩ কোটি টাকার জোগান দেবে। ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

চলতি বছর ব্যবসায়ীদের জন্য সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ রেখেছে সরকারি মালিকানাধীন রূপালী ব্যাংক আর বেসরকারির মধ্যে ইসলামী ব্যাংক। রাষ্ট্রায়ত্ত এ ব্যাংকটি এবার ব্যবসায়ীদের জন্য ২২৭ কোটি টাকার ঋণ বরাদ্দ রেখেছে। এরপর রয়েছে- জনতা ব্যাংক ১৪০ কোটি টাকা, অগ্রণী ব্যাংক ১২০ কোটি টাকা এবং সোনালী ব্যাংক ২৫ কোটি টাকা।

আর বেসরকারি খাতের ইসলামী ব্যাংক ৬৬ কোটি ৭৫ লাখ টাকা বরাদ্দ রেখেছে। এছাড়াও বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক আড়াই কোটি টাকা, এনসিসি ব্যাংক ৫০ লাখ টাকা এবং দি সিটি ব্যাংক ২০ লাখ টাকা ব্যবসায়ীদের চামড়া কিনতে বরাদ্দ রেখেছে।

এর আগে গত বছর ঈদুল আজহায় কাঁচা চামড়া কিনতে পাঁচ রাষ্ট্রায়ত্তসহ নয় বাণিজ্যিক ব্যাংক ৬৪৪ কোটি ৫০ লাখ টাকা বরাদ্দ রেখেছিল। তবে ব্যবসায়ীরা বরাদ্দের বিপরীতে মাত্র ৬৫ কোটি টাকার ঋণ নিয়েছিলেন। গত বছর কাঁচা চামড়া কিনতে অগ্রণী ব্যাংক বরাদ্দ রেখেছিল ১৮০ কোটি টাকা, রূপালী ব্যাংক ১৫৫ কোটি, জনতা ব্যাংক ১০০ কোটি, সোনালী ব্যাংক ৭১ কোটি, বেসিক ব্যাংক তিন কোটি। বাণিজ্যিক ব্যাংকের মধ্যে ইসলামী ব্যাংক গত বছর বরাদ্দ রেখেছিল ৫০ কোটি টাকা, ঢাকা ব্যাংক ৫০ কোটি, প্রাইম ব্যাংক ৫০ লাখ টাকা বরাদ্দ রেখেছিল।

অন্যদিকে সরকার প্রথমবারের মতো পাঁচটি প্রতিষ্ঠানকে ২০ লাখ বর্গফুট করে মোট এক কোটি বর্গফুট ওয়েট-ব্লু চামড়া রফতানির অনুমতি দিয়েছে। শনিবার (১০ জুলাই) বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের (রফতানি-১ অধিশাখা) আমদানি ও রফতানি নিয়ন্ত্রক দফতরের প্রধান নিয়ন্ত্রককে দেয়া চিঠিতে এসব প্রতিষ্ঠানকে ওয়েট-ব্লু চামড়া রফতানির অনুমতি দেয়া হয়। এএসকে ইনভেস্টমেন্ট, মেসার্স কাদের লেদার কমপ্লেক্স, আমিন ট্যানারি লিমিটেড, লেদার ইন্ডাস্ট্রিজ অব বাংলাদেশ লিমিটেড (ইউনিট-২) এবং কালাম ব্রাদারসকে এই ২০ লাখ বর্গফুট করে মোট এক কোটি বর্গফুট ওয়েট-ব্লু চামড়া রফতানির অনুমতি দেয়া হয়েছে।

যেসব শর্তে ওয়েট-ব্লু চামড়া রফতানির অনুমতি

ওয়েট-ব্লু চামড়া রফতানির জন্য রফতানি নীতি ২০১৮-২১ অনুসরণ করতে হবে; এই অনুমতি শুধুমাত্র রফতানির অনুমতিপ্রাপ্ত ওয়েট ব্লু চামড়ার নির্ধারিত পরিমাণের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে এবং পরবর্তী রফতানিগুলোর জন্য পুনরায় আবেদন করতে হবে; মানসম্মত ওয়েট চামড়া রফতানি করতে হবে; রফতানি অনুমতির মেয়াদ ২০২২ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বহাল থাকবে; জাহাজীকরণ শেষে রফতানি সংশ্লিষ্ট সকল কাগজ-পত্রাদি এ শাখায় দাখিল করতে হবে; যে দেশে রফতানির জন্য অনুমতি প্রদান করা হবে সে দেশেই রফতানি করতে হবে এবং সরকার প্রয়োজনে যেকোনো সময় ওয়েট-ব্লু চামড়া রফতানি নিষিদ্ধ করতে পারবে।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, করোনার প্রভাবে ইউরোপের চামড়ার বাজার ব্যবস্থা স্বাভাবিক হয়নি। ইউরোপের বাজার স্বাভাবিক না হলেও নন-ট্যারিফ বাধা কমানো গেলে চীনের বাজারে চামড়া রফতানির সম্ভাবনা আছে।

এ বিষয়ে ট্যানারি মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএ) সভাপতি শাহিন আহমেদ জানান, ট্যানারিগুলো হাজারিবাগ থেকে সাভারে স্থানান্তর করা এবং বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে ব্যবসায়ীরা অনেকেই ঋণ পরিশোধ করতে পারেননি। এর ফলে তাদের অনেকেই খেলাপি হয়েছেন। পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে আমরা (ব্যবসায়ী) বিশেষ বিবেচনায় ঋণ নবায়নের সুযোগ চাই। তাছাড়া ঋণ বিতরণের তথ্য যেগুলো ব্যাংক থেকে দেয়া হচ্ছে, তার চেয়ে বেশি পরিমাণ ঋণ ব্যাংকগুলো বিতরণ করেছে।

শেয়ার করুন