নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে সেজান জুস কারখানায় শ্রমিক হতাহতের ঘটনায় ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর ভূমিকা নিয়ে চরম অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন হাইকোর্ট।
আজ বুধবার এই ঘটনায় দায়ের করা এক রিট আবেদনের শুনানির সময় এমন অসন্তোষ প্রকাশ করেন উচ্চ আদালত।
আদালত বলেছেন, এতজন শ্রমিক মারা গেলেন, এফবিসিসিআইসহ ব্যবসায়ী সংগঠনগুলো কোনো শোক জানালো না। শোক জানিয়ে ব্যবসায়ীদের সংগঠনগুলোর কোনো বিবৃতি চোখে পড়ল না। তাদের ন্যূনতম দায়বদ্ধতা নেই। তারা আছেন শুধু সরকারের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায় আর ব্যাংকের ঋণ লোন কীভাবে মওকুফ পাওয়া যায় সে চেষ্টায়।
ব্যারিস্টার সারা হোসেন শ্রমিকদের বকেয়া বেতনের বিষয়টি নজরে আনলে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের বিশেষ হাইকোর্ট বেঞ্চ এসব মন্তব্য করেন।
আদালত বলেন, এতজন শ্রমিক মারা গেলেন। ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর শোক জানিয়ে কোনো বিবৃতি দেখি নাই। এফবিসিসিআই শ্রমিকদের মৃত্যুর বিষয়ে শোক জানাল না। তাদের কোনো প্রতিনিধি দল সেখানে গেল না। আমার মনে হয় এফবিসিসিআইসহ ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর রোল প্লে করার প্রয়োজন এসব ক্ষেত্রে। ঠিকমত ফ্যাক্টরিগুলো রান করছে কি না। কোথায় কী দুর্বলতা এগুলো তাদের দেখা উচিত। গার্মেন্টের ব্যাপারে বিদেশিরা চাপ দিয়েছে বলে সেখানে এখন অনেক পরিবর্তন হয়েছে। কারণ আমাদের দেশে যতক্ষণ চাপ না দিচ্ছেন ততক্ষণ কাজ হয় না। এটা বোঝা উচিত।
এই বিচারক আরও বলেন, ব্যক্তিগতভাবে আমি পত্রপত্রিকা ফলো করার চেষ্টা করি। তাদের কোনো পজিটিভ ভূমিকা দেখি না। আমার মনে হয় যে আমাদের এই জায়গাগুলোতে কাজ করার সুযোগ আছে। ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর কোনো দায়বদ্ধতা নেই। তারা শুধু সরকারের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায়ের চেষ্টা করে আর ব্যাংকের ঋণ লোন মওকুফ কীভাবে পাওয়া যাবে সেই চেষ্টায় থাকে। আর কারখানা পরিদর্শকরা পরিদর্শনে গিয়ে খাম নিয়ে আসেন।
গত ১০ জুলাই নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে অগ্নিকাণ্ডে নিহতদের পরিবারকে এক কোটি টাকা ও আহতদের ৩৫ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেয়ার নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়। মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক), বাংলাদেশ লিগ্যাল অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট, বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) ও সেফটি অ্যান্ড রাইটস সোসাইটি রিট আবেদনটি করে।
১১ জুলাই রিটের শুনানিতে আদালত বলেছিলেন, আগুনে পুড়ে ৫২ জন নিহতের ঘটনায় সারাদেশের মানুষের মতো আমরাও উদ্বিগ্ন। এ ঘটনায় ইতিমধ্যেই মামলা হয়েছে ও আসামিরা গ্রেপ্তার হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে কিছু টাকা অনুদানও দেওয়া হয়েছে। তাই আপাতত কোনো ক্ষতিপূরণ দেওয়ার আদেশ দিচ্ছি না। আগে লাশগুলো শনাক্ত হোক। এরপর আপনারা ক্ষতিপূরণের আবেদন নিয়ে আসুন।