গায়ে ‘ডিবি’ লেখা জ্যাকেট, হাতে আগ্নেয়াস্ত্র ও ওয়াকিটকি। নির্জন সড়কে চেকপোস্ট বসিয়ে টার্গেট করা গাড়ি থামায় ওরা। এর পর যাত্রীদের সঙ্গে থাকা টাকা লুট করে পালিয়ে যায়। অথবা টাকা বহনকারী ব্যক্তিকে তুলে নেওয়া হয় গাড়িতে। পরে টাকা কেড়ে নিয়ে হাত-পা বেঁধে তাকে ফেলে দেওয়া হয় অন্য কোথাও। এমনই এক চক্রের ৪ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) তেজগাঁও বিভাগ। চক্রটি মূলত বড় ব্যবসায়ী-পাইকারদের পিছু নিত। ঈদ সামনে রেখে তারা গরুর বেপারী ও ক্রেতাদের টাকা লুটের পরিকল্পনা করেছিল।
গ্রেপ্তার ৪ জন হলো- মানিক বেপারী ওরফে দারোগা মানিক, জাহিদ হাসান ওরফে রেজাউল, ফারুক হোসেন ওরফে নাসির উদ্দিন ও রুবেল সিকদার ওরফে রুস্তম।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রাজধানীর বসিলায় চেকপোস্ট বসিয়ে ডাকাতির প্রস্তুতি নেওয়ার সময় তাদের গ্রেপ্তার করে ডিবির তেজগাঁও জোনাল টিম। তাদের কাছে পাওয়া গেছে একটি বন্দুক, একটি চাপাতি, দুটি ছোরা, তিনটি ‘ডিবি’ লেখা জ্যাকেট, একটি খেলনা পিস্তল ও কভার, একটি ওয়্যারলেস সেট, একটি রেঞ্চ, চাবিসহ এক জোড়া হাতকড়া, স্টিলের বাঁশি ও এক লাখ ৮০ হাজার টাকা।
এ ব্যাপারে জানাতে বুধবার রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এতে যুগ্ম কমিশনার (ডিবি-উত্তর) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, এরা সংঘবদ্ধ ডাকাত দলের সদস্য। ডিবি পুলিশের ছদ্মবেশে রাজধানী ও আশপাশের জেলার সড়কে রাতে চেকপোস্ট বসিয়ে ডাকাতির চেষ্টা করত। এ ছাড়াও বিভিন্ন ব্যাংকের আশপাশে ওঁৎ পেতে থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা তোলা ব্যক্তিকে অনুসরণ করত। পরে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে ওসব ব্যক্তিকে গাড়িতে তুলে টাকা কেড়ে নেওয়া হতো। এদের বিরুদ্ধে ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় মামলা রয়েছে। এরা সবাই বিভিন্ন মেয়াদে কারাভোগ করেছে।
বড় অংকের টাকা পরিবহনের সময় অলিগলি পরিহার, সিসি ক্যামেরা আছে এমন স্থানে লেনদেন ও প্রয়োজনে ডিবির সহায়তা নেওয়ার আহ্বান জানান এ কর্মকর্তা। ঈদকে কেন্দ্র করে দুস্কৃতকারীরা যেন গরুর হাট বা গরুবাহী ট্রাক ছিনতাই করতে না পারে, সে ব্যাপারে ডিবি সতর্ক আছে বলে জানান তিনি। ডিবি পরিচয়ে কেউ কিছু কেড়ে নিতে চাইলে তা যাচাই করা এবং আশপাশে পোশাক পরে দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যদের সহায়তা নেওয়ার কথাও বলেন তিনি।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, পোশাক কারখানায় বেতন দেওয়ার সময় গাড়িতে টাকা আনা-নেওয়া করা হয়। এটা তারা সোর্সের মাধ্যমে নজরদারিতে রেখে ডাকাতির চেষ্টা করে।
ডিবি তেজগাঁও বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার শাহাদত হোসেন সুমা জানান, মানিক বেপারী ওরফে দারোগা মানিক এ চক্রের প্রধান। সে নিজেকে এসআই বা দারোগা হিসেবে পরিচয় দেয় বলেই এমন নাম। তার নেতৃত্বে এ চক্রটি গত ৭ জুন গাজীপুরের লিবার্টি নিটওয়্যার নামে একটি কারখানার ১৯ লাখ ২৫ হাজার টাকা ছিনতাই করে। ওই ঘটনাতেও চেকপোস্ট বসিয়ে টাকা বহনকারী দু’জনকে গাড়িতে তুলে নেয়। এ ব্যাপারে গাজীপুরের কালিয়াকৈর থানায় মামলা হয়েছে। গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানায়, লুণ্ঠিত টাকার মধ্যে পাঁচ লাখ নিয়েছিল মানিক। বাকি টাকা অন্যরা ভাগ করে নেয়।