গণটিকা নিয়ে সরকারের কোনো পরিকল্পনা নেই এবং অপরিকল্পিত এই গণটিকা কর্মসূচি বুমেরাং হতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের (জিএম কাদের) এমপি।
আজ মঙ্গলবার (১০ আগস্ট) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ মন্তব্য করেন তিনি।
জিএম কাদের বলেন, পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে, টিকা এবং গণটিকা নিয়ে সরকারের কোনো পরিকল্পনা নেই। তাই অপরিকল্পিত এই গণটিকা কর্মসূচি বুমেরাং হতে পারে। গণটিকা কর্মসূচিতে স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষিত হওয়ায় করোনা আরো ভয়াবহ রূপে ছড়িয়ে পড়তে পারে।
তিনি বলেন, অনেক অসুস্থ ও বৃদ্ধ মানুষ লাইনে দাঁড়িয়ে রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে নানা হয়রানির শিকার হয়েও টিকা পায়নি। আবার প্রয়োজন অনুযায়ী টিকা সংগ্রহ করতে না পারলে, গণটিকা কর্মসূচি আবারও মুখ থুবড়ে পড়তে পারে। এ নিয়ে জনমনে হতাশা বিরাজ করছে।
জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান বলেন, ৭ আগস্ট থেকে ১২ আগস্ট চলমান গণটিকা কর্মসূচির আওতায় ৩২ লাখ মানুষকে টিকা দেওয়ার কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু তিন দিনেই লক্ষ্যমাত্রার প্রায় তিন গুণ টিকা গ্রহণ করেছে সাধারণ মানুষ।’ তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গণটিকা কেন্দ্রগুলোতে বিশৃঙ্খল পরিবেশ বিরাজ করছে। শারীরিক দূরত্বের বালাই নেই, মাস্ক নেই অনেকের মুখে। অভিযোগ উঠেছে স্বজনপ্রীতি ও দুর্নীতি হচ্ছে গণটিকা কর্মসূচিতে, অভিযোগগুলো খতিয়ে দেখা উচিত।
জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান আরও বলেন, ৯ আগস্ট পর্যন্ত বিভিন্ন গণমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী দেশে মোট টিকা এসেছে দুই কোটি ৫৬ লাখ ৪৪ হাজার ডোজ। গতকাল পর্যন্ত প্রথম ডোজ গ্রহণ করেছে এক কোটি ৪৪ লাখ ৫০ হাজার ৬৩০ জন। ৪৭ লাখ ৩২ হাজার ৮৩২ জন দ্বিতীয় ডোজ হিসেবে মোট গ্রহণ করেছেন ৯৪ লাখ ৬৫ হাজার ৬৬৪ ডোজ টিকা। অর্থাৎ মোট টিকা প্রয়োগ হয়েছে দুই কোটি ৩৯ লাখ ১৬ হাজার ২৯৪ ডোজ।
জিএম কাদের বলেন, সে হিসেবে সরকারের হাতে টিকা মজুদ থাকার কথা ১৭ লাখ ২৭ হাজার ৭০৬ ডোজ। এতে দ্বিতীয় ডোজের অপেক্ষায় থাকা ব্যক্তিদের জন্য এখনো ঘাটতি আছে এক কোটি ২৭ লাখ ২২ হাজার ৯২৪ ডোজ টিকা। প্রতিদিন টিকা প্রয়োগের কার্যক্রম চালু থাকলে দ্বিতীয় ডোজ প্রাপ্তির জন্য অপেক্ষমাণদের তালিকা আরো বাড়তে থাকবে, সেই সঙ্গে বাড়বে টিকা ঘাটতির হিসাবও।
জিএম কাদের আরও বলেন, দেশের ১৭ কোটি মানুষের জন্য প্রয়োজন হবে কমপক্ষে ২৭ কোটি ডোজ টিকা। তাই গণটিকা কর্মসূচি চালু রাখতে সরকারকে এখনই বিভিন্ন উৎস থেকে দ্রুত টিকা সংগ্রহ করতে হবে। এখনো দেশে করোনার সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার ঊর্ধ্বমুখী, কমার কোনো লক্ষণ নেই। সে ক্ষেত্রে মহামারির এই ভয়াবহতা থেকে পরিত্রাণের একমাত্র উপায় গণটিকা কর্মসূচি চালিয়ে রাখা।
বিরোধীদলীয় উপনেতা বলেন, প্রতিদিন সরকারের মন্ত্রীরা টিকাপ্রাপ্তির বিষয়ে আশ্বাসের বাণী শোনাচ্ছেন। কিন্তু টিকাপ্রাপ্তি ও টিকাদান কর্মসূচি সম্পর্কে স্বচ্ছ ও সুস্পষ্ট ধারণা জনগণ পাচ্ছে না। তা ছাড়া চলমান কর্মসূচিতে অনিশ্চয়তা, বিশৃঙ্খলা ও সমন্বয়হীনতা দৃশ্যমান। এসব কারণে সাধারণ মানুষের মধ্যে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা দিনদিন বেড়েই চলেছে।