আমানতের সুদহার কমানোর প্রস্তাব নাকচ করল কেন্দ্রীয় ব্যাংক

নিজস্ব প্রতিবেদক

বাংলাদেশ ব্যাংক
ফাইল ছবি

বাংলাদেশ ব্যাংকের বেঁধে দেওয়া আমানতের সর্বনিম্ন্ন সুদহার কমাতে অনুরোধ করেছেন তফসিলি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকরা (এমডি)। তবে তাদের অনুরোধ নাকচ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

বুধবার বিকালে গভর্নর ফজলে কবিরের সঙ্গে ব্যাংকের এমডিদের বৈঠকে এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে সাড়ে ৬ মাস পর ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠিত এই সভায় সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির। তফসিলি সব সব ব্যাংকের এমডিরা সভায় অংশ নেন। এসময় বাংলাদেশ ব্যাংকের সব ডেপুটি গভর্নর ও সংশ্লিষ্ট নির্বাহী পরিচালকরা উপস্থিত ছিলেন।

সভায় ঋণের ক্ষেত্রে ৯ শতাংশ সুদহার বাস্তবায়নের অগ্রগতিতে সন্তোষ প্রকাশ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে মেয়াদি আমানতে মূল্যস্ফীতির কম সুদ না দেওয়ার নির্দেশনা প্রত্যাহার বা পরিমার্জন কিংবা আমানতের সুদহারের সীমা পুরোপরি তুলে দেওয়ার দাবিতে অসম্মতি প্রকাশ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এছাড়া নতুন প্রণোদনা ঋণ দ্রুত ছাড় করতে নির্দেশনা দেয়া হয়। এর বাইরে ভোক্তা ঋণ প্রদানে তাগিদ দেয়াসহ বিভিন্ন বিষয় আলোচনা করা হয়।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচাল ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, বিভিন্ন ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকরা আমানতের সুদহার কমানোর অনুরোধ করলেও বাংলাদেশ ব্যাংক তা নাকচ করে আমানতের সুদহার বহাল রাখার যৌক্তিকতা দেখিয়েছে।

সভায় অংশ নেয়া অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ শামস উল ইসলাম বলেন, ‘আমানতের সুদহার কমানোর জন্য কয়েকটি ব্যাংকের এমডি অনুরোধ করলেও না কমানোর পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা।’

তিনি বলেন, ‘এছাড়া মোবাইল-ল্যাপটপ কেনার জন্য ব্যাংকগুলোকে ঋণ দেয়ার অগ্রগতি বিষয়ে জানতে চেয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর। এত দিন খাতটিকে অনুৎপাদনশীল খাত বিবেচনা করা হলেও করোনাকালীন এ সময়ে তা উৎপাদনশীল খাত হিসেবে দেখতে বলেছেন গভর্নর। এছাড়া প্রণোদনা প্যাকেজের ঋণ শতভাগ বাস্তবায়ন করায় ১৩টি ব্যাংককে প্রশংসাপত্র দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।’

সভা সূত্রে জানা গেছে, করোনাভাইরাস মহামারীর পরিপ্রেক্ষিতে ব্যাংকগুলোর বিশেষ সামাজিক দায়বদ্ধতা (সিএসআর) নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এছাড়া প্রণোদনার আওতায় দ্বিতীয় বছরে বড় শিল্পে ৩৩ হাজার কোটি টাকা এবং সিএমএসএমই খাতে ২০ হাজার কোটি টাকা বিতরণ লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে সভায় আলোচনা হয়।

জানা গেছে, সিএমএসএমই খাতে প্রথম বছর ১৫ হাজার ৩৮৭ কোটি টাকা বিতরণ হয়েছে, যা মোট লক্ষ্যমাত্রার ৭৬ দশমিক ৯৩ শতাংশ। এক্ষেত্রে শতভাগ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনকারী ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে প্রশংসাপত্র দেওয়া হবে। আর ৪০ শতাংশের কম বিতরণ করা ব্যাংকগুলোকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হবে।

মামলা না থাকা স্বীকৃত বিল যথাসময়ে পরিশোধের জন্য ব্যাংকগুলোকে বেশ আগ থেকে নির্দেশনা দিয়ে আসছে বাংলাদেশ ব্যাংক। অধিকাংশ ব্যাংকের অপরিশোধিত স্বীকৃত বিল কমলেও ২৮টি ব্যাংকের এখনও বকেয়া রয়েছে। এ নিয়েও সভায় আলোচনা হয়।

সভায় নতুন উদ্যোক্তা তৈরি এবং স্ব-কর্মসংস্থান উৎসাহিত করার লক্ষ্যে দুটি স্টার্ট-আপ তহবিল গঠন নিয়ে আলোচনা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক মাত্র ৪ শতাংশ সুদে জামানতবিহীন ‘স্টার্ট আপ’ অর্থায়নের উদ্দেশ্যে দুটি ‘স্টার্ট-আপ ফান্ড গঠন করবে। একটি ‘স্টার্ট-আপ ফান্ড’ নামে ৫০০ কোটি টাকার পুনঃঅর্থায়ন তহবিল এবং সব তফসিলি ব্যাংক তাদের বাৎসরিক নীট মুনাফা থেকে ১ শতাংশ অর্থ স্থানান্তর করে নিজস্ব স্টার্ট-আপ ফান্ড গঠন করবে।

এছাড়া প্রি-শিপমেন্ট ক্রেডিট খাতে রপ্তানিমুখী শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রি-শিপমেন্ট রপ্তানি ঋণ সহায়তা প্রদানের মাধ্যমে তাদের রপ্তানি কার্যক্রম অব্যাহত রেখে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন ও অর্থনীতিতে গতিশীলতা আনতে বাংলাদেশ ব্যাংক পাঁচ হাজার কোটি টাকার তিন বছর মেয়াদী আবর্তনযোগ্য তহবিল গঠন করতে সভায় আলোচনা করা হয়।

শেয়ার করুন