যে গতিতে এগোচ্ছে তালেবান তাতে আগামী তিন মাসের মধ্যে কাবুলের দখল নিয়ে নিতে পারে তারা। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা দপ্তরের একটি রিপোর্টে আতঙ্কের এই ছবিই তুলে ধরা হয়েছে। নাম প্রকাশ না করা শর্তে পেন্টাগনের এক কর্মকর্তা সংবাদ সংস্থা রয়টার্সকে এই রিপোর্টের কথা জানিয়েছেন। তাঁদের আশঙ্কা, তালেবান যে গতিতে এগোচ্ছে এবং ক্রমে ক্রমে যে পরিমাণ শক্তি সঞ্চয় করছে, তাতে এক মাসের মধ্যে কাবুলকে সারা দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলতে পারবে তারা। তারপরে আর দুই মাসের মধ্যেই দেশের রাজধানীকে সম্পূর্ণভাবে নিজেদের দখলে নিয়ে আসতে পারবে তালেবান।
অর্থাৎ, তিন মাসের মধ্যে কাবুলের পতন অনিবার্য! তবে একই সঙ্গে এই পেন্টাগন-কর্মকর্তা বলেছেন যে, আফগান বাহিনী যদি ঠিক মতো তালেবানকে প্রতিহত করতে পারে তাহলে ভবিষ্যতের ছবিটা এত নিদারুণ হবে না।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা দপ্তরের এই রিপোর্টকে একেবারেই উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। কারণ, একের পর এক প্রাদেশিক রাজধানীর দখল নিচ্ছে তালিবান। আর দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ক্রমশ পিছু হটছে আফগান বাহিনী। এমন পরিস্থিতিতে আফগানিস্তানের একটা বড় অংশের নিয়ন্ত্রণ নিজেদের দখলে রাখা ক্রমশই কঠিন হয়ে পড়ছে আফগান সেনাবাহিনীর পক্ষে।
গত রবিবার কুন্দুজ দখল করেছিল তালেবান। সেখান থেকে প্রাণ হাতে করে পালাতে পেরেছিলেন যে স্থানীয়রা তারা জানিয়েছেন, ওই শহরে ভয়াবহ তালিবান-তাণ্ডবের কথা। শরণার্থী শিবিরে বসে এক আফগান নারী বলেছেন, সরকারি কর্মী, কর্মকর্তা ও নিরাপত্তারক্ষীদের বের করে এনে রাস্তায় দাঁড় করিয়ে গুলি করে মারছে তালেবান। কারও বা প্রকাশ্যে গলা কেটে নেওয়া হচ্ছে। এমনকি, অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মী ও বৃদ্ধদেরও রেহাই দিচ্ছে না তারা।
তিনি বলেন, ‘পালাতে পালাতে দেখেছিলাম, রাস্তায় মৃতদেহের পাহাড়।’
ইতোমধ্যে তালেবানের দখলে চলে আসা শেবেরগান, ফারা সিটি, তালোকান ও কুন্দুজের এই ভয়াবহ ছবি উঠে এসেছে একাধিক প্রত্যক্ষদর্শীর বিবরণে। একে-৪৭ ও নানা আধুনিক অস্ত্র নিয়ে সারাক্ষণ রাস্তায় রাস্তায় দাপিয়ে বেড়াচ্ছে তালেবান সদস্যরা। কাউকে মেরে রক্তাক্ত দেহগুলো হেঁচড়াতে হেঁচড়াতে রাস্তা দিয়ে নিয়ে যাচ্ছে তারা। তারপরে মৃতদেহ ছিঁড়ে খাচ্ছে কুকুর। যেন হাহাকার করার সাহসটুকুও হারিয়ে ফেলেছেন স্থানীয় মানুষজন।