শোক দিবসের কথা মনে পড়লে বাকরূদ্ধ হয়ে যাই: মোকতাদির চৌধুরী

মোহাম্মদ সজিবুল হুদা

মোকতাদির চৌধুরী এমপি

বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী বলেছেন, ১৫ আগস্ট আমাদের জাতীয় জীবনে একটি বেদনাবিধুর দিন। শোক দিবসটির কথা যখন মনে আসে তখন বাকরূদ্ধ হয়ে যাই। অন্তহীন বেদনায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ি। কারণ এ দিন অর্থাৎ ১৫ আগস্টের শেষ রাত্রে যখন ঘটনাগুলো ঘটে তখন থেকে আরম্ভ করে দুপুর পর্যন্ত আমরা বেশ কয়েকজন ছাত্র আন্দলোন কর্মী যারা তদানিন্তন সময়ে বাকশালের সহযোগী সংগঠন জাতীয় ছাত্রলীগের সদস্য হয়েছিলাম,তারা অনেকের দুয়ারে দুয়ারে ঘুরেছি। কিন্তু ঐ সময়ের শীর্ষ নেতাদের কাউকেই পাশে পাইনি। সেইসব কথাগুলো যখন মনে হয়, তখন সত্যিই কষ্ট, দুঃখ-বেদনা রাখার কোনো জায়গা খুঁজে পাই না।

আজ রোববার (১৫ আগস্ট) সকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসন কর্তৃক আয়োজিত আলোচনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

মোকতাদির চৌধুরী এমপি বলেন, বঙ্গবন্ধুকে কেন হত্যা করা হয়েছিল এটি নিয়ে আমি কোনো আলোচনা করতে চাই না। আজকে দুটি বড় দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন ও দৈনিক ইত্তেফাক দুটোতেই আমার সর্বশেষ লেখায় বিস্তারিত এসেছে। সেই ঘটনার সাথে রাজনীতিবিদদের একটি চক্র এবং তাদের মধ্যে ৯০% আওয়ামী লীগের অন্তর্ভুক্ত ছিল। সেদিন সেনাবাহিনীর একটি ক্ষুদ্র অংশ, দুর্ভাগ্যবশত তাদের কেউ কেউ মুক্তিযুদ্ধেও অংশগ্রহণ করেছিল, সেই ঘৃণ্য চক্রিরা বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করেছিল। এই কথা এখন আমরা অনেকই জানি। যদিও রাজনীতিবিদদের মধ্যে শুধু মুস্তাককেই চিহ্নিত করা হয়েছে, কিন্তু মুস্তাকের সহযোগী যারা ছিল তাদেরকে কখনো বিচারের সম্মুখীন হতে হয় নাই। তাদেরকে কখনো জনসম্মুখে তেমনভাবে নিন্দাও জানানো হয় নাই। তারা যদি আওয়ামী লীগে ফিরে আসতে চাইত হয়তুবা মুহাম্মদ উল্যাহর মতো ফিরে আসতে পারত।

পরক্ষণেই তিনি বলেন, মুহাম্মদ উল্যাহকে চিনেন তো আপনারা? তিনি (মুহাম্মদ উল্যাহ) ছিলেন মুস্তাকের উপরাষ্ট্রপতি। পরবর্তী সময়ে তিনি আওয়ামী লীগে ফিরে এসেছিলেন এবং আওয়ামী লীগের টিকেটে নির্বাচনও করেছিলেন, এরচেয়ে দুর্ভাগ্য আমাদের জন্য আর কিছু হতে পারে না। এই ওবায়দুর রহমান, শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, তাহের উদ্দিন ঠাকুর, নুরুল ইসলাম মঞ্জু তদানিন্তন সময়ে খুবই প্রমিনেন্ট ফিগার ছিলেন। এদের সবকথা কথাও আমরা জানি। কিন্তু তেমনভাবে আমরা তাদেরকে চিহ্নিত করতে পারিনি। এতে করে এধরনের লোকেরা রাজনীতিতে আশ্রয় ও প্রশ্রয় পেয়ে যাচ্ছে এবং ঘাপটি মেরে বসে তাদের মতো করে কাজ করে যাচ্ছে।

প্রবীণ এই আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, আমলা তন্ত্রেও মুস্তাকের দোসর মাহবুবুল আলম চাষী, কেরামত আলী, শফিউল আলম, আবদুল মোমেন খান (বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মঈন খানের বাবা) এই যে দুষ্ট চক্র (আমলাদের) তারা কিন্তু রয়ে গেছে। আমাদের তদানিন্তন সময়ে এনএসআই-এর ডাইরেক্টর ছিলেন এবিএম সাত্তার, বঙ্গবন্ধুর সচিব ছিল পাকিস্তানের রাজাকার বাহিনীর সদস্যদ রিক্রুট করা আব্দুর রহিম। এরা কিন্তু নেপথ্যেই থেকে গেছে এবং তাদের সহযোগীও আরও অনেক ছিলেন, এদের চিহ্নিত করা প্রয়োজন।

জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বলেন, আমি সরকারের কাছে অনুরোধ জানাব, আপনারা বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে যারা জড়িত ছিল তাদেরকে চিহ্নিত করতে একটি স্বাধীন তদন্ত কমিশন গঠন করুন। ব্যবসায়ীদের মধ্যে কারা সেদিন সুযোগের অপেক্ষায় বসেছিল, সাংবাদিকদের মধ্যে কারা সেদিন মুস্তাকের সরকারের বৈধতার পক্ষে কলম ধরেছিল?, সেই খ্যাতিমান বা কুখ্যাত সাংবাদিকবৃন্দ কারা? এটিও খুঁজে বের করা প্রয়োজন। যদিও তাদের অনেকেরই বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সরকারের আশ্রয়-প্রশ্রয়, এমনকি বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা সরকারের আশ্রয়-প্রশ্রয়েও প্রবৃদ্ধি হয়েছে। আমরা তাদেরকে খুঁজে বের করতে পারিনি। খুঁজার চেষ্টাও করিনি। এখনই সময় এদেরকে চিহ্নিত করার।

শেয়ার করুন