সরকারি চাকরিতে ও নতুন শিক্ষক নিয়োগ, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার সময় শিক্ষার্থীদেরও মাদকাসক্ত কি না সেটা শনাক্ত করতে ডোপ টেস্ট করা হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। তিনি বলেন, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রতি বছর একবার করে ডোপ টেস্টের আওতায় আসবেন। যারা পজিটিভ হবেন, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ বিষয়ে জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করে এগোতে বলা হয়েছে আমাদের।
আজ মঙ্গলবার বিকালে সচিবালয়ের মন্ত্রিপরিষদ কক্ষে আইন-শৃঙ্খলাসংক্রান্ত সভা শেষে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, নতুন নতুন ভয়ংকর মাদক আসার খবর আসছে আমাদের কাছে। বিভিন্নভাবে যেসব সংবাদ আমরা পাচ্ছিলাম, সেজন্য আমরা হঠাৎ করে কেবিনেট সেক্রেটারির মাধ্যমে আজকের সভা আহ্বান করেছি। সামারিক বাহিনীর প্রতিনিধিসহ সব বাহিনীর প্রধানরা সভায় উপস্থিত ছিলেন।
আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, আমরা ডোপ ডেস্টের ব্যবস্থা নিয়েছি এই মাদককে নিরুৎসাহিত করতে। চাকরিতে ঢোকার সময় ডোপ টেস্ট করা হচ্ছে। অনেক ধরনের সমস্যা আসছে। এটাও কেবিনেট সচিব সংশ্লিষ্টদের জানিয়ে দেবেন। বছরে একবার সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ডোপ টেস্টের আওতায় আসবেন। যারা ডোপ টেস্টে পজিটিভ হবেন, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তিনি বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও এই ডোপ টেস্টের আওতায় থাকবে। ইউনিভার্সিটির ছাত্র যারা ভর্তি হবেন এবং যারা নতুন শিক্ষক নিয়োগ হবেন, তাদের সবাই ডোপ টেস্টের আওতায় আসবেন। এটা নিয়েও আলোচনা করেছি। কেবিনেট সচিব এটাও সংশ্লিষ্টদের জানিয়ে দেবেন।
আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, আমরা মাদক নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি, কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। এর উৎস কী, ভুক্তভোগী কারা হচ্ছেন। আমরা দেখছি, আমাদের দেশে যে মাদকগুলো উদ্ধার করি, সেগুলো বাইরের। আমরা মাদক তৈরি করি না। মাদক বাইরে থেকে আসে। এর মাধ্যমে আমাদের ইয়ং জেনারেশন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আমাদের এই ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে রক্ষার জন্যই আমরা দীর্ঘ আলোচনা করেছি। মাদক কীভাবে আসে সেগুলোও আমরা লক্ষ্য করছি। সম্প্রতি আমরা দেখেছি, কয়েকটা ভয়ংকর মাদক কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে আসছে। সেজন্য কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে যাতে না আসে, সেটা বন্ধ করার জন্য ব্যবস্থা নিয়েছি। কুরিয়ার সার্ভিস নিয়ন্ত্রণ করেন আমাদের ডাক বিভাগ। তাদেরকে এ বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তারা স্ক্যানার বসিয়ে প্রত্যেকটা কুরিয়ার সার্ভিসের মালপত্র স্ক্যান করবে। যারা এই নির্দেশ না মানবে, তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন কেবিনেট সচিব। সেটা আমরা পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিয়েছি।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আফগানিস্তান থেকে আমাদের দূরত্ব প্রায় এক হাজার মাইল। মাঝখানে আরও দু’টা দেশ রয়েছে। কাজেই ওখান থেকে এখানে কেউ চলে আসবে, আপনাদের এ ধরনের চিন্তাধারা আমার কাছে অমূলক মনে হয়। আপনারা মনে করেছেন, আমাদের দেশের মানুষ সেখানে গিয়েছেন। আমাদের দেশের মানুষ কখনও জঙ্গিবাদ ও উগ্রবাদকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয়নি। পছন্দও করে না। কাজেই ওখানে কী হচ্ছে সেটা তাদের ব্যাপার। আমাদের দেশে কী হবে সেটা আমাদের সরকার আছে। আমাদের প্রধানমন্ত্রী আছেন। তার নির্দেশনায় আমরা কাজ করছি। এখান থেকে লোকজন গেছে বলে যারা সন্দেহ করছেন, তাদের সন্দেহটা সঠিক নয়। কারণ, সবকিছু বন্ধ। যেখানে যাতায়াতের বাহন নেই। তাহলে সেখানে কি কেউ হেঁটে হেঁটে গিয়েছেন? এখানেই আমার প্রশ্ন। যারা বলছেন, তারা হয়তো বাস্তবতার কথা চিন্তা না করেই বলেছেন।
আফগান শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, তারা হাজার মাইল দূরে আছেন। এমনিতেই আমরা পাকিস্তানি শরণার্থী ও রোহিঙ্গাদের নিয়ে বিপদে আছি। কাজেই আফগান শরণার্থীর বিষয়টি আমাদের কাছে কোনো প্রসঙ্গই নয়।
মঙ্গলবার দুপুরে চন্দ্রিমা উদ্যানে বিএনপির সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিএনপির মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের নতুন কমিটি সেখানে ফুল দিতে গিয়েছিলেন তাদের প্রয়াত চেয়ারম্যানের কবরস্থানে। সেখানে যাওয়ার সময় তারা উচ্ছৃখলভাবে গিয়েছিলেন। কোভিডের কারণে বলে দেওয়া হয়েছিল কোনো জমায়েত হতে পারবে না। তারপরও তারা সেটা উপেক্ষা করে সেখানে জোর করে ঢুকেছে। শান্তি ভঙ্গের চেষ্টা করেছে। পুলিশের ওপর বেধড়ক ইটপাটকেল ছুড়েছে। যার জন্য পুলিশ বাধ্য হয়ে টিয়ার গ্যাস দিয়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করেছে।