বরিশাল সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) বাসভবনে হামলা ও পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় সদরের ইউএনও মো. মুনিবুর রহমান ও কোতোয়ালী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নুরুল ইসলাম এবং উপ পরিদর্শক মো. শাজালাল মল্লিকের বিরুদ্ধে আদালতে পৃথক দুটি নালিশি মামলার আবেদন করা হয়েছে।
বরিশাল সিনিয়র অতিরিক্ত মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মাসুম বিল্লাহর আদালতে আজ রোববার নালিশি মামলা দুটির আবেদন করেন বরিশাল জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র অ্যাডভোকেট রফিকুল ইসলাম খোকন এবং বরিশাল সিটি করপোরেশনের রাজস্ব কর্মকর্তা বাবুল হালদার।
আদালতের বিচারক মো. মাসুম বিল্লাহ ওই অভিযোগ দুটি গ্রহণের পর তা আদেশের জন্য অপেক্ষামান রেখেছেন।
বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট তালুকদার মো. ইউনুস বলেন, দুটি মামলার আবেদনেই সদর ইউএনও মো. মুনিবুর রহমানকে প্রধান আসামি করা হয়েছে।
আদালত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা বাবুল হালদারের আবেদনে ইউএনও মো. মুনিবুর রহমানকে প্রধান আসামি করার পাশাপাশি তার নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পাঁচ আনসার সদস্যকে আসামি করা হয়েছে। আনসার সদস্যদের কারও নাম উল্লেখ করা হয়নি। এছাড়াও আরও অজ্ঞাতনামা ৪০-৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
প্যানেল মেয়র অ্যাডভোকেট রফিকুল ইসলাম খোকনের আবেদনে ইউএনও মো. মুনিবুর রহমানকে প্রধান আসামি করার পাশাপাশি দ্বিতীয় আসামি করা হয়েছে কোতোয়ালী মডেল থানার ওসি নুরুল ইসলামকে। তৃতীয় আসামি করা হয়েছে কোতোয়ালীর উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. শাহজালাল মল্লিককে। শাহজালাল মল্লিক আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে পুলিশের পক্ষে দায়ের করা মামলার বাদী। এ আবেদনেও পাঁচ আনসার সদস্যের নাম উল্লেখ না করাসহ অজ্ঞাতনামা আরও ৪০-৫০ জনকে আসামি করা হয়।
আদালতে দায়ের করা মামলার ওই দুই আবেদনে বলা হয়েছে, আসামিরা সরকারি চাকরির সুবাদে বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড করে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে। দেশে অরাজকতার সৃষ্টির পাঁয়তারা করাই তাদের পেশা ও নেশা।
আবেদন দু’টিতে বলা হয়, নগরের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করার জন্য সিটি করপোরেশনের সভায় নগরের বিভিন্ন এলাকার ব্যানার-ফেস্টুন অপসারণের সিদ্ধান্ত হয়। ওই সিদ্ধান্তের কারণে ১৮ আগস্ট রাতে বরিশাল সদর উপজেলা পরিষদ চত্বরে করপোরেশনের প্রশাসনিক কর্মকর্তা স্বপন কুমার দাসের নেতৃত্বে পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা বিভিন্ন ব্যানার-ফেস্টুন অপসারণ করতে গেলে সদর ইউএনওর নিরাপত্তায় নিয়োজিত আনসার সদস্যরা বাধা দেন এবং পরিচ্ছন্নকর্মীদের মারপিট করেন। ঘটনাটি জেনে মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে যান। এসময় ইউএনও এবং তার আনসার সদস্যরা মেয়রকে হত্যার উদ্দেশ্যে গুলি ছোড়ে। করপোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মানবপ্রাচীর তৈরী করে মেয়র সাদিক আবদুল্লাহকে রক্ষা করেন। এতে বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারী গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে আওয়ামী লীগ কর্মীদের ওপর লাঠিচার্জ করে।
এদিকে এ ঘটনায় গত বৃহস্পতিবার দুপুরে কোতোয়ালী মডেল থানায় দুটি মামলা হয়েছে। একটি মামলার বাদী ইউএনও মো. মুনিবুর রহমান ও অপর মামলার বাদী এসআই শাহজালাল মল্লিক। ওই দুটি মামলায় বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহকে প্রধান আসামি করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, বরিশাল সদর উপজেলা পরিষদ চত্বরে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে লাগানো বিলবোর্ড-ব্যনার বুধবার রাত ১০টায় অপসারণ করতে যায় সিটি করপোরেশরেন কর্মী পরিচয়ে একদল ছাত্রলীগ-যুবলীগ নেতাকর্মী। এতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মুনিবুর রহমান বাধা দিলে তার সরকারি বাসভবনে হামলা ও পুলিশের সঙ্গে তুমুল সংঘর্ষ হয় ছাত্রলীগ-যুবলীগ কর্মীদের।