প্রেমিকাকে জন্মদিনের উপহার দিতে জামায়াত নেতার বাড়ি গিয়ে ধরা শিবির নেতা

ফেনী প্রতিনিধি

শিবির নেতা হামিদুর রহমান আজাদ

ফেনীর সোনাগাজীতে এক জামায়াত নেতার মেয়েকে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগে হামিদুর রহমান আজাদ (২৬) নামে সাবেক শিবির নেতাকে খুঁটিতে বেঁধে নির্যাতনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় দুই পরিবারের পক্ষ থেকে পাল্টাপাল্টি মামলা দায়ের করা হয়েছে।

সাবেক শিবির নেতা হামিদুর রহমান আজাদ ও জামায়াত নেতার ছেলে সৌদি প্রবাসী দীন মোহাম্মদকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তাদের দুইজনকে সোমবার দুপুরে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে।

universel cardiac hospital

রোববার রাতে বগাদানা ইউনিয়নের তাকিয়া বাজার সংলগ্ন পাইকপাড়া গ্রামের তাকিয়া বাজার সংলগ্ন আশ্রাফ আলী কবিরাজ বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। দুই পরিবারের পক্ষ থেকে পরস্পরবিরোধী বক্তব্য পাওয়া গেছে।

এলাকাবাসী, পুলিশ ও ভুক্তভোগীদের পরিবারের সদস্যরা জানান,উপজেলার বগাদানা ইউনিয়ন জামায়াতের সেক্রেটারি ও চরমজলিশপুর ইউনিয়নের একটি দাখিল মাদ্রাসার শিক্ষক আবদুল হাইয়ের এক কন্যা ও এক পুত্রকে প্রায় পাঁচ বছর আগে থেকে প্রাইভেট পড়াতেন সোনাগাজী উপজেলা ছাত্রশিবিরের উত্তর শাখার সাবেক সভাপতি হামিদুর রহমান আজাদ। সেই সূত্রে গত দুই বছর থেকে জামায়াত নেতার স্কুলপড়ুয়া কন্যা (নবম শ্রেণির) ছাত্রীর সঙ্গে আজাদের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে।

রোববার রাত ৮টার দিকে ওই ছাত্রীর জন্মদিনের উপহার দিতে গিয়ে রাতে তাদের ঘরের একটি কক্ষে লুকিয়ে থাকেন। রাত ১টার দিকে জামায়াত নেতা আবদুল হাই ও তার পুত্র দীন মোহাম্মদ টের পেয়ে আজাদকে আটক করে বেধড়ক পিটিয়ে ঘরের সামনে বৈদ্যুতিক খুঁটির সঙ্গে বেঁধে শারীরিক নির্যাতন চালায়।

ছবি তুলে দীন মোহাম্মদের ফেসবুক আইডিতে খুঁটিতে বাধা আজাদের ছবি পোস্ট করেন। ফেসবুকে দেয়া পোস্টে তিনি উল্লেখ করেন- তাকিয়া বাজারে আশ্রাফ আলী কবিরাজ বাড়িতে ধরা খেয়েছে স্বর্ণ চোর, রাত ৩টায় দরজা ভেঙে ঘরে ঢুকেছে, পুলিশ প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ। মুহূর্তের মধ্যে ফেসবুকের পোস্টটি ভাইরাল হয়ে যায়। খবর পেয়ে পুলিশ আজাদকে উদ্ধার করে। সোনাগাজী হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে পুলিশ তাকে হেফাজতে নেয়।

জামায়াত নেতা আবদুল হাই অভিযোগ করেন, দীর্ঘ দুই বছর যাবত আজাদ তার স্কুলপড়ুয়া কন্যাকে প্রেম ও বিয়ের প্রস্তাবে উত্ত্যক্ত করে আসছে। বয়স কম হওয়ায় তিনি ও তার মেয়ে বিয়ে ও প্রেমের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় আজাদ রোববার রাতে সুকৌশলে ঘরে ঢুকে তার কন্যাকে জোরপূর্বক ধর্ষণের চেষ্টা চালায়। তিনি ও তার ছেলে মিলে আজাদকে আটক করে রশি দিয়ে বৈদ্যুতিক খুঁটির সঙ্গে বেঁধে রাখেন। তার ছেলের সঙ্গে ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে তার ছেলের লাঠির আঘাতে আজাদের মাথা ফেটে যায়। তিনি আজাদকে একমাত্র আসামি করে তার স্কুলপড়ুয়া কন্যাকে ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগে মামলা দায়ের করেছেন।

অপরদিকে আজাদের পিতা বেলাল হোসেন অভিযোগ করেন, আবদুল হাইয়ের কন্যাকে প্রাইভেট পড়ানোর সূত্র ধরে তার ছেলের সঙ্গে ওই স্কুলছাত্রীর প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। ২৯ আগস্ট রোববার মেয়েটির জন্মদিন ছিল। বিষয়টি তার ছেলেকে জানালে সে দুই প্যাকেট লজেন্স ও একটি কলম উপহার নিয়ে তার বাড়িতে যায়। রাতে সেখানে খাওয়া-দাওয়াও করে। কিন্তু গভীর রাতে তার ছেলেকে নির্মমভাবে বৈদ্যুতিক খুঁটির সঙ্গে বেঁধে শারীরিক নির্যাতন চালিয়ে আহত করে। তাতে তারা ক্ষান্ত হয়নি। দরজা ভেঙে ঘরে প্রবেশ করে কথিত স্বর্ণ চুরির অভিযোগ এনে খুঁটির সঙ্গে বাঁধা ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছেড়ে দেন দীন মোহাম্মদ। অথচ তাদের ঘরের দরজা ভাঙা বা স্বর্ণ চুরির কোনো ঘটনাই ঘটেনি। তাই তিনি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দীন মোহাম্মদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন।

শিবির নেতা হামিদুর রহমান আজাদ বর্তমানেও জেলা ছাত্রশিবিরের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত রয়েছেন। তিনি বগাদানা ইউনিয়নের চরবদরপুর গ্রামের সিরাজ নেতার বাড়ির বেলাল হোসেনের ছেলে। জামায়াত নেতা আবদুল হাই একই ইউনিয়নের পাইকপাড়া গ্রামের আশ্রাফ আলী কবিরাজ বাড়ির বাসিন্দা।

সোনাগাজী মডেল থানার ওসি সাজেদুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগে হামিদুর রহমান আজাদ ও খুঁটির সঙ্গে বেঁধে ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগে দীন মোহাম্মদকে গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে।

শেয়ার করুন