আরও একবার জাতীয় দলের হয়ে ম্যাচ জেতানো পারফরম্যান্স উপহার দিলেন আর্জেন্টাইন জাদুকর লিওনেল মেসি। ক্লাব ফুটবলে হিরো আর আন্তর্জাতিকে জিরো-র তকমাটা আরও একবার অমূলক প্রমাণ করলেন তিনি। একা হাতে জাদুকরী পারফরম্যান্সে জয় এনে দিলেন দলকে।
দীর্ঘ ১৮ মাস পর দর্শক ফিরেছে আর্জেন্টিনার মাঠে। সেই দর্শকদের উন্মাতাল করে দিয়ে পরপর তিনবার গোল করেছেন মেসি। অধিনায়কের হ্যাটট্রিকের সুবাদেই বিশ্বকাপ বাছাইয়ে নিজেদের নবম ম্যাচে বলিভিয়াকে ৩-০ গোলে হারিয়েছে আর্জেন্টিনা । এখন শুধু বাকি রয়েছে ব্রাজিলের বিপক্ষে স্থগিত থাকা অষ্টম ম্যাচটি।
আর্জেন্টিনার হয়ে এর আগেও হ্যাটট্রিক করেছেন মেসি। তবে এর সবগুলোই ছিলো প্রীতি ম্যাচ বা অপ্রতিযোগিতামূলক ম্যাচে। এবারই প্রথমবারের মতো আর্জেন্টিনার জার্সি গায়ে প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচেও হ্যাটট্রিক তুলে নিলেন মেসি। যা তার আন্তর্জাতিক গোলসংখ্যাকে উন্নীত করেছে ৭৯-তে।
শুক্রবার বাংলাদেশ সময় ভোরে নিজেদের ঘরের মাঠ এল মনুমেন্টালে হওয়া ম্যাচটিতে শুরু থেকেই ছন্দে ছিলেন মেসি। প্রথম গোলটি করেন ম্যাচের ১৪ মিনিটে। পরে দ্বিতীয়ার্ধে ম্যাচে ৬৪ ও ৮৮ মিনিটে আরও দুইবার স্কোরশিটে নাম তুলে নিজের হ্যাটট্রিক পূরণ করেন মেসি। যা তার দলকে এনে দিয়েছে ৩-০ গোলের জয়।
এই হ্যাটট্রিকের ম্যাচে আন্তর্জাতিক ফুটবলে গোলসংখ্যায় ৭৭ গোল করা ব্রাজিলিয়ান কিংবদন্তি পেলেকে পেছনে ফেলে দিয়েছেন মেসি। একইসঙ্গে লাতিন আমেরিকান অঞ্চলে সর্বোচ্চ গোলের মালিক হয়ে গেছেন লিওনেল আন্দ্রেস মেসি। জাতীয় দলের হয়ে সপ্তম হ্যাটট্রিকের পর তার গোলসংখ্যা এখন ৭৯টি।
এল মনুমেন্টালে প্রায় ৭০ শতাংশ সময় বলের দখল নিজেদের নিয়ন্ত্রণেই রেখেছিল আর্জেন্টিনা। গোলের জন্য ২৪টি প্রচেষ্টা চালায় তারা। যার মধ্যে সাতটি ছিলো লক্ষ্য বরাবর। তবে গোলের দেখা পেয়েছে শুধুমাত্র মেসির তিনটি শট। যার প্রথমটি ছিলো ম্যাচের ১৪ মিনিটের সময়।
ডি-বক্সের বাইরে লেয়ান্দ্র পারেদেসের কাছ থেকে ছোট করে পাওয়া পাসে প্রতিপক্ষ ডিফেন্ডার লুইস হাকিনকে পরাস্ত করে আচমকাই বাম পায়ের শট নেন মেসি। প্রায় ২০ গজ দূর থেকে তার এই উঁচু শট চেয়ে দেখা ছাড়া কিছুই করার ছিলো না বলিভিয়া গোলরক্ষকের।
এই এক গোলের লিড নিয়েই বিরতিতে যায় আর্জেন্টিনা। দ্বিতীয় গোলের জন্য অপেক্ষা করতে হয় দ্বিতীয়ার্ধে ম্যাচের ৬৪ মিনিট পর্যন্ত। অবশ্য এর আগে ২৭ মিনিটের সময়েই বল জালে জড়িয়েছিলেন লাউতারো মার্টিনেজ। কিন্তু তিনি অফসাইডে থাকায় বাতিল হয় সেই গোল।
পরে ৪০ মিনিটের সময় গোলের সহজতম এক সুযোগ হাতছাড়া করেন তিনি। মেসির বাড়িয়ে দেয়া বল পেনাল্টি স্পটের কাছ থেকে বাইরে মেরে বসেন এ আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড। তবে মেসি কোনো ভুল করেননি। প্রায় একই জায়গা থেকে ম্যাচের ৬৪ মিনিটের সময় ব্যবধান দ্বিগুণ করেন আর্জেন্টাইন অধিনায়ক।
ডি-বক্সের ভেতরে সেই লাউতারো মার্টিনেজের বল দেওয়া-নেওয়ার ফাঁকে নিচু শটে দ্বিতীয় গোলটি করেন মেসি। এ প্রচেষ্টায় তার প্রথম শটটি প্রতিপক্ষ ডিফেন্ডারের গায়ে লেগে ফিরে আসে। তবে ফিরতি বল থেকে আর ভুল করেননি মেসি। এই গোলের মাধ্যমেই পেলেকে ছাড়িয়ে লাতিন অঞ্চলের সর্বোচ্চ গোলস্কোরার হয়ে যান তিনি।
মেসি ম্যাজিকের বাকি ছিলো তখনও। ম্যাচের নির্ধারিত ৯০ মিনিট শেষ হওয়ার একটু আগে হোয়াকিন কোররেয়ার জোরালো শট ঠেকিয়ে দেন বলিভিয়ার গোলরক্ষক। তবে পুরোপুরি বিপদমুক্ত করতে পারেননি। ছুটে গিয়ে ফিরতি বলে সহজেই গোল করে নিজের হ্যাটট্রিক তুলে নেন আর্জেন্টাইন জাদুকর মেসি।
তার হ্যাটট্রিকে পাওয়া জয়ে পয়েন্ট টেবিলের দ্বিতীয় স্থান আরও শক্ত হলো আর্জেন্টিনার। লাতিন অঞ্চলের বিশ্বকাপ বাছাইয়ে আট ম্যাচে ৫ জয় ও ৩ ড্রয়ে আর্জেন্টিনার পয়েন্ট এখন ১৮। সবার ওপরে আট ম্যাচে পূর্ণ ২৪ পয়েন্ট পাওয়া ব্রাজিল। বলিভিয়া রয়েছে ৯ নম্বরে।