পরিবহনশূন্য রাজধানীর সড়ক, ভোগান্তিতে পরীক্ষার্থীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক

পরিবহনশূন্য রাজধানীর সড়ক
ফাইল ছবি

ভয়াবহ যানজটের এ শহরে আজ নেই একটুও যানজট, নেই একটি বাসের সঙ্গে অন্য বাসের অসুস্থ প্রতিযোগিতা। ট্রাফিক সিগন্যালগুলোতে নেই বাস, যানবাহনের দীর্ঘ সারি, বাসের হেলপারের চিরচেনা হাঁকডাকও শোনা যাচ্ছে না।

রাজধানী ঢাকার রাস্তায় আজ কোনো বাস চলাচল করছে না, ফলে অন্য একটি রূপ পেয়েছে ঢাকা। যদিও গণপরিবহন বন্ধ থাকায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন ঘর থেকে বের হওয়া মানুষজন। বিশেষ করে ভর্তি ও চাকরির পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারীরা পড়েছেন বিপাকে।

জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের ডাকা ‘ধর্মঘট’ শুরুর কারণেই ভিন্ন রূপ পেয়েছে ব্যস্ত এ নগরী। পূর্বঘোষিত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে এ ধর্মঘট শুরু হয়।

অন্যদিকে ট্রাক ও পণ্যবাহী পরিবহনের মালিকরা ধর্মঘটের ডাক দিলেও বৃহস্পতিবার সারাদিন বাস ধর্মঘটের বিষয়টি নিয়ে ধোঁয়াশা ছিল। তবে রাতে এ বিষয়টি পরিষ্কার করে সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি। সংগঠনটি জানায়, পণ্যবাহী যানের পাশাপাশি শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে বাস চালাবেন না মালিকরা। তবে সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি আনুষ্ঠানিকভাবে ধর্মঘটের ডাক দেয়নি।

চাকরিপ্রার্থীদের ভোগান্তি

রাজধানীর মহাখালী রাস্তায় দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করছিলেনের তেজগাঁও এলাকার বাসিন্দা জাহিদুর রহমান। তিনি বলেন, একটি জরুরি কাজের জন্য উত্তরা যেতে হবে। কিন্তু বাইরে এসে দেখি কোনো বাসই চলছে না। যানজটের এই শহরে কোনো যানজট নেই, নেই কোনো গণপরিবহন। কেরোসিন-ডিজেলের দাম বাড়িয়েছে সরকার কিন্তু পরিবহন মালিকদের সঙ্গে সমন্বয় করেনি। এছাড়া গণপরিবহন মালিকদের যা ইচ্ছে তা করার সুযোগ দিয়ে সাধারণ মানুষকে সীমাহীন ভোগান্তিতে ফেলা হয়েছে।

রাজধানীর রামপুরা ব্রিজ সংলগ্ন সড়কে কথা হয় গাইবান্ধা থেকে চাকরি পরীক্ষা দিতে আসা এক চাকরি প্রার্থী তোফাজ্জল হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, আজ এবং আগামীকাল আমার চাকরির পরীক্ষা আছে। সেসব পরীক্ষা দিতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে রাজধানীতে এসেছেন চাকরিপ্রার্থীরা। গাইবান্ধা থাকে সারা রাত ভ্রমণ করে ঢাকায় পৌঁছাই। নামার পর থেকে কোনো বাস নেই। শুধু আছে সিএনজিচালিত অটোরিকশা কিন্তু ভাড়া অনেক বেশি। আমার মতো অসংখ্য পরীক্ষার্থী আজ ধর্মঘটের কারণে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন।

তিনি বলেন, পরিবহন ধর্মঘটের নামে সাধারণ মানুষকে বিপদে ফেলা হয়েছে। ডিজেলের দাম বেড়েছে, তাই ভাড়ার চাপ সাধারণ মানুষের ওপরেই পড়বে এটা নিশ্চিত। কিন্তু তবুও আমাদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।

অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছেন অটোরিকশার চালকরা

পরিবহন ধর্মঘটের সুযোগে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছেন সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালকরা। কম যান না রিকশাচালকরাও।

রাজধানীর গুলশান-বাড্ডা লিংক রোডের সামনে থেকে মিরপুর যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছিলেন আলমগীর হোসেন নামে এক যাত্রী। তিনি বলেন, জরুরি কাজে যাব মিরপুর ১০ নম্বরে, কিন্তু কোনো বাস পাওয়া যাচ্ছে না। শুধু আছে সিএনজিচালিত অটোরিকশা। কিন্তু গণপরিবহন বন্ধ থাকার সুযোগে আমাদের জিম্মি করে তারা অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে। ২০০ টাকার ভাড়া তারা ৩৫০-৪০০ টাকা আদায় করছে। দাম বাড়লে দুর্ভোগ হয় সাধারণ মানুষের। কিন্তু হঠাৎ ডিজেলের দাম বাড়িয়ে মানুষকে এমন ভোগান্তিতে ফেলে দেওয়া হয়েছে। গণপরিবহন মালিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করলে, তারা আর এমনটি করার সাহস পেত না।

রাজধানীর মালিবাগ এলাকায় কথা হয় সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালক মান্নান মিয়ার সঙ্গে। তিনি বলেন, যেহেতু সব ধরনের বাস চলাচল বন্ধ তাই যাত্রীরা ভোগান্তিতে পড়েছেন। আমাদেরও কিছু করার নেই। আমাদের খরচও বেশি, তাই ভাড়া এখন বেশিই নিতে হচ্ছে। মালিবাগ থেকে আব্দুল্লাহপুর পর্যন্ত ভাড়া চেয়েছি ৪০০ টাকা কিন্তু যাত্রীরা বেশি ভাড়া মনে করে গেল না। অথচ এখন চারজন আলাদা যাত্রীকে জন প্রতি ১৫০ টাকা করে নিয়ে যাচ্ছি। এতে আমারও লাভ, যাত্রীদেরও লাভ। যেহেতু রাজধানীর রাস্তায় কোনো বাস নেই, তাই যাতায়াতে তো যাত্রীদের একটু বেশি ভাড়াই দিতে হবে।

শেয়ার করুন