বাসের পরে এবার বাড়লো লঞ্চভাড়া, ধর্মঘট প্রত্যাহার

নিজস্ব প্রতিবেদক

ডিজেলের দাম বাড়ানোর পরিপ্রেক্ষিতে বাসের পরে এবার বাড়লো লঞ্চভাড়াও। কম দূরত্বে লঞ্চের ভাড়া ৩৫ দশমিক ২৯ শতাংশ ও বেশি দূরত্বের ক্ষেত্রে ৪২ শতাংশ ভাড়া বাড়ানো হয়েছে। একই সঙ্গে চলমান লঞ্চ ধর্মঘট প্রত্যাহার করা হয়েছে।

রোববার (৭ নভেম্বর) রাজধানীর মতিঝিলের বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) কার্যালয়ে সরকারের সঙ্গে লঞ্চ মালিকদের বৈঠকে ভাড়া বাড়ানো ও ধর্মঘট প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

universel cardiac hospital

লঞ্চভাড়া ১০০ কিলোমিটার পর্যন্ত ১ টাকা ৭০ পয়সার পরিবর্তে ২ টাকা ৩০ পয়সা ও ১০০ কিলোমিটারের ঊর্ধ্বে ১ টাকা ৪০ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ২ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। জনপ্রতি সর্বনিম্ন ভাড়া ১৮ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩০ টাকা করা হয়েছে।

বিকেল ৩টা ৫০ মিনিটে বিআইডব্লিউটিএ চেয়ারম্যান কমোডোর গোলাম সাদেকের সভাপতিত্বে বৈঠক শুরু হয়। বৈঠক চলে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত।

বৈঠক শেষে বিআইডব্লিউটিএ চেয়ারম্যান সাংবাদিকদের এই সিদ্ধান্তের কথা জানান। চেয়ারম্যান আরও বলেন, ‘আশা করি আমরা শিগগির ভাড়া বাড়ানোর বিষয়ে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করতে পারবো। সেই অনুযায়ী প্রত্যেক লঞ্চঘাটে ভাড়ার তালিকা থাকবে।’

আজ থেকেই এই ভাড়া কার্যকর হবে বলেও জানান বিআইডব্লিউটিএ চেয়ারম্যান।

বিআইডব্লিউটিএ চেয়ারম্যান বলেন, সর্বশেষ ২০১৩ সালে ভাড়া বাড়ানো হয়েছিল। এরপর আর ভাড়া সমন্বয় করা হয়নি। তখন ১০০ কিলোমিটার পর্যন্ত প্রতি কিলোমিটারে ভাড়া এক টাকা ৭০ পয়সা ছিল। এর বেশি দূরত্বের জন্য প্রতি কিলোমিটারে ছিল এক টাকা ৪০ পয়সা। সেই অনুযায়ী এবার আমরা ভাড়া নির্ধারণের জন্য আলোচনায় বসেছিলাম। এছাড়া সর্বনিম্ন ভাড়া জনপ্রতি ছিল ১৮ টাকা।

এর মধ্যে মালিকদের দাবির প্রেক্ষিতে ভাড়া বাড়ানোর জন্য একটি কমিটি কাজ করছিল জানিয়ে চেয়ারম্যান বলেন, এরই মধ্যে তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে। মালিকরা জরুরিভাবে ভাড়া সমন্বয়ের দাবি জানিয়েছেন। এই কমিটির একটা হিসাব ছিল সেগুলো নিয়ে আমরা বিবেচনা করেছি। এছাড়া মালিকপক্ষ গত পরশুদিন বসে একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। আমরা সবকিছু বিবেচনায় নিয়ে ফলপ্রসূভাবে আলোচনা করেছি। যাতে যাত্রীদের কষ্ট না হয়, সাধারণ মানুষের যাতে ভোগান্তি না হয় সবকিছু বিবেচনা করেছি। আবার মালিকরাও যাতে ক্ষতির সম্মুখীন না হয় সেটিও বিবেচনা করেছি। ৮ বছর পর আমরা ভাড়া সমন্বয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

অভ্যন্তরীণ নৌ চলাচল (যাপ) সংস্থার সভাপতি মাহবুব উদ্দিন বলেন, ২০১৩ সালের পর এই প্রথম আমরা ভাড়া সমন্বয় করতে পারলাম। মালিক ভাইদের বিগত সময়ের দুঃখ-বেদনা, লোকসান বিবেচনা করে, মালিকদের সঙ্গে আলোচনা করেই আমরা এটা করেছি। আশা করছি, মালিক ভাইয়েরা এই মুহূর্ত থেকে তাদের যে কাজ করার অনীহা ছিল, বলেছিলেন জাহাজ চালানো আমাদের জন্য আর লাভজনক নেই, আমরা আর জাহাজ চালাতে পারবো না, তারা প্রত্যেকে নিজ নিজ সিদ্ধান্তে গতকাল বিকেল থেকে জাহাজ পরিচালনা বন্ধ রেখেছিলেন; আমি তাদের অনুরোধ করবো—এখন থেকে আপনারা এই ভাড়া অনুযায়ী জাহাজ পরিচালনা শুরু করেন। এর সরকারি প্রজ্ঞাপন আপনারা অতিসত্বর বিআইডব্লিউটিএ পক্ষ থেকে পেয়ে যাবেন। আশা করি, যে অসুবিধাগুলো ছিল সেগুলো দূর হয়ে যাবে।

বৈঠকে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ চলাচল (যাপ) সংস্থার সভাপতি মাহবুব উদ্দিন আহমদ ও সিনিয়র ভাইস-প্রেসিডেন্ট বদিউজ্জামান বাদল, বাংলাদেশ লঞ্চ মালিক সমিতির মহাসচিব শহিদুল ইসলাম ভূঁইয়া, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব আমিনুর রহমান, বিআইডব্লিউটিএ’র কর্মকর্তা এবং লঞ্চ মালিকরা উপস্থিত ছিলেন।

শেয়ার করুন