সিলেটের ৭৭ ইউপিতেই আওয়ামী লীগে বিদ্রোহী

সিলেট প্রতিনিধি

আওয়ামী লীগ
ফাইল ছবি

তৃতীয় ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সিলেট বিভাগের চার জেলার ৭৭ ইউপির প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। নৌকা বরাদ্দ না পেয়ে আওয়ামী লীগ থেকে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন পদের প্রায় দ্বিগুণ। প্রতীক বরাদ্দের পর তৃণমূলে বাজছে বিদ্রোহের দামামা। ফলে প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপের ইউপি নির্বাচনের মতো তৃতীয় ধাপেও চরম ঝুঁকিতে রয়েছেন নৌকা প্রতীকের প্রার্থীরা।

বিদ্রোহী অধিকাংশ প্রার্থীর অভিযোগ, যাদের বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, তাদের নৌকা প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। কিছু অদূরদর্শী নেতার কারণে নির্বাচনে নৌকা প্রতীক ও দল ডুবছে।

সিলেটের একসময়ের তুখোড় ছাত্রনেতা ফখরুল ইসলাম সাইস্তা, যিনি জেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি ছিলেন। তিনি দক্ষিণ সুরমার মোগলাবাজার ইউনিয়নের দুবারের নির্বাচিত চেয়ারম্যান। বর্তমানেও চেয়ারম্যান পদেই আছেন। সম্প্রতি তৃণমূলের চেয়ারম্যান প্রার্থী মনোনয়নের সময় তিনি ছিলেন দেশের বাইরে। তারপরও সর্বোচ্চ ভোটে তৃণমূলের মনোনয়ন পান তিনি। কিন্তু দলের মনোনয়ন ও নৌকা প্রতীক জোটেনি তার ভাগ্যে। উলটো বহিষ্কারের হুমকি দেওয়া হচ্ছে দল থেকে। ফলে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর চিন্তা করেন। কিন্তু এলাকার জনগণ তাকে প্রার্থী হতে বাধ্য করেছেন। তার বক্তব্য, জনগণই আমার ভরসা। স্বতন্ত্র বা বিদ্রোহী যে নামেই ডাকা হোক-আমি ঘোড়া প্রতীক নিয়ে নির্বাচনি দৌড়ে আছি।

জৈন্তাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আমিনুর রশীদ। তিনি চিকনাগুল ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান। তিনিও পাননি নৌকা প্রতীক। দুটি পাতা প্রতীক নিয়ে প্রার্থী হয়েছেন। তিনি যুগান্তরকে বলেন, নৌকা প্রতীক পাইনি। উলটো দলের পক্ষ থেকে প্রার্থী না হওয়ার জন্য হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে। জনগণের দাবিতেই নির্বাচন করছি।

বিদ্রোহী প্রার্থীদের ব্যাপারে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নাসির উদ্দিন বলেন, প্রতি ইউনিয়নে নৌকা একটাই, কিন্তু প্রার্থী অনেক। কাজেই অনেকে স্বতন্ত্র নির্বাচন করছেন। স্বতন্ত্র প্রার্থীরা পাশও করছেন।

সিলেটের সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার ৯ ইউনিয়নে ১৪ জন এবং শান্তিগঞ্জ উপজেলার ৮ ইউনিয়নে ১২ জন বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন। হবিগঞ্জ সদর উপজেলায় বিদ্রোহী হয়েছেন ৮ জন এবং নবীগঞ্জে হয়েছেন ১৬ জন। বিদ্রোহীদের দামামা বাজছে মৌলভীবাজারেও। সিলেটের গোয়াইনঘাটের ৬ ইউনিয়নের মধ্যে নন্দীরগাঁও ইউনিয়নে নৌকা পেয়েছেন এস কামরুল হাসান আমিরুল। বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন সিরাজুল ইসলাম সিরাজ ও হীরক দে।

রুস্তমপুর ইউনিয়নে নৌকা পেয়েছেন হেলাল উদ্দিন, আর বিদ্রোহী প্রার্থী এমএ মতিন। লেঙ্গুড়া ইউনিয়নে নৌকা প্রতীকে মুজিবুর রহমান মুজিব, বিদ্রোহী প্রার্থী গোলাম কিবরিয়া রাসেল। তোয়াকুল ইউনিয়নে নৌকা প্রতীক পেয়েছেন লোকমান হোসেন ও বিদ্রোহী সামছুদ্দিন। ফতেহপুর ইউনিয়নে নৌকা প্রতীক পেয়েছেন নাজিম উদ্দিন ও বিদ্রোহী প্রার্থী আমিনুর রহমান চৌধুরী। ডৌবাড়ি ইউনিয়নে নৌকা পেয়েছেন শুভাস দাস এবং বিদ্রোহী প্রার্থী এম নিজাম উদ্দিন।

২৮ নভেম্বর সিলেট বিভাগের ৯টি উপজেলার ৭৭টি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে সিলেট জেলার দক্ষিণ সুরমা, গোয়াইনঘাট ও জৈন্তাপুর উপজেলার ১৬টি ইউনিয়ন, সুনামগঞ্জ সদর ও দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার ১৭টি ইউনিয়ন, মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা ও কুলাউড়া উপজেলার ২৩টিতে এবং হবিগঞ্জ সদর ও নবীগঞ্জ উপজেলার ২১টি ইউনিয়নে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

শেয়ার করুন