কৃষকদের দীর্ঘদিনের আন্দোলনের সামনে অবশেষে হার মানলো বিজেপি সরকার। বিতর্কিত সেই তিন কৃষি আইন প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছেন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। শুধু তাই নয়, এতদিনের দুর্ভোগের কারণে দেশবাসীর কাছে ক্ষমাও চেয়েছেন তিনি।
শুক্রবার (১৯ নভেশ্বর) জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে নরেন্দ্র মোদী বলেন, আমি দেশবাসীর কাছে ক্ষমা চাচ্ছি। আমাদের হয়তো তপস্যাতেই খামতি ছিল। তাই কৃষি আইন প্রত্যাহার করা হচ্ছে। এ মাসে শুরু হতে চলা সংসদ অধিবেশনে আইনগুলো প্রত্যাহার করা হবে। সবাইকে অনুরোধ করছি, আসুন, আন্দোলন ছেড়ে নতুন দিনের সূচনা করি। এবার আপনারা মাঠে ফিরে যান, পরিবারের কাছে যান।
ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের ১০০ জনের মধ্যে ৮০ জন ক্ষুদ্র কৃষক। তাদের জমির পরিমাণ দুই হেক্টরের কম। তাদের জীবনের আধার এই ছোট জমিটুকু। এমন কৃষক রয়েছে প্রায় ১০ কোটি। এই ছোট জমিতেই তারা নিজেদের পরিবারের মুখে খাবার তুলে দিতে কাজ করছে। তাই বীজ, বীমা, বাজার আর সেভিংসের ক্ষেত্রে কাজ করেছি। আমরা ফসল বীমা যোজনাকে আরও কার্যকরী করেছি। পশুপালন ও মাছচাষের সঙ্গে যুক্ত কৃষকরা কিষাণ ক্রেডিট কার্ডের সুবিধা পেতে শুরু করেছেন। কৃষককদের সামাজিক পরিস্থিতির উন্নয়নে সরকার কাজ করছে।
মোদী বলেন, দেশের ক্ষুদ্র কৃষকদের কথা ভেবেই তিনটি কৃষি বিল আনা হয়েছিল। দেশের কৃষক সংগঠন, কৃষি অর্থনীতিবিদদের এই দাবি বহুদিনের। আগের সরকারও এ নিয়ে ভেবেছে। এরপরই সংসদে কৃষি বিল নিয়ে আলোচনা করে তা পাস করানো হয়। কয়েক কোটি কৃষক এই বিলকে সমর্থন জানিয়েছেন। ভালো মনে এই আইন আনা হয়েছিল। কৃষকদের স্বার্থে আনা এই বিল আমরা কয়েকজনকে বোঝাতে পারিনি। সেই কয়েকজন কৃষকই এর বিরোধিতা করছেন। তবু সেটিও আমাদের জন্য বড় বিষয়। তাদের বোঝাতে চেয়েছি, আমরাও তাদের কথা বোঝার চেষ্টা করেছি। সরকার আইন বদলাতে রাজি ছিল। এর মধ্যেই মামলাটি সুপ্রিম কোর্টে চলে যায়।
এর আগে বিতর্কিত তিনটি কৃষি আইন স্থগিত রাখতে কেন্দ্রীয় সরকারকে নির্দেশনা দেন ভারতের সর্বোচ্চ আদালত।
ওই তিন কৃষি আইনের বিরুদ্ধে ভারতে বহুদিন ধরে আন্দোলন করছেন কৃষকরা। আন্দোলন-বিক্ষোভে ঘটেছে প্রাণহানির ঘটনাও। তবু রাজপথ ছাড়েননি কৃষকরা। দফায় দফায় বৈঠক হয়েছে কেন্দ্রীয় কমিটির সঙ্গে, তবে বিষয়টির সুরাহা হয়নি। করোনা মহামারির মধ্যেও আন্দোলন চালিয়ে যান কৃষকরা। অবশেষে তাদের দাবি মেনে নিলো মোদী সরকার।