করোনা মহামারির প্রায় দুই বছর পরও বিশ্বজুড়ে পর্যটন খাতে শঙ্কা কাটছে না। এরই মধ্যে নতুন আতঙ্ক হয়ে ধরা দিয়েছে করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রন। সর্বপ্রথম দক্ষিণ আফ্রিকায় অতি সংক্রামক এই ধরনটি শনাক্ত হয়। কিন্তু এর মধ্যেই বিশ্বের আরও বেশ কয়েকটি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে ওমিক্রন। যদিও করোনার টিকা আবিষ্কার এবং কার্যক্রম বিশ্বব্যাপী জোরদার হওয়ার পর করোনা ইস্যুতে বিশ্বব্যাপী অনেকটাই গা-ছাড়া ভাব দেখা যাচ্ছিল।
কিন্তু করোনা মহামারি ঠেকাতে বিশ্বের অধিকাংশ দেশ আবারও সীমান্তে নিষেধাজ্ঞা, লকডাউন ও বিধিনিষেধে ফিরতে শুরু করেছে। ফলে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে অর্থনীতিতে। বিশেষ করে সবচেয়ে বেশি লোকসানের মুখে রয়েছে পর্যটনখাতের ওপর নির্ভরশীল দেশগুলো।
২০২০ সালের মতো ২০২১ সালে এসেও অর্থনীতির পুনরুদ্ধার তো দূরের কথা আবারও পর্যটন খাতে ধস নামতে যাচ্ছে। জাতিসংঘের পর্যটনবিষয়ক সংগঠনের (ইউএনডব্লিউটিও) সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে পরিস্থিতি সম্পর্কে বলা হয়েছে, ২০২১ সালেও বৈশ্বিক পর্যটন খাত রাজস্ব হারাবে ২ লাখ কোটি মার্কিন ডলার। এক্ষেত্রে স্বাস্থ্যখাতে তৈরি হওয়া সংকট সবচেয়ে বেশি নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।
সংস্থাটি বলছে, সম্প্রতি ওমিক্রন আতঙ্ক বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ায় ডজনখানেক দেশ আবারও ভ্রমণে বিধিনিষেধ এনেছে। কড়াকড়ি নিয়ম জারি হচ্ছে টিকার ডোজ সম্পন্ন না করা ভ্রমণকারীদের ওপর। ফলে ছুটির মৌসুমেও বিভিন্ন দেশে ভ্রমণের বিষয়টি অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে।
ওমিক্রনের প্রভাব পড়েছে বিশ্বের তেলের বাজার ও বৈশ্বিক পণ্য সরবরাহের ক্ষেত্রেও। ইউএনডব্লিউটিওর সর্বশেষ তথ্য-উপাত্ত থেকে জানা গেছে, বৈশ্বিক পর্যটক সংখ্যা ২০১৯ সালের চেয়ে ৭০ থেকে ৭৫ শতাংশ কমে যাবে। একই অবস্থা ছিল ২০২০ সালেও।
সংস্থাটির তথ্য বলছে, ২০২০ সালের সঙ্গে তুলনা করলে গত জুলাই থেকে সেপ্টেম্বরে পর্যটক নিবন্ধনের সংখ্যা ৫৮ শতাংশ বেড়ে যায়, ২০১৯ সালে এ হার ৬৪ শতাংশ কমে গিয়েছিল। করোনা মহামারি শুরুর পর মাসিক হিসাব অনুযায়ী, আগস্ট এবং সেপ্টেম্বরে এ সংখ্যা কমে ৬৩ শতাংশে চলে আসে, যা ২০১৯ সালের চেয়েও কম।
সংস্থাটি আরও জানায়, ২০২১ সালের জানুয়ারি ও সেপ্টেম্বরের মধ্যে আন্তর্জাতিক পর্যটক সংখ্যা ২০২০ সালের তুলনায় ২০ শতাংশ কম। এটি স্পষ্ট যে প্রথম ছয় মাসে পর্যটকের সংখ্যা ৫৪ শতাংশ কমেছে।
কিছু উপ-অঞ্চল যেমন সাউদার্ন ও মেডিটেরেনিয়ান ইউরোপ, ক্যারাবিয়ান অঞ্চল, নর্থ ও সেন্ট্রাল আমেরিকায় ২০২১ সালের প্রথম নয় মাসে পর্যটক সংখ্যা বাড়তে শুরু করে। চলতি বছর এশিয়া ও প্যাসিফিক অঞ্চলে ২০১৯ সালের তুলনায় ৯৫ শতাংশ কম ছিল। আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যে ২০২১ সালের তুলনায় ২০১৯ সালে ৭৪ ও ৮১ শতাংশ কম ছিল।
জুলাই থেকে সেপ্টেম্বরে ক্রোয়েশিয়া, মেক্সিকো এবং তুরস্ক প্রায় বিধিনিষেধ তুলে নেয়। এছাড়া গ্রীষ্মকালে উত্তর গোলার্ধে আন্তর্জাতিকভাবে পর্যটক সংখ্যা বেড়ে যায়, আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠে পর্যটন খাত। এর পেছনের কারণ হচ্ছে টিকা কার্যক্রম জোরদার এবং অনেক দেশেই বিধিনিষেধ ঢিলেঢালা করা হয়। ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর জিডিটাল কোভিড সনদের কারণেও বাড়ে পর্যটক সংখ্যা। কিন্তু ওমিক্রনের কারণে সেই সম্ভাবনায় আবারও বড় ধাক্কা আসতে পারে।
ইউএনডব্লিউটিওর প্রধান জুরাব পলিলিকাশভিলি বলেন, ২০২১ সালের তৃতীয়াংশের উপাত্ত উৎসাহব্যঞ্জক ছিল। তবে এখন ৭৬ শতাংশ কমের দিকে। করোনা মহামারির আগের অবস্থানের চেয়ে নতুন করে বিধিনিষেধের কারণে এমন অবস্থা বলে জানান তিনি।
পর্যটন খাতের ধস ঠেকাতে তিনি কিছু পরামর্শও তুলে ধরেন। তিনি বলেন, সবার জন্য টিকা নিশ্চিত করা, ভ্রমণ প্রক্রিয়া সমন্বয় করা, টিকার ডিজিটাল সনদ ব্যবস্থা করা এবং এই খাতে সহায়তা অব্যাহত রাখার ক্ষেত্রে আমাদের সর্বাত্মক চেষ্টা চালাতে হবে।