১৬ ডিসেম্বর বিজয়ের দিন। দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর স্বাধীনতার বিজয় এসেছিলো ১৯৭১ সালে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে ও নেতৃত্বে যে বিজয় এসেছিলো তার আজ ৫০ বছর পূর্ণ হলো। এক সমৃদ্ধ বাংলাদেশের প্রত্যাশায় বুক বেঁধেছেন সারা দেশের মানুষ। এই চেতনায় অভিনয়ের আঙিনায় গেল ৫০ বছরে কি অর্জন, কি অর্জন হতে পারতো সেই নিয়ে কথা বলেছেন কিংবদন্তি পরিচালক, প্রযোজক ও চিত্রনাট্যকার কাজী হায়াৎ। তিনি জানিয়েছেন কেমন বাংলাদেশ চাই- সেই প্রত্যাশার কথাও।
অর্জন
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উৎসব পালন করছি আমরা। এটা আমার কাছে যেমন গর্বের, তেমন অহংকারে। করোনা না থাকলে মনে হয় অন্য রকমভাবে আমার উদযাপন করতাম। এই ৫০ বছরে আরও বেশি বাঙালির আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে সিনেমা তৈরি করা উচিত ছিল আমাদের। কিন্ত রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক অনেক কারণে তা সম্ভব হয়নি।
এখন সরকারিভাবে তৈরি হচ্ছে এই জন্য ধন্যবাদ দিতে চাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে। তিনি যেভাবে সিনেমা শিল্প উপর নজর দিয়েছে। এই রকমভাবে আগের যে সরকার প্রধানরা ছিলেন তারা দিতো তাহলে আমরা আরও সামনে দিকে এগিয়ে যেতাম। ৫০ বছর মধ্যে কয়েক বছর বাংলা সিনেমাতে অন্ধকার যুগ গিয়েছে। যার কারণে আমার কিছুটা পিছিয়ে ছিলাম।
বর্তমানে যে ভালো মানের সিনেমা হচ্ছে। তা দেখে মনে হচ্ছে আমরা আবার সেই সোনালী যুগে চলে যাবো। কিন্তু সিনেমা দেখার পদ্ধতি চেঞ্জ হচ্ছে। সেই পদ্ধতিতে আমাদের নতুন যারা আসছে তার খাপ খাইয়ে নিচ্ছে। সেটার করণ কিন্তু নতুন পরিচালক, প্রযোজক, আর্টিস্টরা নানাভাবে ফিল্মের উপর পড়াশোনা করে আসছে বলে।
বাংলাদেশে এখন সরকারি, বেসরকারি অনেক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সিনেমার উপরে ডিগ্রি নেয়া যাচ্ছে। এটাও একটা বিপ্লব কিন্তু। যার কারণে সিনেমার ভাবনা ও নির্মাণের মান ভালো হচ্ছে। কয়েক বছরে মধ্য কলকাতার সিনেমার মতো আমাদের সিনেমাও একটা বাঁক নেবে।
সম্প্রতি কয়েকটা সিনেমা মুক্তি পেয়েছে। সেইখানে দেখবেন নায়ক নায়িকা কোনো বেপার নাই। এইখানে চরিত্র প্রধান গল্প যা এখন দর্শক দেখতে চায়। বর্তমানে সবাই নায়ক ও নায়িকা থেকে বের হয়ে চরিত্রের দিকে ফোকাস করছে। এইভাবে কাজ করলে আমি মনে করি আগামী দশ বছর লাগবে না বাংলা সিনেমা দাঁড়াতে।
আক্ষেপ ও প্রত্যাশা
একটু খারাপ লাগে যখন দেখি সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির জন্য সারা জীবন কাজ করে শেষ বয়সে অনেক কষ্ট করে জীবন-যাপন করছেন অনেকে। এই বিষয়টার যদি কোনো ব্যবস্থা করা যেতো। আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে বলবো বিনোদন তো একটা অংশ জীবনের। সেই কাজটা যে লোক করছে তাকে সরকারিভাবে শেষ জীবনে পেনশনের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। সবার তো অনেক টাকা পয়সা কামানো হয় না। কিন্তু শ্রম বা মেধা বা অবদান তারও অনেক। তার প্রতিও সমাজের দায়িত্ব রয়েছে। শিল্পের চর্চা করা মানুষকে শেষ বয়সে ভিক্ষা করলে মানায় না। এটা ওই সমাজের জন্য অবক্ষয়। বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই দিকটায় নজর দেবেন এই আমার বিশেষ প্রার্থনা।