বিচারপ্রার্থীদের আদালতের বারান্দায় যেন ঘোরাঘুরি করতে না হয়: রাষ্ট্রপতি

নিজস্ব প্রতিবেদক

মো. আবদুল হামিদ
মহামান্য রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। ফাইল ছবি

আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির সব সুযোগ-সুবিধা ব্যবহার করে মামলা ব্যবস্থাপনায় গতি আনার তাগিদ দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ। মামলার রায়ের পর এর কপির জন্য যেন বিচারপ্রার্থীকে আদালতের বারান্দায় ঘোরাঘুরি করতে না হয় সে ব্যাপারে বিচারপতিদের তৎপর হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

আজ শনিবার বিকালে ‘বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট দিবস-২০২১’ উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি এসব কথা বলেন। সুপ্রিম কোর্টের জাজেস স্টোর্টস কমপ্লেক্সে আয়োজিত অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন রাষ্ট্রপতি।

universel cardiac hospital

বিচারকাজ দ্রুত করার তাগিদ দিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, দেশের সব আদালতের কার্যক্রম ডিজিটাল পদ্ধতিতে সম্পন্ন করার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এতে বিচার কার্যক্রমে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে। সুপ্রিম কোর্ট যেহেতু কোর্ট অব রেকর্ড সেহেতু এর সব নথিকে ডিজিটাল নথিতে পরিণত করার উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে এবং মামলা দায়ের থেকে রায় ঘোষণা পর্যন্ত সমস্ত কার্যক্রমকে ডিজিটাল পদ্ধতিতে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করাও জরুরি।

আবদুল হামিদ বলেন, ইতিমধ্যে সুপ্রিম কোর্টে অনলাইন কজলিস্ট চালু হয়েছে এবং অনলাইন বেল কনফার্মেশন ব্যবস্থা কার্যকরভাবে চলছে। বিচার কাজ একটা জটিল বিষয়। বিচারকদের আরও বেশি কাজ করার অনুরোধ করছি। কেননা মামলার পরিমাণ দিন দিন যে হারে বাড়ছে সেটাকে আয়ত্তের মধ্যে আনতে হবে।

রাষ্ট্রপতি বলেন, সরকার বিচার বিভাগের স্বাধীনতায় দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে এবং বিচারকদের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির জন্য আন্তরিক প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে। বিচার বিভাগের আধুনিকায়নে সরকার অত্যন্ত আন্তরিক এবং এ লক্ষ্য অর্জনে ই-জুডিসিয়ারি প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ হাতে নেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, বিচারকদের খেয়াল রাখতে হবে মামলার রায় হওয়ার পর রায়ের কপি পাওয়ার জন্য বিচারপ্রার্থীদের যেন আদালতের বারান্দায় ঘোরাঘুরি করতে না হয়।

সুপ্রিম কোর্টের ভূমিকার কথা তুলে ধরে রাষ্ট্রপ্রধান বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি দেশে সামরিক শাসন জারির মাধ্যমে সংবিধানকে নানাভাবে কাঁটাছেড়া করে গণতন্ত্রকে চিরতরে হত্যা করার অপচেষ্টা করেছিল। কিন্তু বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট সংবিধানের পঞ্চম ও সপ্তম সংশোধনীকে অবৈধ ঘোষণা করে দেশের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকারকে প্রতিষ্ঠা করেছে। ১৯৭২ সালের ১৮ ডিসেম্বর বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট তার যাত্রা শুরু করে মানুষের মৌলিক মানবাধিকার রক্ষা, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা এবং স্বল্প সময়ে বিচারপ্রার্থীদের ন্যায়বিচার প্রদানে কাজ করে যাচ্ছে।

আবদুল হামিদ বলেন, সংবিধানবিরোধী ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিল করে সুপ্রিম কোর্ট ষড়যন্ত্রকারীদের সেই নীলনকশা বাস্তবায়িত হতে দেয়নি। শেষ পর্যন্ত জাতির পিতার হত্যাকারীদের বিচার করে সুপ্রিম কোর্ট তার সাংবিধানিক দায়িত্ব পালন করেছে। জাতির ক্রান্তিকালে যখনই প্রয়োজন হয়েছে, সুপ্রিম কোর্ট তার উপরে অর্পিত দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে মানুষের মৌলিক মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা এবং সংবিধানকে রক্ষা করেছে।

করোনাকালে ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে বিচার কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে উচ্চ আদালত ও অধস্তন আদালতের বিচারক ও আইনজীবীরা বিচারপ্রার্থী জনগণের ন্যায়বিচার নিশ্চিতকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে, এজন্য আবদুল হামিদ বিচার বিভাগকে ধন্যবাদ জানান।

রাষ্ট্রপ্রধান বলেন, বাংলাদেশ এখন বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল। উন্নয়নের এ ধারা অব্যাহত রেখে একটি সুখী ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে সম্বিলিত প্রয়াস চালিয়ে যেতে হবে।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের চেয়ারম্যান অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন, সুপ্রিম কোর্ট বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান মুহাম্মদ ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন এবং জাজেস কমিটির সভাপতি এবং আপিল বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসান।

শেয়ার করুন