বর্তমান সরকার নিজেরাই বেআইনিভাবে ক্ষমতায় বসে আছে বলে দাবি করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার ব্যাপারে আইনমন্ত্রী বারবার যে আইন দেখাচ্ছেন সেটার নৈতিক অধিকার তাদের নেই বলে মনে করেন তিনি।
আজ বুধবার বিকালে টাঙ্গাইল জেলা বিএনপি আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে উন্নত চিকিৎসার দাবিতে জেলা সদর স্কুল মাঠে এই সমাবেশের আয়োজন করা হয়।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, পাক হানাদার বাহিনীর আক্রমণে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা যখন দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাচ্ছিলেন তখন মেজর জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করেন। এরপর মুক্তিযোদ্ধারা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। তখন বেগম খালেদা জিয়া পালিয়ে না গিয়ে দেশেই ছিলেন। পরে ক্যান্টনমেন্টের বাসভবন থেকে খালেদা জিয়াকে আটক করে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত কারাগারে রাখে পাক সেনারা। এজন্য খালেদা জিয়াকে দেশের প্রথম নারী মুক্তিযোদ্ধা বলেছি। সেইদিন যদি তিনি এই কাজটি না করতেন তাহলে যুদ্ধের মোড় ঘুরে যেতে পারতো।
মির্জা ফখরুল বলেন, সেই খালেদা জিয়াকে বিনা অপরাধে জেলে আটক রাখা হয়েছে। তাকে উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হচ্ছে না। বারবার চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে বললেও সরকার কোনো কর্ণপাত করছে না। আমরা বারবার বলেছি এই মানবিক কারণে বাধা দেবেন না, কিন্তু সরকার শুনছেন না। এ ব্যাপারে বারবার আইন দেখান আইনমন্ত্রী। অথচ তারা নিজেরাই বেআইনিভাবে ক্ষমতায় রয়েছেন।
সরকারকে হুঁশিয়ার করে ফখরুল বলেন, খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার সুযোগ না দিলে এই দায় সরকারকে নিতে হবে। অন্যথায় দুর্বার আন্দোলনের মধ্যে আপনারা পালানোর সুযোগ পাবেন না।
নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, দেশের যে অবস্থা, এখান থেকে দেশকে মুক্ত করতে আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। দুর্বার গণআন্দোলনের মাধ্যমে এই দানবের মোকাবেলা করতে হবে। এই দানব আমাদের বুকের ওপর চেপে বসে আছে। এই আন্দোলনের মাধ্যমে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
সরকারের সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, আগের রাতে নির্বাচন করে রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে গত ১৪ বছর ধরে জোর করে ক্ষমতায় বসে আছে। তারা দেশটাকে একটা আঁস্তাকুড়ের মধ্যে ফেলে দিয়েছে। সব ধ্বংস করে দিয়েছে তারা। টাঙ্গাইলের আব্দুস সালাম পিন্টুকেও মিথ্যা মামলায় কারাগারে রাখা হয়েছে। আমাদের দলের ৩৫ লাখ নেতাকর্মীকে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার যতক্ষণ পর্যন্ত ক্ষমতায় আছে ততক্ষণ নির্বাচন কমিশন গঠন করে লাভ হবে না। সরকার তো নিজেই নির্বাচনী ব্যবস্থাপনাকে ধ্বংস করে দিয়েছে। নির্বাচনের সময় নিরপেক্ষ সরকার না থাকলে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না। সব নির্বাচনে সরকারদলীয়রা জোর করে ক্ষমতায় যাচ্ছে। অতএব নির্বাচনে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করতে হবে। এই সরকারকে পদত্যাগ করে নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধয়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও টাঙ্গাইল জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট আহমেদ আযম খানের সভাপতিত্বে আয়োজিত সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল মাহমুদুল হাসান, কেন্দ্রীয় বিএনপির পল্লী উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট গৌতম চক্রবর্তী, ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুর রহমান মিলন, কেন্দ্রীয় বিএনপির নির্বাহী সদস্য মোহাম্মদ আলী, বিএনপির শিশুবিষয়ক সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু প্রমুখ।অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন জেলা বিএনপির সদস্য সচিব মাহমুদুল হক সানু।
প্রায় ১৫ বছর পর টাঙ্গাইল জেলা বিএনপির সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে জেলার বিভিন্ন উপজেলার নেতাকর্মীরা অংশ নেন।