মালদ্বীপকে বাংলাদেশের উন্নয়ন সহযোগী হওয়ার আহ্বান জানালেন প্রধানমন্ত্রী

ডেস্ক রিপোর্ট

মালদ্বীপের জাতীয় সংসদে ভাষণ দিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজ (২৩ ডিসেম্বর) বিকালে এই ভাষণে মালদ্বীপের সরকারি ও বেসরকারি খাতকে পারস্পরিক সুবিধার জন্য আগামী ৫০ বছরে উন্নয়ন যাত্রায় বাংলাদেশের উন্নয়ন অংশীদার হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। তার আশা, ‘আমাদের উষ্ণ এবং বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আরও সুসংহত হবে। দুই দেশের আগামী ৫০ বছরের যাত্রা আরও ফলপ্রসূ হবে এবং জনগণের জীবনে অর্থবহ পরিবর্তন আনবে।’

প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্য, ‘বিশ্বের কোনও দেশ বিচ্ছিন্নভাবে উন্নতি করতে পারে না। কোভিড-১৯ মহামারি সবাইকে শিখিয়েছে যে, পরস্পর নির্ভরশীল এবং একটি উন্নত, নিরাপদ ও সমৃদ্ধ বিশ্বের স্বার্থে নিজেদের অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি করতে হবে। আমরা দক্ষিণ এশিয়ায় আমাদের ভ্রাতৃপ্রতিম প্রতিবেশীদের সঙ্গে সহযোগিতার নীতিগত অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করছি, যেমনটি আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলে গেছেন।’

ভাষণে শেখ হাসিনা আরও বলেন, মালদ্বীপের উন্নয়নের যাত্রা, এলডিসি থেকে মধ্যম আয়ের দেশে দেশটির সফল উত্তরণ প্রত্যক্ষ করে আমরা বিশেষভাবে উৎসাহিত হয়েছি। আমরা আশা করি, বাংলাদেশ ও মালদ্বীপ পরিপূরকতাগুলোকে কাজে লাগাবে। এলডিসি হিসেবে আমরা যেসব সুবিধা উপভোগ করতাম তা প্রত্যাহারের পরে যে পরিস্থিতির মুখোমুখি হবো তা মোকাবিলার জন্য আমাদের ফোকাস হবে অর্থনীতির বৈচিত্র্যকরণ এবং নতুন বাজার অনুসন্ধান।

২০২১ সাল বাংলাদেশ-মালদ্বীপ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের একটি যুগান্তকারী বছর উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী, যেখানে উচ্চ পর্যায়ের সফর বিনিময় ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মধ্যে ফলপ্রসূ দ্বিপাক্ষিক আলোচনা এবং দ্বিপাক্ষিক স্বার্থের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতার শুভেচ্ছা বিনিময় হয়েছে।

তিনি বলেন, আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন নিয়ে একটি প্রযুক্তি-চালিত সমাজ এবং উদ্ভাবন-নেতৃত্বাধীন প্রবৃদ্ধিতে রূপান্তরিত করার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আমাদের উন্নয়ন যাত্রার ধারাবাহিকতায় এখন লক্ষ্য হচ্ছে ২০৩১ সালের মধ্যে এসডিজির সব লক্ষ্যমাত্রা পূরণ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে জ্ঞানভিত্তিক উন্নত দেশ বানানো এবং ২১০০ সালের মধ্যে একটি সমৃদ্ধ এবং স্থিতিস্থাপক ডেল্টায় পরিণত করা।

শেখ হাসিনার তথ্যানুযায়ী, বাংলাদেশ সম্ভাবনা ও সমৃদ্ধি নিয়ে এগিয়ে চলেছে। বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন ৪১১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের এবং বিশ্বের ৩৪টি বৃহত্তম অর্থনীতির মধ্যে স্থান করে নিয়েছে। বাংলাদেশ গত একদশকে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে। আগের কয়েক বছরে গড় জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশের বেশি ছিল, মহামারীর ঠিক আগে আমাদের জিডিপি বৃদ্ধির হার ছিল ৮ দশমিক ২ শতাংশ। গত একদশকে আর্থসামাজিক সূচকে বিশেষ করে নারীর ক্ষমতায়ন, মাতৃ এবং শিশুর স্বাস্থ্য, আয়ুষ্কাল, জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার, স্যানিটেশন, পানীয় জল, প্রাথমিক শিক্ষা এবং সাক্ষরতা প্রভৃতি ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অভূতপূর্ব অগ্রগতি সাধিত করেছে।

গত মার্চে মুজিব জন্মশতবর্ষ এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ায় মালদ্বীপের রাষ্ট্রপতি ইব্রাহিম মোহাম্মদ সলিহকে ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী।

মালদ্বীপের জাতীয় সংসদ ‘পিপলস মজলিস’-এ প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান স্পিকার মোহাম্মদ নাশিদ এবং ডেপুটি স্পিকার। মালদ্বীপের জাতীয় সংসদের স্পিকার তাঁর বক্তৃতায় বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে বিশেষ করে জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব মোকাবিলায় উন্নয়নশীল দেশের নেতৃত্বদানে শেখ হাসিনার ভূমিকার ভূয়সী প্রশংসা করেন। এ প্রসঙ্গে তিনি জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৬তম অধিবেশনে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ইস্যুগুলোতে সম্মত করাতে শেখ হাসিনাকে পাঁচ চুক্তি প্রণেতার অন্যতম হিসেবে বিবিসির প্রতিবেদনের কথাও উল্লেখ করেন।

প্রধানমন্ত্রী পরে সংসদের দর্শনার্থী বইয়ে সই করেন এবং মালদ্বীপের সংসদের স্পিকারের সঙ্গে বৈঠকে বসেন। এরপর সংসদের চেম্বার হাউসে শেখ হাসিনাকে একটি নৌকার চিত্রকর্ম উপহার দেন স্পিকার।

তথ্যসূত্র: বাসস

শেয়ার করুন