আইনগতভাবে খালেদাকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার সুযোগ নেই

নিজস্ব প্রতিবেদক

খালেদা জিয়া
খালেদা জিয়া। ফাইল ছবি

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার সুযোগ নেই বলে মতামত দিয়েছে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। আজ মঙ্গলবার সচিবালয়ে জাতীয় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ উপদেষ্টা কমিটির সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এ তথ্য জানান। এর আগে সোমবার (২৭ ডিসেম্বর) খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসায় পরিবারের আবেদনের বিষয়ে আইনগত মতামত দিয়ে এ সংক্রান্ত ফাইল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছিলেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। তবে কী মতামত দিয়েছেন- সে বিষয়ে কিছু জানাননি আইনমন্ত্রী।

আইন মন্ত্রণালয়ের মতামতের পর এ বিষয়ে কী করছেন- জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, খালেদা জিয়ার ছোট ভাই শামীম ইস্কান্দার সাহেব আসছিলেন। একটা চিঠি দিয়েছেন, সঙ্গত কারণেই আমরা আইনসম্মত হয় কি না সেটা জানিয়েছি। আইনমন্ত্রী মহোদয় একটা মতামত দিয়েছেন। সেই মতামত আমরা স্টাডি করছি। আমরা পরে যদি প্রয়োজন মনে করি, সেটা অধিকতর জায়গায় প্রয়োজন হয় পরামর্শ নেবো। এখন আমরা যতটুকু স্টাডি করে দেখছি, এটা নিয়ে আমাদের কথাবার্তা বলতে হবে।

universel cardiac hospital

এটি কি প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হয়েছে- এ বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, আইনমন্ত্রী মহোদয় যেভাবে লিখেছেন যেভাবে জানিয়েছেন, আইনগত কোনো সুযোগ (খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার) নেই। আমাদের অবস্থানটা নিশ্চয়ই আপনারা বুঝেছেন। আমরা এখন বসে আলোচনার মাধ্যমে পরবর্তীতে ব্যবস্থা নেবো।

মানবিক দিক বিবেচনা করে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার সুযোগ দেওয়া হবে কি না- এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, মানবিক দিক বিবেচনা করেই কিন্তু আমরা ওই ব্যবস্থাটা (দণ্ড স্থগিত করে মুক্তি) নিয়েছি। তিনি একজন দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি, তার দণ্ড কার্যকর হচ্ছিল। তাকে সর্বোচ্চ চিকিৎসাসেবা আমরা দিচ্ছিলাম। তারপরও তার ছোট ভাই আবেদন করায় আমরা তাকে আরও সুযোগ দেওয়ার জন্য মানবিক কারণে তার চিকিৎসা যাতে আরও সুন্দরভাবে হয়, প্রধানমন্ত্রী দণ্ডাদেশ স্থগিত করে বাসায় থেকে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছিলেন। তিনি বাংলাদেশের যে কোনো মেডিকেলে প্রয়োজনমতো চিকিৎসা নিতে পারবেন, এ ধরনের নির্দেশনা ছিল।

আসাদুজ্জামান খান বলেন, এখন তাঁর ছোট ভাই বলছেন বিদেশে নিয়ে যাবেন। এ বিষয়ে আইন মন্ত্রণালয় থেকে আসছে, আইনে এর কোনো সুযোগ নেই।

দুটি মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত খালেদা জিয়া কারাবন্দি ছিলেন। নির্বাহী আদেশে খালেদা জিয়ার দণ্ড স্থগিত রয়েছে। তিনি দীর্ঘদিন ধরে আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, দাঁত ও চোখের সমস্যাসহ নানা জটিলতায় ভুগছেন। গত ১৩ নভেম্বর গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় তাকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তিনি লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত। তার পরিপাকতন্ত্রে একাধিকবার রক্তক্ষরণ হয়েছে।

খালেদা জিয়া হাসপাতালটির ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে চিকিৎসাধীন। তার চিকিৎসার জন্য গঠিত হাসপাতালের মেডিকেল বোর্ড অবিলম্বে তাকে বিদেশে উন্নত চিকিৎসার সুপারিশ করেছে বলে জানানো হয়েছে।

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেন বকশীবাজার আলিয়া মাদরাসা মাঠে স্থাপিত ঢাকার ৫ নম্বর বিশেষ আদালত। রায় ঘোষণার পর খালেদাকে পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডে অবস্থিত ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি রাখা হয়। এরপর ৩০ অক্টোবর এই মামলায় আপিলে তার আরও পাঁচ বছরের সাজা বাড়িয়ে ১০ বছর করেন হাইকোর্ট।

একই বছরের ২৯ অক্টোবর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় খালেদা জিয়াকে সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দেন একই আদালত। রায়ে সাত বছরের কারাদণ্ড ছাড়াও খালেদা জিয়াকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। জরিমানা অনাদায়ে আরও ছয় মাসের কারাদণ্ডের আদেশ দেন।

গত বছরের মার্চে করোনা মহামারি শুরু হলে পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে নির্বাহী আদেশে দণ্ড স্থগিত করে কারাবন্দি খালেদা জিয়াকে সরকার শর্তসাপেক্ষে ছয় মাসের জন্য মুক্তি দেয়। প্রথম দফা মুক্তির মেয়ার শেষ হয়ে আসলে গত বছরের ২৫ আগস্ট বেগম জিয়ার পরিবারের পক্ষ থেকে স্থায়ী মুক্তি চেয়ে আবেদন করা হয়। এই পরিপ্রেক্ষিতে সরকার দ্বিতীয় দফায় গত ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে ছয় মাসের জন্য তার মুক্তির মেয়াদ বাড়ায়। সর্বশেষ গত ২৫ মার্চ থেকে মুক্তির মেয়াদ আরও ছয় মাস বাড়ানো হয়।

এই মেয়াদও শেষ হয়ে আসলে গত সেপ্টেম্বর পরিবারের পক্ষ থেকে তার ভাই শামীম ইস্কান্দার খালেদা জিয়াকে বিদেশ নিয়ে গিয়ে চিকিৎসার আবেদন করেন। কিন্তু সরকার সেই অনুমতি দেয়নি। বিদেশে যাওয়া যাবে না এবং বাড়িতে বসে চিকিৎসা নিতে হবে- আগের মতো এই দুটি শর্তে গত ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে তার দণ্ড স্থগিত করে মুক্তির মেয়াদ আরও ছয় মাস বাড়িয়ে দেয়। এরপরও শামীম ইস্কান্দার বেগম জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার জন্য সরকারের কাছে ফের আবেদন করেন।

শেয়ার করুন