রাজনীতিকদের চেয়ে আমলারা বেশি কর্তৃত্ববাদী: এম এ মান্নান

নিজস্ব প্রতিবেদক

পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান
ফাইল ছবি

পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেছেন, অদ্ভুত ধরনের আমলাতান্ত্রিক কর্তৃত্ববাদ আছে। রাজনীতিকদের চেয়ে আমলাদের কর্তৃত্ববাদ বেশি। আমলাতান্ত্রিক কর্তৃত্ববাদের কারণে উন্নয়নের গতি থমকে যাচ্ছে।

বৃহস্পতিবার (৩০ ডিসেম্বর) ডেভেলপমেন্ট জার্নালিস্ট ফোরাম অব বাংলাদেশের (ডিজেএফবি) সেমিনার, প্রকাশনা ও বেস্ট রিপোর্টিং অ্যাওয়ার্ড বিতরণ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

universel cardiac hospital

রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী।

পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, এ অঞ্চলে রাজনীতিকদের তুলনায় আমলারা অনেক বেশি কর্তৃত্ববাদী। আমাদের দেশেও আমলারা কর্তৃত্ববাদী। কেননা আমরা বিনিয়োগকারীদের জন্য ফুলের মালা আর দুধ নিয়ে বসে থাকি। তাদের আহ্বান জানাই দেশে এসে বিনিয়োগ করার জন্য।

কিন্তু তারা যখন বিমানবন্দরে নামেন তখন হয়রানির শিকার হন। তারা চান দ্রুত ইমিগ্রেশন, লাগেজ যাতে দ্রুত পান। এসব কাজেই এখানে অনেক দেরি হয়। এছাড়া বিনিয়োগ করতে গিয়ে আমলাতন্ত্রের মধ্যে পড়ে যান। এরকম উদাহরণ আরও আছে। আমাদের প্রধানমন্ত্রী বিনিয়োগকারীদের বলেন আসুন, বিনিয়োগ করুন। কিন্তু বিনিয়োগকারীরা এসে আমলাতন্ত্রের কাছে মার খান।

ডিজেএফবির সভাপতি হুমায়ন কবীরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম ও পরিকল্পনা সচিব প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তী।

‘এলডিডিসি উত্তরণ: সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান। আলোচনায় অংশ নেন পলিসি রিসার্স ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর, পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য মামুন-আল-রশীদ, শরিফা বেগম এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) অতিরিক্ত সচিব আব্দুল বাকী।

ডিজেএফবির সাধারণ সম্পাদক আরিফুর রহমানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সেমিনারে দুই ক্যাটাগরিতে চারজনকে বেস্ট রিপোর্টিং অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হয়। অ্যাওয়ার্ডপ্রাপ্তরা হলেন- পত্রিকা ও অনলাইন ক্যাটাগরিতে সময়ের আলোর এম আর মাসফি, বিজনেস পোস্টের রফিকুল ইসলাম। টেলিভিশন ও অনলাইন ক্যাটাগরিতে এনটিভির হাসানুল শাওন এবং যমুনা টিভির তৌহিদ পাপন।

পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, দারিদ্র্য নিরসনে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে ব্যাপক বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। আঞ্চলিক ক্ষেত্রে রাজনৈতিক অর্থনীতি আছে। এজন্য আমাদের দক্ষতা ও শ্রমিকের মান বাড়াতে হবে। সবসময় বাজার নিয়ে কথা হয়। কিন্তু মাছের বাজার আর তেলের বাজার এক নয়। তেল অর্থাৎ জ্বালানি তেল ও অস্ত্রের বাজার বড় বাজার। এ বাজারের ওপর অনেক কিছুই নির্ভর করে। মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধি বা কম শুধু অভ্যন্তরীণ বিষয় নয়। এটি আন্তর্জাতিক বিষয়ও। মার্কিন তেলের বাজার নিয়ে কিছু বলে না অথচ আমাদের মাছের বাজার ও কৃষি বাজার নিয়ে রেগুলেট করে।

ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বৈষম্য কমাতে হবে। এটি করা না হলে টেকসই উত্তরণ সম্ভব নয়। এলডিসি উত্তরণের পর বাজার সুবিধা হারানো, স্বল্প সুদে ঋণ প্রাপ্তিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সুযোগ হাতছাড়া হবে। এলডিসির চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় তিনটি বিষয় বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। এগুলো হলো- বাণিজ্য, বিনিয়োগ এবং পরিবহন অবকাঠামোর উন্নয়ন। আমাদের আঞ্চলিক বাজারের দিকে নজর দিতে হবে। মধ্য আয়ের জার্নিতে সচেতন থাকতে হবে। প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে হবে। শিক্ষাক্ষেত্রে সংস্কার আনতে হবে। আমাদের বর্তমান বাজার সুবিধানির্ভর যে প্রতিযোগিতা আছে, সেটি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। এখন দক্ষতা ও উৎপাদনশীলতানির্ভর প্রতিযোগিতায় যেতে হবে। জিডিপি প্রবৃদ্ধির সঙ্গে শোভন কর্মসংস্থান বাড়ানোর ব্যবস্থা নিতে হবে। মাথাপিছু আয়ের সুষম বণ্টন করতে হবে।

প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম বলেন, এলডিসির চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় নেগোসিয়েশন (দরকষাকষি) সক্ষমতা বাড়াতে হবে। এছাড়া বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে মূল ভূমিকা নিতে হবে। কেননা এলডিসি উত্তরণ ঘটলে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে অনেক বেশি কাজ করতে হবে। ভিয়েতনামকে আমাদের গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হবে। কেননা বাণিজ্য ক্ষেত্রে তাদের কাছে অনেক কিছুই শেখার আছে। যেহেতু খনিজসম্পদ কম, তাই আমাদের ধনী হওয়ার একমাত্র পথ রপ্তানি বাড়ানো। আমাদের এফটিএ, পিটিএসহ নানা রকম বাণিজ্য চুক্তি করতে হবে। এরই মধ্যে এগুলো নিয়ে কাজও শুরু হয়েছে। আমাদের আমদানি শুল্ক অনেক বেশি, এগুলো কমাতে হবে।

প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তী বলেন, আমরা তথ্যপ্রযুক্তির ক্ষেত্রে অনেক পিছিয়ে আছি। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় নিজেদের প্রস্তুতি ঠিক রাখতে হবে। ভয় পাওয়ার কিছু নেই।

অনুষ্ঠানে ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, এলডিসি উত্তরণের পর অন্যতম ইস্যু হচ্ছে প্রতিযোগিতা। সেটি ঠিকই আছে। এজন্য অবশ্যই দরকষাকষির বা আলোচনার দক্ষতা বাড়াতে হবে। আমাদের সমস্যা হলো কিছু চাইতে হলে দিতে হবে। সেটি অনেক সময় আমরা বুঝতে পারি না। অর্থাৎ কোনো দেশ থেকে বাণিজ্য সুবিধা নিতে গেলে তাদেরও কিছু সুবিধা দিতে হবে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমাদের শুল্ক অনেক বেশি। সেগুলো কমানো দরকার।

শেয়ার করুন