নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনের জন্য আইন প্রণয়নে ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন, ২০২২’ -এর খসড়া সংসদে চলতি সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসেই উঠছে। সংবিধানের ১১৮ (১) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী বিলটি আনা হচ্ছে। আগামীকাল রোববার সংসদে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক খসড়াটি সংসদে তুলে সেটি পরীক্ষার জন্য আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানোর প্রস্তাব করবেন। রোববারের সংসদের কার্যসূচি থেকে এসব তথ্য জানা গেছে। শনিবার এ সূচি প্রকাশ করেছে সংসদ সচিবালয়।
সংসদীয় রীতি অনুযায়ী খসড়া সংসদে উত্থাপনের শেষে আইন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য পাঠানো হবে। সেখান থেকে সুপারিশ আকারে সংসদের বৈঠকে উঠবে। আলোচনার মধ্য দিয়ে আইন চূড়ান্ত হবে। সংসদে প্রধান বিরোধিদল জাতীয় পার্টির ও সরকারবিরোধি দল বিএনপির সংসদ সদস্যরা তখন আইনের বিষয়ে তাঁদের মতামত ও প্রস্তাব উপস্থাপনের সুযোগ পাবেন।
সংবিধানের অন্যতম প্রণেতা ও গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেন এ প্রসঙ্গে মত ও পথকে বলেন, ‘সংবিধানে বলা আছে, ইসি গঠনে আইন প্রণয়নের কথা।স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছরের মধ্যে তা হয়নি, যা অবশ্যই দু:খজনক। এ সরকার আইনটি করতে যাচ্ছে, এটি প্রশংসাজনক। আইনে কী আছে, থাকছে- সেগুলো না দেখে কেউ মন্তব্য করা ঠিক হবে না।’
সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার ড. এটিএম শামসুল হুদা এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘ইসি গঠনে প্রস্তাবিত আইন যথাযথ ও পরিপূর্ণ নয়, এটি কেবল সার্চ কমিটি করার খসড়া। আইনটির অনেক সংশোধন করতে হবে। প্রস্তাবিত খসড়া নিয়ে জনগণেরও মতামত নেওয়া প্রয়োজন। স্বাধীনতার ৫০ বছর পর এমন একটি আইন হলে এটির যোগ্যতা প্রমাণ করা উচিত।’
নতুন ইসি গঠন প্রক্রিয়ার অংশ হিসাবে গত ২০ ডিসেম্বর থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ শুরু করেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ। গত ১৭ জানুয়ারি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে বৈঠকের মধ্য দিয়ে সংলাপের ইতি টানেন তিনি। সংলাপে দেশের বেশিরভাগ রাজনৈতিক দলের দাবি ছিল ইসি গঠনে আইন প্রণয়নের। দলগুলোর দাবি অনুযায়ী আইন হচ্ছে। আইন প্রণয়নের উদ্যোগ কেন্দ্র করে অনেকদিন পর রাজনৈতিক দল, বিশেষজ্ঞ, বিশ্লেষক, সুশীল সমাজ ও বিশিষ্ট নাগরিকদের মধ্যে মতামতের ঐক্য দেখা দিয়েছে। রাজনৈতিক ঐক্যের আলো ফুটছে।
গত সোমবারে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন-২০২২’ এর খসড়া অনুমোদন পায়। বিশেষজ্ঞদের অভিমত, ইসি গঠনে আইনের খসড়া মন্ত্রিসভায় নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদনের বিষয়টি ইতিবাচক। এর মধ্য দিয়ে ইসি গঠনে সংবিধানের নির্দেশনা অনুযায়ী অবশেষে আইন প্রণয়ন হতে যাচ্ছে, মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জনের পঞ্চাশ বছর পর। আইনটি ছাড়া গত কয়েক যুগের রাজনৈতিক বিরোধ মেটার পথ তৈরির আভাস মিলছিল না। এতো বছরের মধ্যে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বের সরকার প্রথম আইনটি প্রণয়নের উদ্যেগ নেয়। সেজন্য দলটি ও এর নেতৃত্বের সরকারের সাধুবাদ প্রাপ্য।
অন্যদিকে পাঁচদিন মুলতবির পর সংসদের ১৬তম ও চলতি বছরের প্রথম অধিবেশন আগামীকাল বেলা ১১টায় আবার বসছে। গত ১৬ জানুয়ারি এ অধিবেশন শুরু হয়। সংবিধান অনুযায়ী বছরের প্রথম অধিবেশন হিসেবে রাষ্ট্রপতি সংসদে ভাষণ দেন। ১৭ জানুয়ারি এ ভাষণ সম্পর্কে চিফ হুইপ নূর-ই- আলম চৌধুরী ধন্যবাদ প্রস্তাব উত্থাপন করেন। প্রস্তাবটি সমর্থন করেন সরকারি দলের সদস্য সামসুল হক টুকু। ওই দিন ভাষণ সম্পর্কে ধন্যবাদ প্রস্তাবের ওপর আলোচনা শুরু হয়। প্রথম দিন দুজন প্রতিমন্ত্রীসহ বেশ কয়েকজন সংসদ সদস্য আলোচনায় অংশ নেন। দিনের আলোচনা শেষে স্পিকার ২৩ জানুয়ারি রোববার সকাল ১১টায় পর্যন্ত অধিবেশন মুলতবি করেন। মুলতবির পর কাল যথারীতি অধিবেশন আবার বসছে।