জয়ের ধারায় ফিরতে ১৫৯ রান করলেই হতো সাকিব আল হাসানের ফরচুন বরিশালের। দিনের দ্বিতীয় ম্যাচ বিবেচনায় খুব কঠিন কাজ ছিল না এটি। কিন্তু নাহিদুল ইসলামের কিপটে বোলিংয়ের সঙ্গে তানভির ইসলাম, শহিদুল ইসলামদের তোপে একশ রানও করতে পারলো না বরিশাল।
নির্ধারিত ২০ ওভারের আগে ১৫ বল আগেই মাত্র ৯৫ রানে অলআউট হয়ে গেছেন সাকিব আল হাসান, ক্রিস গেইলরা। যার ফলে ১৫৮ রানের পুঁজি নিয়েও ৬৩ রানের বড় ব্যবধানে জিতেছে কুমিল্লা। একইসঙ্গে দুই ম্যাচে পূর্ণ ৪ পয়েন্টে টেবিলের শীর্ষে উঠে গেছে ইমরুলের দল।
বরিশালের লক্ষ্য তাড়ার কাজটি পুরোপুরি কঠিন করে তুলেছেন অফস্পিনার নাহিদুল ইসলাম। পাওয়ার প্লে’তে দুই ওভারসহ নিজের ৪ ওভারের স্পেলে মাত্র ৫ রান খরচায় ৩টি উইকেট নিয়েছেন তিনি। যা কি না বিপিএল ইতিহাসে এক ম্যাচে সবচেয়ে কম রান দেওয়ার রেকর্ড।
শুধু কিপটে বোলিং করাই নয়, প্রথমে সৈকত আলি ও সাকিব আল হাসানকে ফিরিয়ে কুমিল্লাকে আনন্দে ভাসিয়েছেন নাহিদুল। পরে ক্যারিবীয় দানব, দ্য ইউনিভার্স বস ক্রিস গেইলকে ফ্লাইটে বোকা বানিয়ে স্ট্যাম্পিংয়ের ফাঁদে ফেলে বরিশালের মেরুদণ্ডই যেন ভেঙে দেন এ অফস্পিনার।
নাহিদুলের এমন বোলিংয়ের পর আর ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব হয়নি বরিশালের পক্ষে। তাদের ইনিংসটা কোনোমতে ৯৫ রানে গিয়েছে মূলত বাঁহাতি ওপেনার নাজমুল হোসেন শান্তর কল্যাণে। এক প্রান্ত আগলে রেখে দশম ব্যাটার হিসেবে আউট হওয়ার আগে ৪৭ বলে ৩৬ রান করেন শান্ত।
এছাড়া তৌহিদ হৃদয় ১৪ বলে ১৯ ও উইকেটরক্ষক ব্যাটার নুরুল হাসান সোহানের ব্যাট থেকে আসে ১৪ বলে ১৭ রান। এর বাইরে আর কোনো ব্যাটারই দুই অঙ্ক ছুঁতে পারেননি। শূন্য রানে আউট হয়েছেন চারজন ব্যাটার। সাকিব ১ ও গেইল করতে পেরেছেন ৭ রান।
কুমিল্লার পক্ষে নাহিদুলের ৫ রানে ৩ উইকেট ছাড়াও, দুইটি করে উইকেট নিয়েছেন শহিদুল ইসলাম, তানভির ইসলাম ও করিম জানাত। কিপটে বোলিং করে পরপর দ্বিতীয় ম্যাচে ম্যান অব দ্য ম্যাচ নির্বাচিত হয়েছেন নাহিদুল ইসলাম।
এর আগে বাংলাদেশ ক্রিকেটের অলিখিত নিয়ম ভেঙে বাঁহাতি ব্যাটার ক্যামেরন ডেলপোর্টের বিপক্ষে বোলিং শুরু করেন বাঁহাতি স্পিনার সাকিব আল হাসান। তার প্রথম ওভার থেকে মাত্র ১ রান নিতে পারে কুমিল্লা। তবে নাইম হাসানের করা দ্বিতীয় ওভারে একটি ছয় ও দুই চার হাঁকিয়ে নিজের আগমনী বার্তা দেন বিপিএলে অভিষিক্ত মাহমুদুল জয়।
দ্বিতীয় ওভারের তৃতীয় বলে ছক্কা হাঁকিয়েই বিপিএলে নিজের রানের খাতা খোলেন জয়। সাকিবের করা পরের ওভারে তিন বাউন্ডারি হাঁকান ডেলপোর্ট। তবে বেশিক্ষণ থাকতে পারেননি তিনি। চতুর্থ ওভারের প্রথম বলে চার মেরে পরের বলেই স্ট্যাম্পিংয়ের ফাঁদে পড়েন এ বাঁহাতি ওপেনার। চারটি চারের মারে ১৩ বলে ১৯ রান করা ডেলপোর্টের উইকেটটি নেন নাইম।
এরপর হতাশ করেন কুমিল্লার তারকা ব্যাটার ফাফ ডু প্লেসিস। পাওয়ার প্লে’র শেষ ওভারে সাকিবের প্রথম শিকারে পরিণত হয়ে সাজঘরে ফেরার আগে মাত্র ৬ রান করেন ডু প্লেসিস, খেলেন ১১ বল। ডু প্লেসিকে আউট করে নাজমুল ইসলাম অপুর মতো পুষ্পা উদযাপন করেন বরিশাল অধিনায়ক। পরে পুষ্পার অনুকরণ করেন ব্রাভোও।
পাওয়ার প্লে’র মধ্যে দুই উইকেট হারানোর পর কুমিল্লার অধিনায়ক ইমরুল কায়েসের শুরুটা ছিল বেশ ভালো। দারুণ দুইটি বাউন্ডারি হাঁকিয়ে ভালো ইনিংসের ইঙ্গিত দিচ্ছিলেন তিনি। কিন্তু ব্রাভোর বাউন্সারে ঠিকঠাক ব্যাটে-বলে করতে পারেননি তিনি, ধরা পড়ে যান উইকেটরক্ষক নুরুল হাসান সোহানের গ্লাভসে। ইমরুলের ব্যাট থেকে আসে ১১ বলে ১৫ রান।
চার নম্বরে নামা মুমিনুল হককে নিয়ে ৪৪ রানের জুটি গড়েন অভিষিক্ত ওপেনার মাহমুদুল জয়। তাইজুল ইসলামের বোলিংয়ে জোড়া বাউন্ডারি, জিয়াউর রহমানকে একটি বাউন্ডারির পাশাপাশি দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে ফিফটির দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গিয়েছিলেন এ তরুণ। কিন্তু ইনিংসের ১৬তম ওভারে ব্যক্তিগত ৪৮ রানে কাঁটা পড়ে যান তিনি।
বরিশালের বাঁহাতি চায়নাম্যান জ্যাক লিন্টটের অফস্ট্যাম্পের অনেক বাইরের ডেলিভারি তাড়া করতে গিয়ে শর্ট থার্ডম্যানে দাঁড়ানো ক্রিস গেইলের হাতে ধরা পড়েন ৩৫ বলে ৬ চার ও ১ ছয়ের মারে ৪৮ রান করা জয়। পরের ওভারেই অভিজ্ঞ মিডলঅর্ডার মুমিনুল হক আউট হন ২৩ বল থেকে মাত্র ১৭ রান করে। সাকিবের দ্বিতীয় শিকারে পরিণত হন তিনি।
কুমিল্লার ইনিংসের পরের গল্পটা পুরোপুরি আফগান অলরাউন্ডার করিম জানাতের। সাকিবের বলে ছক্কা হাঁকিয়ে শুরু করেন তিনি। এরপর জিয়া ও ব্রাভোকেও হাঁকান একটি করে ছক্কা। শেষ পর্যন্ত তিনি অপরাজিত থাকেন ১৬ বলে ২৯ রান নিয়ে। যা কুমিল্লাকে পাইয়ে দেয় ১৫৮ রানের সংগ্রহ।
বরিশালের পক্ষে ৪ ওভারে ৩০ রান খরচায় ৩ উইকেট নেন ব্রাভো, সাকিব ২৫ রানে নেন ২টি উইকেট। এছাড়া নাইম ও লিন্টনের শিকার ১টি করে উইকেট।