সজীব ওয়াজেদ জয়কে হত্যায় যুক্তরাষ্ট্রে বিনিয়োগ করে বিএনপি। জিএসপি সুবিধা বাতিল ও যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা বন্ধের লিখিত আবেদন খালেদা, ফখরুলের।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদেরকে ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ, জিএসপি সুবিধা বাতিলের দাবি জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের কাছে প্রথম লিখিত আবেদন করেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় ও তাঁর পরিবারের সদস্যদেরকে অপহরণ করে হত্যা করতে যুক্তরাষ্ট্রে ভয়াল অপরাধী গোষ্ঠীর সঙ্গে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে চুক্তিবদ্ধ হয় বিএনপি।
ওই গোষ্ঠীর সঙ্গে দেশটির গােয়েন্দা সংস্থা এফবিআইয়ের কয়েকজন জড়িত ছিলেন। যা যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে প্রমাণিত হয়, তাদের শাস্তিও দেন আদালত। খালেদা জিয়ার দাবির লিখিত প্রমাণ, জয়কে সপরিবারে হত্যার চুক্তির বিষয়ে তথ্য যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম ও আদালতের কাছে আছে। বাংলাদেশকে দেওয়া যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা বন্ধ করতে দেশটির প্রভাবশালীদেরকে চিঠি লেখেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
মত ও পথের অনুসন্ধানে জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যসহ প্রভাবশালী পশ্চিমা দেশগুলোতে এ দেশের রাজনৈতিক দলগুলো প্রায়ই লবিস্ট নিয়োগ করে। দেশগুলোতে লবিস্ট নিয়োগ করা বৈধ ও চর্চিত বিষয়। দলগুলো লবিস্ট নিয়োগ করলেও দেশের কোনো রাজনীতিবিদ ও সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিকে হত্যার জন্য প্রথম চুক্তিবদ্ধ হয় বিএনপি।
এ রকম চুক্তি আওয়ামী লীগ, বা দেশের অন্য কোনো দল কখনো করেনি। প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের শীর্ষ ব্যক্তিদেরকে ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা ও যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি পণ্যের অগ্রাধিকারমূলক বাজারসুবিধা (জিএসপি) বাতিলের আবেদন শুধু বিএনপিই লিখিতভাবে জানায়।
যুক্তরাষ্ট্রে লবিস্ট নিয়োগ নিয়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে কাদা ছোড়াছুড়ি চলছে। সংসদের ভেতরে ও বাইরে। একদলের নেতারা অন্যদলকে দায়ী করছেন বিদেশি লবিংয়ের বিষয়ে। সরকারের পক্ষে-বিপক্ষে যুক্তরাষ্ট্রে লবিস্ট ফার্ম নিয়োগের অভিযোগ তুলে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতাদের মধ্যে বাকযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে মির্জা ফখরুলের চারটি চিঠি প্রকাশ করেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী মন্ত্রী হাছান মাহমুদ।
জানা গেছে, ২০১৩ সালের ৩০ জানুয়ারি ‘ওয়াশিংটন টাইমস’ পত্রিকায় ‘দ্যা থ্যাক্্সলেস রোল ইন সেভিং ডেমোক্রেসি ইন বাংলাদেশ, করাপশন অ্যান্ড স্টেলিং থ্রেটেন আ ওয়ানস ভাইব্রেন্ট নেশন’ শিরোনামে একটি নিবন্ধ প্রকাশিত হয়। ওই নিবন্ধের নিচে লেখকের পরিচিত লেখা- ‘বেগম খালেদা জিয়া, সাবেক প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ ও বর্তমানে সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা।’ এতে শেখ হাসিনাসহ তাঁর সরকারের শীর্ষ ব্যক্তিত্বদের বিরুদ্ধে ভ্রমণ ও অন্যান্য নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিষয়ে পশ্চিমা শক্তিগুলোর কাছে আবেদন জানান খালেদা জিয়া।
নিবন্ধে জিএসপি সুবিধা বাতিলের দাবি জানান তিনি। ‘মার্ক পার্সি’ নামের যুক্তরাজ্যভিত্তিক এক এজেন্টের মাধ্যমে ওয়াশিংটন টাইমস নিবন্ধটি ছাপায়। যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ‘মার্ক পার্সি’র সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হন।
ওয়াশিংটন টাইমস পত্রিকায় প্রকাশিত নিবন্ধটি খালেদা জিয়ার—এটা নিশ্চিত হয়েই তা ছাপানো হয়েছে বলে মার্কিন দৈনিকটির নির্বাহী সম্পাদক ডেভিড এস জ্যাকসন। দেশের বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলগুলোকে তিনি এ তথ্য জানান।ঢাকার টিভি চ্যানেলগুলোর সঙ্গে স্কাইপে সরাসরি কথা বলেন সাংবাদিক ডেভিড এস জ্যাকসন।
আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিতে রিজভী দাবি করেন, বিএনপির উচ্চপর্যায় থেকে পাওয়া নির্দেশে এফবিআইয়ের একজন এজেন্টকে পাঁচ লাখ ডলার ঘুষের প্রতিশ্রুতি দিয়ে জয়ের বিরুদ্ধে এ ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছিলেন তিনি। থালের ও রিজভী উভয়েই স্বীকার করেন, ২০১১ সালের সেপ্টেম্বর থেকে শুরু করে ২০১২ সালের মার্চ মাসের মধ্যে জয়ের সম্পর্কে এফবিআইয়ের কাছে থাকা তথ্য পাচার করে দেওয়ার জন্য এফবিআইয়ের বিশেষ এজেন্ট রবার্ট লাস্টিকের সঙ্গে তাঁরা পাঁচ লাখ ডলারে চুক্তিবদ্ধ হন।
মার্কিন বিচার বিভাগ জানায়, এ চুক্তির আওতায় এফবিআইয়ের কাছে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমান ও ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর অর্থ পাচারের যেসব তথ্য রয়েছে, তা-ও সরিয়ে ফেলার প্রতিশ্রুতি দেন ওই এজেন্ট। ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নের লক্ষ্যে থালের ও লাস্টিকের মধ্যে বার্তা বিনিময়ও হয়।
এফবিআইয়ের বিশেষ এজেন্ট লাস্টিককে প্রাথমিকভাবে ৪০ হাজার ডলার ঘুষও দেন থালের ও রিজভী। পুরো কাজ শেষ হওয়া পর্যন্ত লাস্টিককে প্রতি মাসে আরও ৩০ হাজার ডলার করে মোট পাঁচ লাখ ডলার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। মামলার প্রধান আসামি এফবিআইয়ের বিশেষ এজেন্ট রবার্ট লাস্টিক।
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘বিদেশে বিএনপি শুধু মিলিয়ন ডলার খরচ করে লবিস্ট ফার্ম নিয়োগ করেই ক্ষান্ত হয়নি, তারা এফবিআইকে ভাড়া করে প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়কে কিডন্যাপ করার ষড়যন্ত্র করেছিল। প্রধানমন্ত্রীর ছেলে ও জাতির পিতার দৌহিত্র জয়কে ফিজিক্যালি হার্ম করার পরিকল্পনা প্রমাণিত হয় যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত বিএনপির নেতা রিজভী আহমেদ সিজারের বিরুদ্ধে।’
প্রায় তিন বছর আগে যুক্তরাষ্ট্রের দুই প্রভাবশালী কংগ্রেসম্যানকে লেখা এক চিঠিতে বাংলাদেশকে দেওয়া সহায়তা বন্ধের আহ্বান জানান মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ‘দেশে গণতন্ত্রের অবনতি ঘটেছে’, এমন অভিযোগ করা হয় ওই চিঠিতে। যুক্তরাষ্ট্রের দুজন সিনেটরকে ফখরুল আরেকটি চিঠি দেন ২০১৮ সালের ডিসেম্বরের অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচন নিয়ে তদন্ত করার আহ্বান জানিয়ে।
২০১৯ সালের ১৭ এপ্রিল সে সময়ের কংগ্রেসম্যান নিতা লোয়ি ও লিন্ডসে গ্রাহামকে তিনি চিঠি দেন। এতে তিনি বাংলাদেশকে দেওয়া বৈদেশিক সহায়তা পর্যালোচনার অনুরোধ করেন। অন্য দুটি চিঠি দেওয়া হয় যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী দুই রাজনীতিক মিট রমনি ও জেমন রিসককে। এতেও যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা ও বৈদেশিক সহায়তা পর্যালোচনার দাবি জানান তিনি।