বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে আগামী মার্চেই হতে যাচ্ছে পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ে রাজনৈতিক সংলাপ (পার্টনারশিপ ডায়ালগ)। সংলাপটি ঢাকায় অনুষ্ঠিত হবে। যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের আন্ডার সেক্রেটারি (রাজনৈতিক) ভিক্টোরিয়া নুল্যান্ড ওই সংলাপে অংশ নিতে মার্চের তৃতীয় সপ্তাহে ঢাকায় আসবেন। মার্চে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসও ঢাকায় পৌঁছাবেন বলে আশা করা হচ্ছে। সেই অর্থে পিটার হাসের প্রথম অ্যাসাইনমেন্টই হবে দুই পক্ষের জন্য মঙ্গলকর একটি রাজনৈতিক সংলাপের চেষ্টা করা।
বিশ্লেষকদের মতে, ওই আলাপে কোভিডসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে সহযোগিতা বৃদ্ধি এবং মার্কিন নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে দুই দেশের যে পার্থক্য, সেসব নিয়ে আলোচনার সুযোগ তৈরি হবে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশের পক্ষে সাতটি পার্টনারশিপ ডায়ালগে নেতৃত্বদানকারী সাবেক পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক বলেন, এটি দুই দেশের আনুষ্ঠানিক আলোচনার সর্বোচ্চ প্ল্যাটফর্ম। এখানে গুরুত্বপূর্ণ, বিতর্কিত, অবিতর্কিত—সব বিষয় নিয়েই খোলামেলা আলোচনা হয়।
২০১৯ সালের জুনে সর্বশেষ রাজনৈতিক সংলাপে নেতৃত্বদানকারী শহীদুল হক বলেন, এ ধরনের আলোচনায় দুই দেশের সম্পর্কোন্নয়নের পাশাপাশি নীতি প্রণয়ন করা হয়। একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন বিষয়ে উভয় দেশের অবস্থান পরিষ্কার করা হয়।
যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবির বলেন, কিছু সহযোগিতার বিষয় থাকবে। আবার কিছু বিষয়কে দুই পক্ষ জাতীয় স্বার্থ, সংস্কৃতি অথবা অন্য কারণে ভিন্নভাবে পর্যালোচনা করে। এ ধরনের সবকিছু নিয়ে পররাষ্ট্র সচিব আলোচনা করতে পারেন।
আসন্ন সংলাপে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি বাংলাদেশ কী চোখে দেখে সেটা সরাসরি বলার একটি সুযোগ তৈরি হবে বলেও মনে করেন সাবেক ওই রাষ্ট্রদূত।
আলোচনার বিষয়
সংলাপে কী নিয়ে আলোচনা হবে সেটি নির্ধারণে কাজ করছে উভয় দেশ। যেহেতু সংলাপটি বাংলাদেশে হবে, সে কারণে এজেন্ডা নির্ধারণ করবে ঢাকা। প্রথাগত বিষয়গুলোর পাশাপাশি গত তিন বছরে যে পরিবর্তন এসেছে সেগুলো নিয়েও আলোচনা হতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে।
গত তিন বছরে সবচেয়ে বড় পরিবর্তনের মধ্যে আছে—যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতায় ডেমোক্র্যাট সরকার, কোভিড মহামারি ও সর্বশেষ মার্কিন নিষেধাজ্ঞা।
২০১৯ সালের সংলাপের এজেন্ডায় ছিল নিরাপত্তা সহযোগিতা, ইন্দো-প্যাসিফিক, সুশাসন, রোহিঙ্গা সমস্যা এবং অর্থনৈতিক ও উন্নয়ন সহযোগিতা।
নিরাপত্তা সহযোগিতা
সন্ত্রাসবাদ দমন, সাইবার নিরাপত্তা ও নিরাপত্তা সহযোগিতাসহ বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে দুই পক্ষের আলোচনা প্রথম সংলাপ থেকেই ছিল। শেষ সংলাপে জেনারেল সিকিউরিটি অব মিলিটারি ইনফরমেশন এগ্রিমেন্ট (জিসমিয়া) সইয়ের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র আলোচনা অব্যাহত রাখার অনুরোধ করলে বাংলাদেশ রাজি হয়।
এ বিষয়ে একজন কূটনীতিক বলেন, অন্যান্য দেশের মতো যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গেও নিরাপত্তা সহযোগিতার বিষয়ে আলোচনা চলবে।
র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে আলোচনা হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, অবশ্যই সুযোগ আছে।
উল্লেখ্য, গত ছয় বছরে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশ প্রায় ৬৫০ কোটি (প্রায় সাড়ে ৭ কোটি ডলার) টাকার সামরিক অনুদান পেয়েছে। এরমধ্যে রয়েছে ফরেন মিলিটারি ফাইন্যান্সিং এবং আন্তর্জাতিক মিলিটারি শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ। ওই টাকার একটি বড় অংশ বঙ্গোপসাগরে মার্কিন যে উদ্যোগ রয়েছে সেটা শক্তিশালী করতেও বাংলাদেশকে দেওয়া হয়েছে।
ইন্দো-প্যাসিফিক
উভয় দেশের মধ্যে ইন্দো-প্যাসিফিক নিয়ে কয়েক বছর ধরে আলোচনা হচ্ছে। শেষ পার্টনারশিপ সংলাপে উন্মুক্ত, স্বাধীন, অন্তর্ভুক্তিমূলক, শান্তিপূর্ণ ও নিরাপদ ইন্দো-প্যাসিফিক ভিশন অর্জনে উভয় দেশ একসঙ্গে কাজ করতে একমত হয়েছিল।
এ বিষয়ে এক কর্মকর্তা বলেন, ইন্দো-প্যাসিফিক নিয়ে বাংলাদেশের কী অবস্থান, তা বিভিন্ন দেশ জানতে চায়। এমনকি গত বছর প্রধানমন্ত্রীর ফ্রান্স সফরের সময়ও যৌথ বিবৃতিতে এর উল্লেখ ছিল।
এ নিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান নিয়ে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংস্থার মধ্যে আলোচনা হচ্ছে বলেও তিনি জানান।
সুশাসন
বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম, ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন, শ্রম নীতিমালার বাস্তবায়ন, সংখ্যালঘুদের ওপর হামলাসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হতে পারে আসন্ন সংলাপে।
এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আরেকজন কর্মকর্তা বলেন, গত সংলাপে ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনের কয়েকটি ধারা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। আমরা এ বিষয়ে একাধিকবার যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য দেশের সঙ্গে আলোচনা করেছি এবং বাংলাদেশের অবস্থান ব্যাখ্যা করেছি।