একে-৪৭ দিয়ে নির্যাতন : ইতালিতে দুই বাংলাদেশির ২০ বছর কারাদণ্ড

প্রবাস ডেস্ক

ইতালির সিসিলি দ্বীপে দুই বাংলাদেশিকে ২০ বছর করে কারাদণ্ড দিয়েছেন সেখানকার একটি আদালত। ভূমধ্যসাগরীয় দেশ লিবিয়ার একটি ক্যাম্পে অভিবাসীদের আটক ও নির্যাতনের অভিযোগে তাদের কারাদণ্ড দেওয়া হয় বলে জানা গেছে। ওই দুই বাংলাদেশি লিবিয়ার জুয়ারায় একটি বন্দিশিবিরের রক্ষী ছিলেন এবং বন্দিদের ওপর নির্যাতন চালান। পরবর্তী সময়ে ওই বন্দিশিবিরের বাসিন্দাদের মতো তাঁরাও অবৈধভাবে সাগর পাড়ি দিয়ে ইতালিতে পৌঁছান।

বন্দিশিবির থেকে ইতালির ল্যাম্পেডুসায় পৌঁছা চার বাংলাদেশি সেখানে ওই দুই সাবেক রক্ষীকে চিহ্নিত করেন এবং লিবিয়ায় তাঁদের ওপর নির্যাতন চালানো ও মুক্তিপণ আদায়ের অভিযোগ আনেন।

অভিযোগ আমলে নিয়ে ইতালি কর্তৃপক্ষ ওই দুজনকে গ্রেপ্তার ও বিচার করে। তাঁদের ২০ বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে, যা পালেরমো আদালতের সর্বোচ্চ সাজা।

সিসিলির পালেরমো শহরের আইনজীবী গেরি ফেররা জানান, আসামি সোহেল ও হারুনের বিরুদ্ধে কয়েকজন ভুক্তভোগী তাদের মাসের পর মাস ধরে আটকে রেখে মারধর করার অভিযোগ আনেন।

ইতালির সংবাদমাধ্যম ইতালপ্রেসের বরাত দিয়ে ইনফোমাইগ্রেন্টস জানায়, গত সপ্তাহে পালেরমো আদালতে ওই বিচার হয়েছে। দণ্ডিত দুই বাংলাদেশির একজন সোহেল (৩৭), অপরজন মো. হারুন (৩৩)।

ইতালপ্রেস গত বৃহস্পতিবার এক প্রতিবেদনে জানায়, পালেরমোর আদালতে ওই দুই বাংলাদেশির বিরুদ্ধে অবৈধ অভিবাসন, মানবপাচার ও অপহরণে সহায়তার অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। লিবিয়ার কুখ্যাত জুয়ারা বন্দিশিবিরে তাঁরা রক্ষী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। লিবিয়ার অন্য বন্দিশিবিরগুলোর মতো জুয়ারাতেও বন্দিদের নির্যাতন, ধর্ষণ ও দুর্ব্যবহারের শিকার হতে হতো।

বন্দিশিবিরের ওই দুই রক্ষীও বাংলাদেশ থেকে লিবিয়া হয়ে ইতালি পৌঁছান। লিবিয়ায় তাঁদের নির্যাতনের শিকার চার বাংলাদেশি ২০২০ সালের ২৮ মে ল্যাম্পেডুয়ায় অবতরণের পর ইতালি কর্তৃপক্ষকে জানান, তাঁদের ওপর চালানো দুই বাংলাদেশিও ইতালিতে অবস্থান করছেন।

অভিযোগ আমলে নিয়ে ইতালি কর্তৃপক্ষ তদন্ত শুরু করে। ফেসবুক প্রফাইল ধরে তাঁদের অনুসরণের মাধ্যমে তাঁরা ইতালির অ্যাগ্রিজেন্তোতে অবস্থান করছেন বলে নিশ্চিত তথ্য পাওয়া যায়। এরপর ২০২০ সালের ৬ জুলাই তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়।

ইতালিপ্রেস জানায়, ওই দুই বাংলাদেশিকে দেখেই চিনতে পারেন নির্যাতনের শিকার চার বাংলাদেশি। একটি ভিডিওতে দুই বাংলাদেশি রক্ষী বন্দিদের হুমকি দিচ্ছিলেন। বাংলাদেশে ধারণ করা আরেকটি ভিডিওতে দেখা যায়, বন্দিদের পরিবারগুলো বাংলাদেশে রক্ষীদের একজনের স্ত্রীকে মুক্তিপণের টাকা দিচ্ছেন।

ছবিতে দেখা গেছে, লিবিয়ায় দুই বাংলাদেশি রক্ষীর হাতে একে-৪৭ রাইফেল। এই অস্ত্র দিয়েই তাঁরা বন্দিদের নির্যাতন করেন। বিচারকের অনুরোধে ফরেনসিক পরীক্ষকরা বাদীদের দেওয়া প্রমাণ যোগ করেছেন। নির্যাতনের কারণে তাঁদের শরীরে সৃষ্ট ক্ষতগুলোও সাক্ষ্য হিসেবে আমলে নেওয়া হয়েছে।

২০১১ সালে লিবিয়ায় মুয়াম্মার গাদ্দাফির শাসনের অবসান ঘটলে দেশটিতে গৃহযুদ্ধ ও অস্থিরতা শুরু হয়। এই সুযোগে আফ্রিকা থেকে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইতালি যাওয়ার পথ হয়ে ওঠে লিবিয়া। আন্তর্দেশীয় চক্র বাংলাদেশ থেকে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক তরুণকে ইউরোপে উন্নত জীবনের প্রলোভন দেখিয়ে প্রথমে লিবিয়ায় নিয়ে গেছে। তাঁদের অনেকের মৃত্যু হয়েছে লিবিয়ার বন্দিশিবিরে এবং অবৈধভাবে ইউরোপে যাওয়ার সময় ভূমধ্যসাগরে।

বন্দি নির্যাতন ও অবৈধ অভিবাসনে সহায়তার অভিযোগে দুই বাংলাদেশির ইতালিতে কারাদণ্ডের সময় সাত বাংলাদেশির মরদেহ দেশে ফেরত পাঠানোর অপেক্ষায় আছে। লিবিয়া থেকে অবৈধভাবে ইতালি যাওয়ার সময় গত ২৫ জানুয়ারি ভূমধ্যসাগরে প্রচণ্ড ঠাণ্ডায় জমে ওই সাত বাংলাদেশি অভিবাসনপ্রত্যাশীর মৃত্যু হয়।

শেয়ার করুন